রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দ্বিগুণ হয়েছে আইসিইউ শয্যা

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2021-04-09 02:41:45
রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে দ্বিগুণ হয়েছে আইসিইউ শয্যা

ফাইল ছবি

মহামারি করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে লাফিয়ে বাড়েছে সংক্রমণ। মৃত্যু এবং সংক্রমণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে পূর্বের সকল রেকর্ড। যাদের বেশিরভাগ সংকটাপন্ন রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ব্যবহারের সুযোগ পায় না। এমন বাস্তবতায় ঢাকার হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশিদ আলম। 

শুক্রবার দুপুরে ডক্টর টিভিকে তিনি এ তথ্য জানান। 

সম্প্রতি কোভিড-১৯ রোগী হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও ভর্তি হতে পারছেন না এমন বাস্তবতায় আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। 

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে হাসপাতালগুলোর ওপর যে হারে চাপ বাড়ছে, তাতে করোনাভাইরাসের চিকিৎসা সেবা ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

রাজধানীর কোন মেডিকেলে কেমন আইসিইউ বেড বেড়েছে? -এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা শুক্রবার দুপুরে ডক্টর টিভিকে বলেন, ঢাকা মেডিকেলে ইতিমধ্যে ১০টি বসানো হয়েছে, আরও ১০টি বসানোর কাজ চলছে।  কুর্মিটোলায় ১০টি ছিল সেখানে আরও ১০টি স্থাপন হচ্ছে।  মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি আইসিইউ দেয়া হয়েছে, এটার কাজ অলরেডি শুরু হয়েছে।  স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ৫টি দেয়া হচ্ছে।  সেখানে গ্যাসের লাইন হলেই আইসিইউ চালু হবে।  এছাড়াও মহানগর হাসপাতালে ৫টি আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। এভাবে প্রায় সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ বেড বাড়ানো হচ্ছে। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অক্সিজেনের সংকট নাই, তবে অক্সিজেন দিতে হলে পাইপলাইনের মাধ্যমে দিতে হয়।

আইসিইউ স্থাপন করার ক্ষেত্রে জনবলের সমস্যা রয়েছে উল্লেখ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক বলেন, আইসিইউর জন্য একটি সঙ্গে আরেকটি জড়িত, শুধু আইসিইউ বেড নিয়ে গেলেই তো হবে না, তার সঙ্গে আনুষাঙ্গিক বিভিন্ন বিষয়ের সঙ্গে টেকনিক্যাল পার্সনও বাড়াতে হবে। এখানে নার্স, টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন কিছুর প্রয়োজন হয়। মহাখালীর ডিএনসিসি (ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন) মার্কেটে আইসিইউসহ ২০০ আমাদের সীমিত জনবল দিয়েই আমরা চেষ্টা করছি।  এটা (জনবল সংকট নিরসন) তো রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব হবে না।  তবে আমরা বসে নেই আমরা কাজ করছি। 

জনবল সংকট নিরসনে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা?-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা আছে।  ইতিমধ্যে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন হয়ে গেছে।  আগামী কিছুদিনের মধ্যে রেজাল্ট হয়ে গেলে আমরা কিছু লোক পাব। এ সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক ডা. মো. ফরিদ হোসেন মিঞা বলেন, আমরা আইসিইউ দিচ্ছি, কিন্তু প্রশিক্ষিত যে জনবলের চাহিদা ওইভাবে তো আমরা দিতে পারছি না। এটাই সবচেয়ে বড় সমস্যা। আমাদের দেশের বাস্তবতায় আইসিইউ চালানোর জন্য অ্যানেস্থেসিস্ট, ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিনের চিকিৎসক তো অ্যাভেইলেবল না। আইসিইউ তো যে কোনো চিকিৎসক পরিচালনা করতে পারেন না।

জনবল ঘাটতি পূরণের বিষয়ে তিনি আরও বলেন, ডাক্তার নিতে হলে তো বিসিএসের মাধ্যমে নিতে হয়। পিএসসির মাধ্যমে এটা নিতে হয়, এখনই বললে তো তা নেয়া সম্ভব না। আর নার্সের ঘাটতি আছে, নার্সও নিতে হবে। গত ওয়েবে তো আমরা মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ বিভিন্ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়েছি। এবারও তাদের নেয়া হবে। তাদের নিয়োগ পরীক্ষা ইতিমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। তাদের নেয়ার ক্ষেত্রে ফাইনাল প্রসিডিউর পর্যায়ে রয়েছে। দুই একদিনের মধ্যেই তাদের ফলাফল প্রকাশ হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক বিভাগের পরিচালক আরও বলেন, করোনার এখন ভয়ংকর পরিস্থিতি চলছে।  এবার কেউ রক্ষা পাচ্ছে না, সবাইকে আরও সচেতন হওয়ার বিকল্প নেই।  আমার শাশুড়িও আইসিইউতে, আমার এক আত্মীয় ভেন্টিলেশনে, আমার বড় ভায়েরা ভাই আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষের আসলে সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি বলেন, বর্তমানে যে করোনার যে ওয়েব চলছে তার আগের ওয়েবের চেয়ে বেশি ভয়ংকর।  যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের অবস্থা দ্রুত খারাপ হয়ে যাচ্ছে।  আমাদের মন্ত্রী মহোদয়ও বলেছেন, সবাই সচেতন না হলে যে হারে সংক্রমণ ঘটছে তা হাসপাতাল দিয়ে তা ঠেকানো সম্ভব হবে না।   

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীদের জন্যে সাধারণ শয্যা ছিল দুই হাজার ৫৫৫টি, আর আইসিইউ শয্যা ছিল ১২৮টি।  আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ৭৭২টি সাধারণ ও ১৮০টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে।


আরও দেখুন: