কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় নারী চিকিৎসকরা

ফখরুল ইসলাম
2021-06-13 04:41:31
কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় নারী চিকিৎসকরা

উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র

ভালো নেই নারী চিকিৎসকরা। কর্মক্ষেত্রে নেই নিরাপত্তা। সম্মান তো দূরে থাক মারধরের শিকার হতে হয় তাদের। নেই ভালো আবাসন ব্যবস্থা। নেই যাতায়াতের কোন ভালো ব্যবস্থা। সমাজের প্রথম শ্রেনির নাগরিক হয়েও কর্মক্ষেত্রে ভয়ে ভয়ে দিন কাটে তাদের।

লকডাউনের সময় বিনা কারণে নারী চিকিৎসক ডা. সাঈদা শওকত জেনি-কে লাঞ্ছিত করার ঘটনা থেকেই সহজে অনুমান করা যায় নারী চিকিৎসকের নিরাপত্তা কতটুকু। 

২০১৬ সালের ১১ জানুয়ারি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর স্বজনদের হাতে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন দুই নারী শিক্ষানবিশ চিকিৎসকসহ তিনজন। বিকেল চারটার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের ধুলদী এলাকায় একটি মাইক্রোবাস দুর্ঘটনায় পড়লে ওই মাইক্রোবাসের চারজন আহত হন। আহতদের চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। আহতদের পুরুষ সার্জারি বিভাগে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আহত একজনের মৃত্যু হলে তার স্বজনরা ওই ওয়ার্ডে কর্তব্যরত শিক্ষানবিশ নারী চিকিৎসক সানজিদা ও রুবাইয়া এবং শিক্ষানবিশ চিকিৎসক আবুল হাসনাত ও এক সেবিকাকে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বেধড়ক মারধর করে।

নারী চিকিৎসকদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে বহুবার। বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজে ২০১৭ সালে যা নিয়ে অনেক লংকা কান্ড হয়েছে।

২০১৪ সালে বারডেমে এক রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় মাসুদ নামে এক পুলিশ কর্মকর্তা ও সাবেক এক মন্ত্রীর এপিএস বাবু ডা. শামীমা, ডা. আনোয়ার, ডা. কল্যাণসহ কয়েকজনকে ব্যাপক মারধর করে। ডা. শামীমা নিজেকে রক্ষা করতে বাথরুমে সিটকিনি লাগিয়ে দেন। দরজা ভেংগে তাকে বের করে এনে মারধর করা হয়। মারধরকারীরা আবার ফেসবুকে সে ঘটনা বেশ গর্বের সাথে প্রচার করে।

ওপরের ঘটনাগুলো হাজার হাজার ঘটনার কয়েকটি মাত্র। প্রতিনিয়ত মারধরের শিকার হতে হচ্ছে চিকিৎসকদের। প্রতিবছর এমন কতটা ঘটনা ঘটছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই। শুধু প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নয় খোদ ঢাকা শহরেই ঘটছে নারী চিকিৎসক নির্যাতনের অহরহ ঘটনা। প্রান্তিকে এ অবস্থা আরোও ভয়াবহ।

প্রান্তিক জনোগোষ্ঠীর মাঝে সরাসরি স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে আসছে দেশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো। তবে এসব সেবা কেন্দ্রে নেই পর্যাপ্ত নারী চিকিৎসক। আবার যেসব কেন্দ্রে নারী চিকিৎসক রয়েছেন, তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তাসহ নানা সুযোগ-সুবিধার অভাব রয়েছে। বিশেষ করে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রায়ই নারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্তা করে থাকে।

দিনাজপুরের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুজন নারী চিকিৎসকের জায়গায় রয়েছেন একজন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিনাজপুরের একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক নারী মেডিকেল অফিসার ডক্টর টিভিকে বলেন, অনেক সময় এ রকম হয় একজন গুরুতর রোগীকে দেখছি কিন্তু স্থানীয় লোকজন এসে তাদের স্বজনকে দেখার জন্য চাপ দেন। প্রায় সময় এ ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় আমাদের।

তিনি বলেন, বাসায় গিয়ে রোগী দেখার নিয়ম না থাকলেও অনেক স্বজন চাপ দেন। স্থানীয় প্রভাবশালীরা এমন কাণ্ড বেশি করেন। এ সময় নিজেকে খুবই নিরাপত্তাহী মনে হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী মেডিকেল অফিসার ডক্টর টিভিকে বলেন, আমাদের ডক্টর হিসেবে অনেক সময় উত্ত্যক্তের শিকার হতে হয়। যেমন দেখা যায় অনেক রোগীরা আসেন এবং তাদের স্বজনরা এসে আবদার তাদের রোগীকেই আগে দেখতে হবে। অথচ এসময় অন্য আরও গুরুতর রোগী থাকেন আমাদের হাতে। কিন্তু দেখা যায় আমি আগের রোগীকে অগ্রাধিকার দিলে পরের রোগীর স্বজনদের হাতে নানাভাবে হেন্তার শিকার হতে হয়।

তিনি বলেন, নারী হিসেবে কখনো আমি উত্ত্যক্তের শিকার হইিন। তবে ডাক্তার হিসেবে অনেক সময় আক্রোশের মুখে পড়তে হয়েছে।

নারী চিকিৎসকদের লাঞ্ছনার অন্যতম কারণ বিচারহীনতা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে পারলে এমন ঘটনা রোধ করা সম্ভব।


আরও দেখুন: