স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রস্তাব

আশরাফুল ইসলাম
2021-06-03 10:26:30
স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাজেট প্রস্তাব

বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোয় এবং কর রেয়াত দেয়ায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির দাম কমে যাবে।

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারীর বাস্তবতায় স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় সংসদে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত এই ব্যয় চলতি অর্থবছরের (২০২০-২১) সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১২ শতাংশ বেশি। আর মূল বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ বেশি।

প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানোয় এবং কর রেয়াত দেয়ায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির দাম কমে যাবে।

আগামী অর্থবছরে চলতি অর্থবছরের চেয়ে বরাদ্দ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ ছিল ২৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা।

প্রাণঘাতী করোনা মোকাবিলায় আগামী অর্থবছরের বাজেটেও ১০ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। পাশাপাশি চিকিৎসা খাতের অন্যান্য সংকট মোকাবিলায় প্রস্তাবিত বাজেটে চলতি অর্থবছরের তুলনায় বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে ১১ শতাংশ।

চিকিৎসা নিতে বিদেশমুখিতা কমাতে দেশে সরকারি হাসপাতাল অত্যাধুনিক করে নতুন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগসহ টিকা কেনার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে আগামী বাজেটে।

মহামারীর বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অর্থনীতির ক্ষত সারানোর পাশাপাশি মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষার চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে নতুন অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বিদায়ী অর্থবছরে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া মূল বাজেটের আকার ছিল ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বিগত বাজেটে কোভিড-১৯ মোকাবেলায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের আওতায় বিশেষ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আমরা বিপুল বরাদ্দ রেখেছিলাম। এছাড়া কোনো জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দ রেখেছিলাম।

তিনি বলেন, প্রথম প্রাদুর্ভাবের পর বছর ঘুরে এলেও বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রকোপ এখনো বিদ্যমান রয়েছে। কাজেই আমি বিগত বাজেটের ন্যায় এবারও অঙ্গীকার করছি- এ মহামারি মোকাবিলায় যা করণীয় তার সবকিছুই সরকার করে যাবো। সে কারণে আগামী অর্থবছরেও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় জরুরি চাহিদা মেটানোর জন্য পুনরায় ১০ হাজার কোটি টাকার থোক বরাদ্দের প্রস্তাব করছি।

এদিকে করোনাভাইরাস মহামারীকালে গতবারের মতো এবারও স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা গবেষণা খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

‘সমন্বিত স্বাস্থ্য-বিজ্ঞান গবেষণা ও উন্নয়ন তহবিল’ থেকে করোনাভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়াসহ বিভিন্ন ভাইরাসের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবা ও চিকিৎসা শিক্ষার বিষয়ে গবেষণার সুযোগ থাকবে।

চলতি বাজেটেও এই খাতে সমপরিমাণ টাকা বরাদ্দ ছিল। স্বাস্থ্যের অন্যান্য বরাদ্দ ব্যয় করতে না পারার মতো এই বরাদ্দের টাকাও ব্যয় হয়নি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে গতবছর করোনাভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর স্বাস্থ্য খাতের দুর্বল দিকগুলো সামনে আসে। অবকাঠামোসহ অন্যান্য দুর্বলতার মধ্যে গবেষণায় দিকটি নিয়ে অনেক কথা হয়। সার্বিক জনস্বাস্থ্য পরিস্থিতির উন্নয়নে গবেষণায় ব্যয়ও খুবই কম। চলতি অর্থবছরও ১০০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যের গবেষণার বরাদ্দ ছিল মাত্র পাঁচ কোটি টাকা।

এদিকে আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক কমানোর ফলে ও কর রেয়াত দেওয়ায় স্বাস্থ্য সরঞ্জামাদির দাম কমে যাবে।

এর মধ্যে করোনার কিট ও সুরক্ষা সামগ্রীতে শুল্ক অব্যাহতি সুবিধা আগেই ছিল। এবার করোনা শনাক্তের আরটি-পিসিআর কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।

গ্রামের মানুষের স্যানিটেশন সুবিধা বাড়াতে দেশে উৎপাদিত লং প্যানের সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া হয়েছে। এতে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ছিল। অটিজম সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মেডিটেশন সেবার ওপর ভ্যাট অব্যাহতি এক বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে দাম কমতে পারে স্যানিটারি ন্যাপকিনের। কারণ আসছে অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে দেশে উৎপাদিত ন্যাপকিনের সমুদয় মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কাঁচামাল আমদানিতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা দুই বছরের জন্য বাড়ানো হয়েছে।

ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনের কাঁচামালে আবার শুল্ক ছাড় দিয়েছে সরকার। এতে ক্যানসারের ওষুধ উৎপাদনে ব্যয় কমবে।

এছাড়া ওষুধ শিল্পের আরও কিছু কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। বেশ কিছু মেডিকেল যন্ত্রাংশ উৎপাদনে উপকরণ আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ডায়ালাইসিস সেবায় ব্যবহার করা বার্ড টিউবিং সেটের কর কমানো হয়েছে।


আরও দেখুন: