বাংলাদেশের কত টিকা প্রয়োজন, এর সংস্থান কীভাবে সম্ভব?

অনলাইন ডেস্ক
2021-06-11 09:53:44
বাংলাদেশের কত টিকা প্রয়োজন, এর সংস্থান কীভাবে সম্ভব?

সেরাম বাংলাদেশক টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দিলে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় টিকাদান কর্মসূচি। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়।

করোনা মহামারী ঠেকাতে হার্ড ইমিউনিটির বিকল্প দেখছেন না বিশেষজ্ঞরা। আর এ জন্য প্রয়োজন ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসা। তবে কয়েকটি কারণে টিকা সংগ্রহে জটিলতার মধ্যে পড়েছে বাংলাদেশ।

ভ্যাকসিন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক উপদেষ্টা ড. মুজাহেরুল হক বিবিসিকে বলেন, টিকা জোগাড় করাই এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি ধরে নেই যে ৭০ শতাংশ লোককে আমরা টিকা দেব, তাহলে এখন বাংলাদেশকে এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ২৫ কোটি ডোজ টিকা জোগাড় করতে হবে।’

ড. মুজাহেরুল বলেন, ‘২৫ কোটি ডোজ টিকা পাওয়া সহজ কথা নয়। আবার যদি বুস্টার ডোজ লাগে তাহলে আরও সাড়ে ১২ কোটি ডোজ লাগবে। তার মানে আমাদের ৪০ কোটি ডোজ টিকার একটা মজুদ রাখতে হবে বা সম্ভাবনা রাখতে হবে। এইটা তখনই সম্ভব যখন আমরা নিজে টিকা তৈরি করতে পারবো।’

অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার করোনাভাইরাসের টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি চালু করা হয়। সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে তিন কোটি ডোজ টিকা আনার বিষয়ে চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী ছয় মাসে এসব টিকা আসার কথা ছিল।

কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে দুই চালানে মোট ৭০ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ। এর বাইরে ভারত সরকারের উপহার হিসেবে পাওয়া যায় ৩৩ লাখ ডোজ টিকা।

গত মার্চে টিকা রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকার। এতে সেরাম বাংলাদেশক টিকা সরবরাহ বন্ধ করে দিলে কার্যত বন্ধ হয়ে যায় টিকাদান কর্মসূচি। প্রায় ১৫ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়।

ভারত থেকে টিকা আসা বন্ধ হওয়ার পরই যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও রাশিয়ার কাছে টিকা পেতে বাংলাদেশের তৎপরতা দৃশ্যমান হয়।

চীন থেকে একদফা পাঁচ লাখ ডোজ টিকা উপহার হিসেবে পেয়েছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় দফায় উপহারের ছয় লাখের মতো টিকা আসছে ১৩ জুন।

তবে চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে প্রথমে দেড় কোটি ডোজ টিকা কেনার সিদ্ধান্ত হয়। দামও নির্ধারিত হয় দুই পক্ষের মধ্যে। কিন্তু গোপনীয়তার শর্তযুক্ত ওই টিকার দাম প্রকাশ করার পর সেটি নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা।

জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করেন, টিকা কর্মসূচি পরিচালনায় বাংলাদেশের বেশ সুনাম রয়েছে। করোনাভাইরাসের টিকা কার্যক্রমের একটা ভালো সূচনা হলেও সেটি ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে একটিমাত্র টিকার ওপর নির্ভরশীলতার কারণে।

একাধিক দেশ থেকে টিকা সংগ্রহ এবং উৎপাদন শুরু করাটাই এখন জরুরি বলে মত বিশেষজ্ঞদের।

ড. মুজাহেরুল হক বলেন, ‘ভারতের মতো বৃহত্তম দেশ টিকা নিজে উৎপাদন করে আবার অন্য দেশের টিকাও তারা উৎপাদন করছে। পাকিস্তানও তাই করছে। সুতরাং বাংলাদেশেরও উচিৎ হবে বেশ কয়েকটা সোর্স থেকে টিকা আমদানি করা।’

তিনি বলেন, ‘পাশাপাশি টেকনোলজি ট্রান্সফারের মাধ্যমে কোনো টিকা আমাদের দেশে তৈরি করা যায় কিনা, সে সম্ভাবনা দেখে তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার চিন্তা করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।’


আরও দেখুন: