অ্যাজমার সবচেয়ে কার্যকরী ও নিরাপদ চিকিৎসা ইনহেলার

মোকাররম হোসাইন
2021-05-06 05:44:17
অ্যাজমার সবচেয়ে কার্যকরী ও নিরাপদ চিকিৎসা ইনহেলার

বিশ্বে অ্যাজমা বা হাঁপানিজনিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৩৪ কোটি। তবে গত দেড় বছরে বাংলাদেশে রোগটির প্রকোপ কমেছে খানিকটা। কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে নিয়মিত মাস্ক পরাই এর মূল কারণ বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘বাচ্ছাদের বাইরে চলাফেরা অনেকটা কমে গেছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে। সে জন্য অ্যাজমার প্রবণতা কমেছে, আমরা রোগী অনেকটা কম পাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরার কারণে মানুষের বায়ু দূষণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা কমেছে। এর ফলে অ্যাজমার প্রবণতা অনেকটা কমে গেছে।’

অ্যাজমায় মৃত্যুর ঝুঁকি ও হার কম থাকলেও, সুচিকিৎসার অভাবে বেশ কষ্ট পেতে হয় ভুক্তভোগীদের। রোগটি আঁচ করতে পারলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বক্ষ্যব্যাধি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবান তহুরা বলেন, ‘শ্বাসনালীর ডায়ামিটার কারও কারও অতি সংবেদনশীল হয়ে থাকে। কিছু কিছু এলার্জিটিক এক্সপোজারে সেটি সংকুচিত হয়ে যায়। তখন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া যায় না। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আমরা হাঁপিয়ে উঠি বা হাঁপাই, তখন আমরা এটাকে অ্যাজমা বলে থাকি।’

শিশুরোগ বিশেজ্ঞ ডা. তাহমিদা হক বলেন, ‘আমাদের ফুসফুসের নালীগুলো গাছের শাখা-প্রশাখার মতো। এগুলোতে যখন প্রদাহ হয়, এগুলো ফুলে যায় বা পানি জমে যায়। এতে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ সৃষ্টি হয়।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত ইনহেলার ব্যবহার অ্যাজমা আক্রান্তদের জন্য সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।

ডা. সারাবান তহুরা বলেন, যেহেতু অ্যাজমা রোগটা হলো নিয়ন্ত্রণে রাখার বিষয় এবং দীর্ঘমেয়াদে ওষুধের ওপর থাকতে হয়। ইনহেলারে অ্যাজমার ওষুধ মুখে খাওয়ার চেয়ে অনেক কম ব্যবহার করেই কোনো ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়া স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যেতে পারে।

ঢাকা শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার বলেন, মনে রাখতে হবে- অ্যাজমার চিকিৎসা ইনহেলার, ইনহেলার এবং ইনহেলার। অ্যাজমার চিকিৎসায় ইনহেলারই নিরাপদ যার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। অ্যাজমা রোগীর সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা ইনহেলার নেওয়া।

ঢাকা শিশু হাসপাতালে অ্যাজমা সেন্টারে নিয়মিত চিকিৎসা হয় অ্যাজমা আক্রান্ত শিশুদের। এছাড়া বয়স্ক রোগীদের জন্য ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতালেও রয়েছে অ্যাজমা সেন্টার। যেখানে সব বয়সীদের জন্য রয়েছে পরামর্শ ও চিকিৎসা নেওয়ার সুযোগ।

টিভি হাসপাতালের অফিসার ইনচার্জ (সহকারী পরিচালক) ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, টিভি হাসপাতালের অ্যাজমা সেন্টারে আসা রোগীদের আউটডোরে কাউন্সেলিং করা হয়, চিকিৎসা দেওয়া হয় এবং প্রয়োজনে ভর্তি করা হয়।

অ্যাজমা নিয়ে লোকমুখে অনেক ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। তাই কবিরাজি ও হোমিও চিকিৎসায় আস্থা না রাখার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।

তিনি বলেন, চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যে পরামর্শ দেবেন রোগীর উচিত সেটাই মেনে চলা। নিজে নিজে ওষুধ খাওয়াটা একদমই ভালো নয়।

সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা গ্রহণ করলে অ্যাজমা বা হাঁপানি রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এজন্য আক্রান্তদের নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপনের পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।


আরও দেখুন: