সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে দেশে অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন সচরাচর না
চিকিৎসা সরঞ্জাম ও প্রশিক্ষকপ্রাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট কম, ফাইল ছবি
বোনম্যারো বা অস্থিমজ্জা শরীরে একটি বিশেষ স্পঞ্জের মতো ফ্যাটি টিস্যু, যেখানে রক্তের স্টেম সেল থাকে। এই স্টেম সেলগুলো কিছু বড় হাড়ের মধ্যে থাকে এবং নিজেদের শ্বেত, লোহিত রক্ত কনিকা এবং প্লেটলেটে পরিবর্তিত করে। বোনম্যারো, মানব শরীরের রক্ত কনিকা তৈরিতে গুরুত্বপূরণ ভূমিকা পালন করে।
থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার ও জিনগত রোগসহ বেশ কিছু জটিল ও দূরারোগ্য ব্যাধির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অস্থিমজ্জা। এর প্রভাবে সঠিকভাবে এটি কাজ করে না। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাস্থ্যকর রক্ত কনিকা প্রস্তুত করতেও পারে না। তখন রোগীকে সুস্থ করে তুলতে অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করতে হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া, ব্লাড ক্যান্সার ও জিনগত রোগে আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই পরিপূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।
এতদিন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই রোগের চিকিৎসাটা দুরূহ হওয়ায় ভুক্তভোগীরা বাধ্য হয়ে ভারত, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে যেতে বাধ্য হতেন। কিন্তু সেখানে চিকিৎসা ব্যয়ও প্রচুর।
আশার কথা হলো, এখন বাংলাদেশেই সম্ভব অস্থিমজ্জার প্রতিস্থাপন। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের ওপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। তারা সঠিক চিকিৎসার নিশ্চয়তাও দিয়েছেন।
রক্তরোগ ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ ডা. দিলশাদ জাহান ডক্টর টিভিকে জানান, ‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন করা হয় সাধারণ হেমাটোলজিক্যাল ব্লাড ক্যান্সার জাতীয় রোগের ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বেশি হয়। আর এর বাইরে থ্যালাসেমিয়া রোগ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে কিছু ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়।’
রোগভেদে সর্বনিস্ন ৫ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকার মধ্যে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বা অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন সম্ভব। যা বিদেশে চিকিৎসা ব্যয়ের চেয়ে কয়েকগুন কম।
ডা. দিলশাদ জাহান বলেন, ‘আমাদের দেশে অটোলকাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। আর যদি এলোজেনিক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করি তাহলে কমপক্ষে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে।’
দেশে মাত্র ৫টি হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট হয়। যার মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), সিএমএইচ এবং বেসরকারি এভারকেয়ার হাসপাতাল ও আজগর আলী হাসপাতাল।
সরকারি হাসপাতালের ক্ষেত্রে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টে খরচ কিছুটা কম। তবে সেটাও ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা। আর বেসরকারি হাসপাতালে কমপক্ষে ১২-১৫ লাখ টাকা লাগবে।
এ বিষয়ে ডা. দিলশাদ জাহান বলেন,, ‘বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের ওষুধের দাম অনেক বেশি। বেশিরভাগ মেডিসিন দেশের বাইরে থেকে আনতে হয়। এটাই মূলত চিকিৎসা ব্যয় বাড়ার মূল কারণ। ’
‘এতো ব্যয় মেটানো বিত্তশালীদের জন্য সম্ভব হলেও চিকিৎসা সেবার বাইরে থাকছেন বেশিরভাগ রোগী। তাই সরকার যদি এক্ষেত্রে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেয়, তবে অনেক রোগী ফিরে পাবেন স্বাভাবিক জীবন।’
বাংলাদেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট সচরাচর না হবার কারণ সম্পর্কে এই রক্তরোগ ও বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘আমাদের দেশে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লাট করতে পারেন এমন চিকিৎসক সংখ্যা হাতেগোনা। আর যারা করেন তাদের মধ্যে বিশেষজ্ঞ খুবই কম। এছাড়া, বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টের জন্য যেসব চিকিৎসা সরঞ্জাম দরকার তার সংখ্যাও কম। এসব কারণে রোগীরা বিদেশে যেতে বাধ্য হন। ‘
‘এক্ষেত্রে সরকারই এগিয়ে আসতে পারে। সরকারের উদ্যোগে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিষয়ক সব উপকরণ আনাসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরিতে যথাযথ আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। তাহলেই যেসব হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ আছে তা শক্তিশালী হবে। আর সেখানে নিয়মিত কম খরচে চিকিৎসা নিতে পারবেন রোগীরা। '