দেশেই রয়েছে ব্লাড ক্যানসারের উন্নত চিকিৎসা
দেশে ব্লাড ক্যানসার চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে ব্যয় কমানা ও সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
যে বয়সে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে মেতে থাকার কথা, সে বয়সেই ব্লাড ক্যানসার বাসা বেঁধেছে মারিয়ার দেহে। সেবা পেতে স্বজনরা তাকে নিয়ে দিন রাত ছুটছেন এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে। পাঁচ বছর ধরে মারিয়ার চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রায় নিঃস্ব তার পরিবার।
অবশেষে এক চিকিৎসকের মানবিক আহ্বানে মেয়েটির চিকিৎসায় এগিয়ে এসেছে রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতাল। এতে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার স্বপ্ন দেখছে স্কুলছাত্রী মারিয়া।
ডক্টর টিভিকে মারিয়া বলেন, ২০১৭ সালে তার ব্লাড ক্যানসার শনাক্ত হয়। চিকিৎসার এক পর্যায়ে ব্যয় মেটাতে পুরোপুরি নিঃস্ব হয়ে যায়। এরপর চিকিৎসার জন্য শরণাপন্ন হন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খানের।
মারিয়া বলেন, ‘ডা. মহিউদ্দিন খানের অধীনে চিকিৎসা চলা অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আমার চিকিৎসার জন্য একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। এরপর রাজধানীর গ্রীন লাইফ হাসপাতাল আমার কেবিন ভাড়া মওকুফ করে দেন।’
দেশে ক্রমাগতই ব্লাড ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সঠিক কোনো পরিসংখ্যান না থাকলেও ধারণা করা হচ্ছে, দেশে মোট ক্যানসার রোগীর ১১ ভাগ ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত। চিকিৎসকরা বলছেন, ব্লাড ক্যানসারে শুধু চিকিৎসা ব্যয় ১০ লাখেরও বেশি।
অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়।’
তিনি বলেন, ‘একটা অটোলকাস বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। আর রোগটির আধুনিক চিকিৎসা এলোজেনিক বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট করতে ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা প্রয়োজন হয়। এটা পার্শ্ববর্তী দেশের চেয়ে কম। তবে নানা রকম দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশে চলে যায় এসব রোগীরা।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে এতো পরিমাণ ব্যয় মেটাতে না পেরে অধিকাংশ রোগীরাই চিকিৎসা বঞ্ছিত হচ্ছেন। ফলে অনেকে চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছেন।
দেশে ব্লাড ক্যান্সারের উন্নত চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও, ব্যয় মেটাতে সক্ষম ব্যক্তিদের সিংহভাগই বিদেশমুখী। তাই রোগীদের সেবা নিশ্চিত করতে সরকারি ভর্তুকিসহ সেবামূল্য নির্ধারণ করা জরুরি।
অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন আহমেদ খান বলেন, ‘সরকার ওষুধের ওপর কর কমাতে পারে। পাশাপাশি জীবন বিমা চালু করলে মানুষ চিকিৎসা সেবাগুলো পেতে পারে।’
দেশে ব্লাড ক্যানসার চিকিৎসার ব্যাপক প্রসার ঘটাতে ব্যয় কমানা ও সরকারি হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন। পাশাপাশি দক্ষ চিকিৎসক তৈরি করে রোগীদের সেবার আওতার আনার তাগিদ বিশেষজ্ঞদের।
অধ্যাপক ডা. মহিউদ্দিন বলেন, এখানে বেড, চিকিৎসক এবং চিকিৎসার সুবিধাগুলো সীমিত। আবার সরকারিভাবেও এই বিশাল সংখ্যাক রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়। তাহলে বিকল্প পথ হিসেবে আমাদের বেসরকারি যে হাসপাতাল তৈরি হচ্ছে, সেখানে কম খরচে এ চিকিৎসা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।