করোনায় প্রাধান্য পাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যখাত
২০২১-২০২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা
বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে আগামী অর্থবছরের (২০২১-২০২২) বাজেটে সবচেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছে দেশের স্বাস্থ্যখাত। আগামী ২০২১-২০২২ অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ছে ৩ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। স্বাস্থ্যখাতে মোট বরাদ্দ থাকছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা।
আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি হবে মোট বাজেট বরাদ্দের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। আর জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে ২৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকার বরাদ্দ রয়েছে। বাড়তি বরাদ্দের বড় একটি অংশই অবশ্য খরচ হবে পরিচালন ব্যয়ে। বাকিটা মূলত ব্যয় হবে স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে।
আগামী ৩ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ‘জীবন ও জীবিকার প্রাধান্য, আগামীর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে যে বাজেট বক্তৃতা দিবেন। সেখানে স্বাস্থ্য খাতের এসব বিষয়ে বিস্তারিত বলা থাকবে বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, জিডিপির হিসাবে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবার জন্য বরাদ্দ দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে কম। দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয় জিডিপির ২ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং মাথাপিছু স্বাস্থ্য ব্যয় মাত্র ১১০ ডলার। গত সাত অর্থবছর ধরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ মোট বাজেটের ৫ শতাংশের ঘরে আটকে আছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে বরাদ্দ ছিল ২৫ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা। এটি ওই অর্থবছরের মোট বাজেটের ৪.৯২ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৫.০৫ শতাংশ।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ১৪ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৫.৩৯ শতাংশ। এর আগের অর্থবছর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে স্বাস্থ্য বাজেটে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। যা মোট বাজেটের ৪.৬৮ শাতংশ। একইরকমভাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮১১ কোটি টাকা। যা ওই সময়ের মোট বাজেটের ৫.৬০ শতাংশ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। এটি ওই অর্থবছরের মোট বাজেটে ৫.১০ শতাংশ।
জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে সরকারি হাসপাতালগুলোকে অত্যাধুনিক করার পাশাপাশি করোনা মোকাবেলায় নতুন করে ২ হাজার চিকিৎসক, ৬ হাজার নার্স এবং ৭৩২ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব করা হতে পারে। এদের জন্য আসছে বাজেটে ৫০০ কোটি টাকা রাখা হচ্ছে। চলতি বাজেটে গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসকের সংখ্যা ও সেবার মান বৃদ্ধিতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৭৫ কোটি টাকা।
করোনাকালে চিকিৎসক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। নিজেদের জীবন বাজি রেখে তারা আক্রান্তদের সেবা ও সুস্থ করে তুলছেন। আর এ কাজ করতে গিয়ে এ পর্যন্ত ১৪০ জনের বেশি চিকিৎসক করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। চলতি বাজেটে এজন্য তাদের বিশেষ সম্মানি ভাতা দেয়া হয়। করোনা চিকিৎসা দিতে গিয়ে আক্রান্ত এবং মৃত্যুবরণকারি চিকিৎসকদের এককালীন সম্মানি ভাতা দেয়া হয়েছে। চলতি বাজেটে এ খাতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী বাজেটে সম্মানী ভাতার পাশাপাশি দেয়া হতে পারে ঝুঁকি ভাতা। সেই সাথে আসতে পারে প্রণোদনার ঘোষণা। প্রণোদনা এবং এসব ভাতায় আগামী বাজেটে ভালো রকমের বরাদ্দ রাখা হতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, আগামী অর্থবছরে শুধুমাত্র স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্যখাতে ৩৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এর পাশাপাশি আরও ১০ মন্ত্রণালয়ের আওতায় যে স্বাস্থ্য বিষয়কখাত রয়েছে তাতে আরও ১১ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। ফলে সব মিলিয়ে এখাতে ব্যয় বরাদ্দ ৪৪ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
আরও দেখুন:
- স্বাস্থ্যসেবা
- ২০২১-২০২২-অর্থবছর
- স্বাস্থ্যখাতে-বরাদ্দ-বাড়ছে
- জিডিপি
- অর্থমন্ত্রী-আ-হ-ম-মুস্তফা-কামাল
- আগামীর-বাংলাদেশ’
- নার্স-এবং-স্বাস্থ্যকর্মীরা-বিশেষ-ভূমিকা