খোলা শরবতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

দেলাওয়ার হোসাইন দোলন
2021-04-11 06:39:14
খোলা শরবতে বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি

গরমে আরাম পেতে ফুটপাত থেকে শরবত পান করছেন পথচারীরা

মোতালেব মিঞা, চেহারায় স্পষ্ট ক্লান্তি। শরীরের পোশাক ভিজে গেছে। কপালের ঘাম মুছছেন গামছা দিয়ে। এরই ফাঁকে রিকশা থামিয়ে তিনি ফুটপাতের লেবুর শরবত পান করছেন। কেমন লাগছে জিজ্ঞেস করতেই, একগাল হেসে মোতালেব বললেন, ‘ভালো লাকতাছে।’

এই যে অস্বাস্থ্যকর শরবত খাচ্ছেন, সমস্যা করবে না- ডক্টর টিভির এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এই গরমে দুইটা যাত্রী টানলে ভিতরে সব হুগাইয়া যায়। প্রতিদিন ২-৩ গ্লাস ঠান্ডা শরবত খাই। না খাইলে জোর পাই না।’

স্বাস্থ্যঝুঁকি জেনেও ভ্যাপসা গরমে আরাম পেতে মোতালেব মিঞার মতো অনেক পথচারী ফুটপাতের শরবতে পিপাসা মেটাচ্ছেন। তারা বলছেন, গরমে চলতে হাঁপিয়ে উঠেন। এজন্য গলা ভেজাতে শরবতে চুমুক দেন। খায়রুল বাশার নামের পথচারী ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘না খেয়েও উপায় নেই। জানি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে তারপরও সাময়িক স্বস্তি পেতে পান করলাম।’

রাজধানীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে খোলা ভ্যানে ভ্রাম্যমাণ এসব শরবতের দোকানে বেচাবিক্রিো বেশ। আকার ভেদে গ্লাস প্রতি শরবতের দাম রাখা হয় ১০ থেকে ৩০ টাকা। এসব দোকানের বেশিরভাগ ক্রেতা নিম্নআয়ের মানুষ ও পথচারী।

তবে চিকিৎসকরা বলছেন, সাময়িক স্বস্তির জন্য খোলা আকাশের নিচের এসব দোকান থেকে মানুষ ঠান্ডা শরবত পান করেন। কিন্তু নিজের অজান্তে তারা জন্ডিস, আমাশয়সহ দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শরবত তৈরিতে চিনির পরিবর্তে নিষিদ্ধ কেমিক্যাল, স্যাকারিন দেওয়া হচ্ছে। ফিল্টার কিংবা বিশুদ্ধ পানির ব্যবহার বলা চলে বিরল। সবচেয়ে ক্ষতির কারণ শরবতে ব্যবহৃত বরফ। এগুলো মূলত মাছ ও লাশ সংরক্ষণে ওয়াসার সাপ্লাই পানি দিয়ে বানানো হয়।

রাজধানীর নীলখেত মোড়ে লেবুর শরবত বিক্রি করেন ফয়সাল। অনিরাপদ পানির বিষয় স্বীকার করে তিনি জানান, কারখানা থেকে তারা বরফ কিনে আনেন। মিনারেল পানি দিলে ক্রেতা দাম দেবে না। এজন্য শরবতে সাপ্লাইয়ের পানি দেই। এ পানি তো ভালোই, সবাই খাচ্ছে, কেউই তো বলছে না, তাদের সমস্যা হচ্ছে?

খোলা শরবতের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিষয়ে নেসলে বাংলাদেশ লিমিটেডের সিনিয়র ম্যানেজার পুষ্টিবিদ সামিনা জামান কাজুরী ডক্টর টিভিকে বলেন, ‘ফুটপাতের কোনো খাবারই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এসব খেলে বা পান করলে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ যেমন- ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস ও ক্রিমি হতে পারে। শিশুদের এসব না খাওয়ানোই ভালো। কারণ তারা বেশি আক্রান্ত হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘শরবতে দেওয়া বরফের উপাদানে কিডনি বিকল, হেপাটাইটিস বি, লিভারের জটিলতা, পাকস্থলীতে প্রদাহ, খাদ্যনালিতে সমস্যা, পেপটিক আলসারসহ জটিল সব রোগ হতে পারে।’


আরও দেখুন: