স্বাস্থ্য বীমার বাইরে দেশের ৯৯ ভাগ পোশাক শ্রমিক

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-06-23 18:50:16
স্বাস্থ্য বীমার বাইরে দেশের ৯৯ ভাগ পোশাক শ্রমিক

ক্রেতাদের চাপে কিছু কারখানায় চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকলেও, অধিকাংশ মালিকই এ নিয়ে উদাসীন।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা বরাবরই অবহেলিত। ক্রেতাদের চাপে কিছু কারখানায় চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা থাকলেও, অধিকাংশ মালিকই এ নিয়ে উদাসীন। বিশেষ করে দেশের প্রায় ৯৯ ভাগ পোশাক কারখানাতেই নেই স্বাস্থ্য বীমা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) নিবন্ধিত কারখানার সংখ্যা প্রায় সাড়ে চার হাজার। আর পোশাক শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪২ লাখ কর্মী।

পারিবারিকভাবে অসচ্ছল হওয়ায় স্বাস্থ্যের দিকটি বরাবরই অবহেলিত গ্রাম থেকে উঠে আসা এসব পোশাক শ্রমিকের। কাজ করে তারা যে পারিশ্রমিক পান, তা দিয়ে কোনোমতে চলে সংসার। তাই তাদের কেউ অসুস্থ হলে অর্থের কারণে নিতে পারেন না সঠিক চিকিৎসা।

এর বাইরে অসুস্থতাজনিত কারণে একজন পোশাক শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে মাসে গড়ে ৪ দিন অনুপস্থিত থাকায় হারাতে হয় বেতন। এতে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন পোশাক খাতে কাজ করা নারীরা।

গবেষণা বলছে, দেশের ৯৯ ভাগ পোশাক কারখানা স্বাস্থ্য বীমার বাইরে। বছরে শতকরা ৪৩ ভাগ পোশাক শ্রমিক নানা রোগে আক্রান্ত হলেও, টাকার অভাবে তাদের ৪০ ভাগ সময়মতো চিকিৎসা নিতে পারেন না।

গবেষণায় অংশ নেওয়া এই ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ ডক্টর টিভিকে বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের প্রধান সম্ভাবনাময় এক খাত। একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪২ লাখ মানুষের, বিশেষত নারীদের কর্মসংস্থানের বিশাল এক বাজার।

তিনি বলেন, শতকরা ৪০ ভাগ শ্রমিক স্বাস্থ্যসেবার উচ্চমূল্যের জন্য যথাযথ সময়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করতে পারেন না। তৈরি পোশাক শ্রমিকদের যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সংস্থা এবং এনজিও দীর্ঘদিন ধরে ‘তৈরি পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা’ নামক পাইলট প্রোগ্রাম পরিচালনা করে আসছে। যেগুলোর অধিকাংশের সময়সীমা প্রায় শেষের দিকে।

এই গবেষক বলেন, পোশাক শ্রমিকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার লক্ষ্যে বড় পরিসরে তাদের জন্য স্বাস্থ্য বীমা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে এসএনভি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের একটি দল গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।

একাধিক কারণে পোশাক শ্রমিকরা সরকারি হাসপাতালে স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হন। তাদের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের মূল উৎস এলাকার ওষুধের দোকান।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবনে পরবর্তীতে তাদের স্বাস্থ্যগত নানা ঝুঁকি বাড়ে বলে জানান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ও ইউনিট প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল ইসলাম চৌধুরী।

ডক্টর টিভিকে তিনি বলেন, চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিকভাবে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন না করলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি হতে পারে। ফার্মেসি থেকে ব্যথানাশক ওষুধ সেবনের ফলে কিডনি নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।

অধ্যাপক ফয়জুল চৌধুরী বলেন, আমাদের দেশে পোশাক শ্রমিকরা ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন না। কারণ, সরকারি হাসপাতালগুলোতে যে সময় আউটডোর সেবা দেওয়া হয়, তখন তারা কাজে থাকেন।


আরও দেখুন: