ধূমপান ছেড়ে দিতে চান ৬৬ ভাগ ধূমপায়ী

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-05-31 08:50:57
ধূমপান ছেড়ে দিতে চান ৬৬ ভাগ ধূমপায়ী

একজন ধূমপায়ীর সিগারেটের জন্য প্রতিমাসের ব্যয় ১ হাজার ১০০ টাকা

আজ বিশ্ব তামাক মুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় “আসুন আমরা প্রতিজ্ঞা করি, জীবন বাঁচাতে তামাক ছাড়ি”। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয় ৪ লাখ মানুষ। অন্যদিকে তামাকজনিত কারণে মৃত্যু হয় ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষের প্রাণ।

পরিসংখ্যান বলছে, ধোঁয়াবিহীন তামাক জর্দা, গুল ব্যবহার করে ২০ শতাংশের বেশি মানুষ। আর সিগারেট খায় ১৪ শতাংশের বেশি। এতে বলা হয়, একজন ধূমপায়ীর সিগারেটের জন্য প্রতিমাসের ব্যয় ১ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়াও ডব্লিউএইচওর গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে ২০১৭ এর তথ্যমতে, দেশের ৬৬.২ শতাংশ ধূমপায়ী এ অভ্যাস ছেড়ে দিতে চান। আর ধোঁয়াহিহীন তামাক সেবনকারীদের ৫৩ শতাংশ ছাড়ার পক্ষে।

গবেষকরা বলছেন, তরুণ জনগোষ্ঠীর মাঝে ধুমপানের মাধ্যমে তামাকা ও মাদকাসক্তি আশংকাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রায় প্রতিটি রোগের মূলে রয়েছে তামাক সেবন। এবিষয়ে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের হৃদরোগ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. অমল কুমার চৌধুরী ডক্টর টিভিকে বলেন, টোবাকো, সাদা পাতা একটা ফিল্ডার সিগারেটের চাইতে একশ গুণ বেশি ক্ষতিকারক।

ডা. অমল কুমার বলেন, শরীরের অন্যান্য অংশের তুলনায় মানুষের মুখের রক্তচাপ অন্তত একশ গুণ বেশি। আর সাদাপাতা মানুষ সরাসরি মুখে চিবায়। যখনই সে সাদাপাতা চিবায় সাথে সাথে এটা রক্তে মিশে যায়। অতএব বলা যায় একটা সিগারেটের থেকে দশ গুণ বেশি টোবাকো টক্সিনের যে নিকোটিন অন্যান্য ম্যাটেরিয়ালস আছে, সব চলে যাচ্ছে রক্তে। এগুলোই আমাদের হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ব্লাড ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে বৃদ্ধি করছে।

আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনী রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ ডক্টর টিভিকে বলেন, আগে ধারণা করা হতো যে ধূমপান করার জন্য ক্যান্সার হয়। তারপর দেখা যায় শুধু ক্যান্সার নয় রক্তনালী ড্যামেজ হয়। আমাদের যে ছোট দুটি কিডনি রয়েছে, যার ওজন আমাদের দেহের দুইশত পঞ্চাশ ভাগের এক ভাগ, সেই কিডনিতে নষ্ট হয় তাকাম সেবনে। কিডনিতে রক্তপ্রবাহ হয় আমাদের দেহের চারভাগের একভাগ। কেউ যদি ধূমপান বা তামাক নেয়। প্রথমই তার প্রভাব পড়ে কিডনিতে। যার কারণে সরাসরি কিডনি বিকল হয়ে যায়।

এছাড়াও হরমোন জনিত গলার থাইরয়েড সমস্যার মূলেও রয়েছে এই তামাক। বিএসএমএমইউ'র থাইরয়েড মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ. কে. এম ফজলুল বারি ডক্টর টিভিকে বলেন, থাইরয়েডের সাথে মাদকের একটা সম্পর্ক রয়েছে। থাইরয়েড হলো মেটাবলিক অ্যাক্টিভিটি কন্ট্রোল করে শরীরে। যা পুরো শরীরের সমস্ত অংশের উপর প্রভাব ফেলে।

বর্তমান সময়ে মাদক অন্যতম সমাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. এম এ ফয়েজ ডক্টর টিভিকে বলেন, ঔষধ জাতীয় কতগুলো মেডিকেল সাবস্টেন্স আসছে, যেগুলো আমাদের সমাজে সামাজিক ভাবে খুবই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনেকেই ব্যবহার করে থাকেন ফেনসিডিল, অনেকেই আবার ব্যবহার করেন আমাদের পাশের দেশ থেকে আসা ইয়াবা। একসময় এগুলো ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হলেও এখন এগুলোতে আসক্ত হচ্ছে মানুষ। অনেকেই আবার ঘুমের ওষধে আসক্ত হচ্ছেন। সকল প্রকার মাদক থেকে রক্ষা পেতে সব স্তরে সচেতন হতে হবে উল্লেখ করেন তিনি।

উপযোগী চিকিৎসা পরামর্শসেবার আওতায় আনলে মাদকাসক্তদের ফিরানো যাবে স্বাভাবিক জীবনে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল ডক্টর টিভিকে বলেন,  মাদকাসক্তি চিকিৎসায় সারাবিশ্বে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের দ্বারাই মাদকাসক্তি চিকিৎসা করাতে হবে। বাংলাদেশের চিকিৎসা করা হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হাসপাতালে। ফলে এখানে চিকিৎসা সেবা বরাবরই প্রশ্নবিদ্ধ। এছাড়াও সরকারিভাবে চিকিৎসা সেবা খুব একটা নেই। বেসরকারিভাবে যে সকল প্রতিষ্ঠান আছে সেখানে পর্যাপ্ত সেবা নেই। এছাড়াও নামে বেনামে গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও সেবা দিয়ে থাকে মাদক সেবা কেন্দ্র থেকে সদ্য সেবা নেওয়া মাদকাসক্তরা। যারা কিছুদিন আগেও মাদক নিতো।

তামাক চাষে স্বাস্থ্যগত, অর্থনৈতিক দু’ভাবেই কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. শাফিউন নাহিন শিমুল ডক্টর টিভিকে বলেন, করোনা পূর্ববর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় আমরা পেয়েছি, তামাক চাষ লাভজনক নয় বরং কৃষক যে সারা দিন পরিশ্রম করে। তার পরিবারের লোকজন যে পরিশ্রম করছে, তাদের শ্রমের মূল্য সে হিসাব করে না। তাই তার কাছে মনে হয় মাদক চাষ লাভজনক। আসলে এটা অন্যান্য ফসলের তুলনায় লাভজনক নয়। তামাকের কারণে শুধু স্বাস্থ্যের ক্ষতি নয়, পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। তামাক চাষে মাধ্যমে দেশের তার চেয়ে অনেক ক্ষতি হয়।


আরও দেখুন: