প্লাস্টিকের পাত্রে দীর্ঘদিন পানি পানে ক্যানসারের ঝুঁকি
প্লাস্টিকের পাত্রে দীর্ঘদিন পানি পানে ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা
দেশে প্রাত্যহিক কাজে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। এমনকি আজকাল কর্মক্ষেত্রে প্লাস্টিকের বোতল ছাড়া পানি পানের কথা ভাবাই যায় না। তবে একই বোতলে দীর্ঘদিন পানি পানে ক্যানসারের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
ব্যবহার সহজলভ্য ও সস্তা হওয়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে প্লাস্টিক ও পলিথিনের ব্যবহার। পানির বোতল, চায়ের কাপ, গামলা, বালতিসহ গৃহস্থালির সব কিছুতেই ব্যবহার হচ্ছে প্লাস্টিক। আর পন্য বহনে ব্যবহার হচ্ছে পলিথিনের।
দেশে পরিবেশদূষণের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে পলিথিন অন্যতম। পলিথিনের ব্যবহার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া যায় এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) পরিসংখ্যানে।
সংস্থাটি বলছে, ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত গত এক বছরে শুধু ঢাকায় ব্যবহৃত পলিথিন ব্যাগ থেকে উৎপাদিত মোট বর্জ্য প্রায় ৫ হাজার ৯৯৬ টন। আর সারা দেশে এটি প্রায় ৭৮ হাজার ৪৩৩ টন।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের এমন ব্যবহারকে স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করছেন বিশেষজ্ঞরা। এর রাশ টেনে ধরা না গেলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের পরিবেশ ও স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন তারা।
এমনই বাস্তবতায় আজ ৫ জুন পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সচেতনতা প্রচারের জন্য এটিকে জাতিসংঘের পতাকা দিবসও বলা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের খণ্ডকালীন অধ্যাপক ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর ডক্টর টিভিকে বলেন, পলিথিনে যে উপাদান দিয়ে তৈরি হয় তা পরিবেশের জন্য একবারেই উপযোগী নয়।
তিনি বলেন, পলিথিন থেকে নির্গত হয় বিষফেনোল নামক বিষ যা খাদ্যদ্রব্যের সঙ্গে মিশে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ফলে ক্যানসারসহ বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে।
এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ বলেন, অনেকে গরম চা নেওয়ার সময় প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার করে থাকেন। এটিও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, যারা প্লাস্টিকের বোতলে দীর্ঘদিন গরম কিংবা ঠান্ডা পানি পানে অভ্যস্থ, তাদের ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্লাস্টিক ও পলিথিনের স্বাস্থ্যগত ক্ষতি ছাড়াও দূষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দিচ্ছে। সাধারণত প্লাস্টিক ও পলিথিন অপচনশীল হওয়ায় এগুলো ব্যবহার করে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর সেগুলো চলে যায় ড্রেনে। ড্রেন থেকে খাল-বিল, সেখান থেকে নদী-নালা, সমুদ্রে চলে যায়। ফলে সমুদ্রের অনেক মাছ সেসব প্লাস্টিক দ্রব্য খায়। সামুদ্রিক এসব মাছ খেলে মানুষের ক্যানসার হওয়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবৈধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের ক্ষতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় অবিলম্বে ইতিবাচক উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম-সচিব কেয়া খান বলেন, পলিব্যাগ নিষেধাজ্ঞায় উপজেলা এবং বিশেষত সমস্ত সিটি করপোরেশন অঞ্চলে নিষিদ্ধকরণ আইন কার্যকর করলে এটির ব্যবহার রোধ করা সম্ভব।
সাবেক সচিব ও এসডোর চেয়ারপারসন সৈয়দ মারঘুব মোর্শেদ বলেন, এই ক্ষতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় পলিব্যাগের সকল অবৈধ উৎপাদন ও বিপণন বন্ধে সরকারকে অবিলম্বে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আরও দেখুন:
- বিশ্ব-পরিবেশ-দিবস
- প্লাস্টিকের-পাত্রে-দীর্ঘদিন-পানি-পানে-ক্যানসারের-ঝুঁকি
- স্বাস্থ্যঝুঁকি
- প্লাস্টিক-ও-পলিথিনের-ব্যবহার
- পানির-বোতল
- এনভায়রনমেন্ট-অ্যান্ড-সোশ্যাল-ডেভেলপমেন্ট-অর্গানাইজেশন-(এসডো)
- ঢাকা-বিশ্ববিদ্যালয়ের-স্বাস্থ্য-অর্থনীতি-ইনস্টিটিউট
- জনস্বাস্থ্য-বি