মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায় ভয়ঙ্কর মাদক ‘এলএসডি’

হাসান মাহমুদ
2021-05-29 10:35:03
মস্তিষ্কের বিকৃতি ঘটায় ভয়ঙ্কর মাদক ‘এলএসডি’

এলএসডি নেশার সর্বশেষ ধাপ বলে মনে করে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা

ভয়ঙ্কর মাদক লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড (এলএসডি)। মাত্র ৪০ মাইক্রোগ্রাম বা একটি বালুকণার দশ ভাগের এক ভাগের সমান এলএসডি গ্রহণে মানুষের মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে অলীক বিশ্বাস তৈরি করে।

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাফিজুর রহমানের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই মাদকের সন্ধান পায় আইন শৃ্ঙখলা কক্ষাকারী বাহিনী। এ মাসের ১৫ মে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় গলাকাটা অবস্থায় ঘুরতে দেখে পুলিশ। এরপর ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই মাদককে নেশার সর্বশেষ ধাপ হিসেবে চিহ্নিত করছেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, মাদক গ্রহণের ৬ থেকে ১২ ঘন্টা পর্যন্ত এর প্রভাব থাকে। এসময় সেবনকারীর মস্তিষ্কের বিকৃতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। 

এলএসডির ভয়াবহতা সম্পর্কে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আহমেদ হেলাল ডক্টর টিভিকে বলেন, মস্তিষ্কের ভিতরে নিউরো ট্রান্সমিটার নামে কিছু পদার্থ আছে, সেগুলোর মাধ্যমে সারা শরীরে এই মাদক সরাসরি আঘাত করে। ফলে মানুষ হ্যালুসিনেট বা অলীক অস্তিত্বে বিশ্বাস করতে থাকে। এসময় মানুষ চোখের সামনে অবাস্তব কিছু রঙ বা বস্তু দেখতে পায়।

তরুণরা কী কারণে এমন নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ সমাজ এ নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে বলা যাবে না। এই ড্রাগ অনেক পুরোনো। পঞ্চাশের দশকে এটি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে কিছুদিনের মধ্যেই এটি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়। এই ড্রাগকে রিক্রিয়েশনাল ড্রাগ বা মাদকের সর্বশেষ ধাপ হিসেবে বলা হয়। গত এক দশকে দুই থেকে তিনটির বেশি ঘটনা পাওয়া যায়নি।

তবে এবার যে পরিমাণ উদ্ধার করার খবর পাওয়া গেছে এর প্রতিক্রিয়ায় একজনের মৃত্যুও হয়েছে। এছাড়া একটি ফেসবুক গ্রুপের সন্ধান পেয়েছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এতে সন্দেহ করার কারণ হচ্ছে, এখন এটি ব্যবসায়িক পর্যায়ে চলে গেছে। অন্যান্য মাদকের চেয়ে এর ক্ষতির পরিমাণ অনেকগুণ বেশি বলে মনে করেন এই মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর করণীয় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রথমেই এই মাদকের আমদানি যেকোনো মূল্যেই রোধ করতে হবে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে হবে।

এছাড়া তরুণদের মাঝে বিকল্প বিনোদনের ব্যবস্থা করতে হবে। যাতে তরুণরা এরকম মাদকের দিকে আকৃষ্ট না হয়। এর পরেও যদি কেউ আকৃষ্ট হয়, তাহলে তাকে দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ফিরিয়ে আনতে হবে। এতে পরিবারই সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারে।

লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাইথ্যালামাইড সমাজের উচ্চবৃত্তরাও গ্রহণ করছে বলে প্রমাণ মিলেছে। সমাজের উচ্চবৃত্ত শ্রেণীর তরুণরা এই মাদকে আকৃষ্ট হওয়ার কারণ সম্পর্কে ডা. আহমেদ হেলাল বলেন, মানুষের দুটি সত্ত্বা থাকে একটি তার ভিতরের এবং অন্যটি পারিপার্শ্বিক পরিমণ্ডল। উচ্চবিত্ত বা সাংষ্কৃতিক পরিমণ্ডলে বড় হওয়ার পরেও বন্ধুদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

বাংলাদেশে এই মাদক নিয়ে এখন নতুন করে আলোচনা হলেও এই মাদক প্রথম ১৯৩৮ সালে সুইজারল্যান্ডের রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যানের সানডোজ ল্যাবরেটরিতে একটি গবেষণা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সংশ্লেষিত হয়েছিল। প্রথম ১৯৪৭ সালে কোম্পানিটি সাইকোফ্রেনিয়া বা অপরাধমূলক আচরণ এবং যৌন বিপর্যয়ের মতো মানসিক রোগের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহারের অনুমতি দেয়। তবে ১৯৫০ সালেই যুক্তরাষ্ট্র এই ড্রাগটি নিষিদ্ধ করে। প্রথম যেই দেশে ড্রাগটি উৎপাদন হয় সেই নেদারল্যান্ডও ১৯৯৩ সালে ড্রাগটি নিষিদ্ধ করে।


আরও দেখুন: