পাবলিক হেলথ শুধু ডাক্তারদের বিষয় না
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী। ফাইল ছবি
স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যাপক আলোচনার বিষয় হচ্ছে জনস্বাস্থ্য। এখানে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সকল ধরণের রোগের চিকিৎসার মাধ্যমে জীবন-মানের উন্নয়ন করা হয়। দিন দিন এবিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি ডক্টর টিভির এক অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী জনস্বাস্থের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন।অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেছেন- খাদিজা হোসেন সাবিহা
ডক্টর টিভি: জনস্বাস্থ্য বিষয়টা আসলে কী? এর কাজের পরিধি কি রকম? সে সম্পর্কে কিছু বলুন।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত: আসলে এই যে বিশেষ যে টার্ম- জনস্বাস্থ্য। সেই টার্মটাকে সুনির্দিষ্টভাবে যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে বা এক ধরণের ডেফিনিশনের (সংজ্ঞার) মধ্যে বন্দি করা যায় সেটাও বলা যায় না। তবে ব্যাপক অর্থে এর পরিধি হচ্ছে যে- যেখানে জনগণের সার্থকে প্রাধান্য দিয়ে যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সেটাই হচ্ছে জনস্বাস্থ্য।
সেই স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় এমন একটি ভারসাম্য তৈরি করা হবে, যেখানে চিকিৎসামূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা যেটাকে আমরা অনেক সময় বলি কিউরিটি। আর যেটাকে বলে প্রতিরক্ষামূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা, যেটি প্রিভেন্ট নিয়ে আর যেখানে প্রমোশনাল, প্রমোট নিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থা সেখানে স্বাস্থ্যের প্রমোশন করা হবে, সেইগুলোর মধ্যে একটা সমন্বয় বিধান করে আমাদের সাধারণ জনগণের, আপামর জনগণের স্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দেয়া হবে।
এই বিষয়টিতে আমরা অনেক সময় সংকীর্ণ অর্থে আমরা হয়তো শুধু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে অনেক সময় ভেবে থাকি। সেটি কিন্তু ঠিক নয়। এটিতে ক্লিনিক্যাল স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বা যেটিকে বলা হয় কিউরিটিং স্বাস্থ্যব্যবস্থা, সেটি যে একদম অন্তর্ভুক্ত নয় এবং সেটি কিন্তু মৌন করা হয় সেটিও না। সমন্বয় বিধান এবং যেটাকে বলা হচ্ছে এক ধরণের ভারসাম্য তৈরি, সেটি হচ্ছে সবচেয়ে বড় এই ক্ষেত্রে।
জনস্বাস্থ্য কিন্তু এখন আরও ব্যাপক অর্থে যেখানে আমরা বলি এলাইড হেলথ সাইন্সেস। যেখানে শুধু পাবলিক হেলথ নয়, এলাইড হেলথ সাইন্সেস এই বিষয়টাও কিন্তু সেটার মধ্যে চলে আসে। যেমন আমরা যদি বলি যে- এনভাইরেনমেন্টাল সাইন্স বা এনভাইরেনমেন্টাল হেলথ। তাহলে সেখানে শুধু যে প্রতিরোধমূলক আসে তা না, এখানে নানা ধরণের অন্যান্য বিষয়ও চলে আসে। জিওগ্রাফি চলে আসে, জলবায়ু সংক্রান্ত নানা বিষয়গুলো চলে আসে। এমনকি সমাজনীতিও চলে আসে।
আমরা যদি এখন বলি, হেল্থ ইকোনোমিক্স। হেল্থ ইকোনোমিক্স যে শুধু প্রতিরোধমূলক স্বাস্থ্যব্যবস্থা তা নয়, হেল্থ ইকোনোমিকস কিন্তু একটি হাসপাতালের ইকোনোমিকস হতে পারে। কিউরেটিভ ব্যবস্থার ইকোনোমিকস হতে পারে। যেমন বায়ু স্ট্যাটিসটিক্স, এটা নানা বায়ুতাত্ত্বিক বিষয় থেকে আসতে পারে। সেইজন্য মেডিকেল জার্নালিজম, এগুলো এমনভাবে মিক্সড হয়ে আছে, সেই জন্য আবার পাবলিক হেল্থ বলতে আমাদেরকে এলাইড হেলথ সাইন্সেস- এগুলো হলো হয় পাবলিক হেল্থ।
এটিকে ব্যাপক সমন্বয়ের মধ্যে আনতে হবে অথবা আমাদেরকে এ দুটোকে সমন্বিত করে ভাবতে হবে। যেমন আমরা জনস্বাস্থ্যের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে যে, যেনো আপামর জনসাধারণ, বিশ্বের কোনো মানুষই যেনো বঞ্চিত না হয়। আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা যেনো সুনিশ্চিত হয়, ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে। এটিই হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের মূল ঘটনা।
ডক্টর টিভি: স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সম্পর্কে একটি ধারণা রয়েছে যে- আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থা মানেই চিকিৎসক নির্ভর স্বাস্থ্যব্যবস্থা। আসলেই কি স্বাস্থ্যব্যবস্থা শুধুমাত্র চিকিৎসক নির্ভর হওয়া উচিত?
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত: বর্তমানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে দার্শনিক ধারণা এবং যে ধরণের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ সবাই আমরা প্রমোট করতে চাচ্ছি, যে ধারণাকে এসডিজিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তার কমপ্লিটলি বিপরীত।
আমাদের দেশের যে অবস্থা সেটি আসলে ওভার মেডিকেলাইজড বলতে পারছি। যে আমরা খুব বেশি রকম হসপাতাল কিংবা ক্লিনিক্যাল অথরিটি ব্যবস্থার ওপর এতো জোর দিচ্ছি যে, বেশি না অলমোস্ট এক্সক্লুসিভ। তো আমাদের এই যে ধারণাটা যে শুধু ডক্টর কিংবা নার্সের নিয়োগ প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যেও আমরা এটা লক্ষ করি, এই নিয়মটি সম্পূর্ণ ভুল।
পাবলিক হেলথ এর ধারণার মধ্যে ডাক্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, কেন্দ্রীয় একটি অংশের ভূমিকা পালন করবেন। নার্সরা কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করবেন কিন্তু এখানে ডাক্তারের চাইতে অন্যান্য পেশার লোকজনের ভূমিকা কোনদিকে নগন্য নয়?বরং, আমদের এই পাবলিক হেলথ এর এই ধারণাটা আসলে অনেক বেশি ব্যাপক।
এখন ধরুন, এই বর্তমান মহামারির কথাই ধরি। আমরা যদি এই কোভিড-১৯ এর কথা বলি, চিকিৎসা একটা ব্যাপার। কিন্তু এর প্রতিরোধ এর জন্য দেখুন, আমরা যখন দূরত্ব মেইন্টেইন করতে বলছি একটা যানবাহনে তখন যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে চলে আসছে।
আমরা যখন বলছি যে এখানে মাস্ক পরতে হবে বাধ্যতামূলক মানে কোনো ধরণের নিয়ম নীতির কথা আসছে, তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চলে আসছে। অন্যান্য নীয়মনীতি মেইন্টেইন করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছে।
এছাড়াও কতগুলো স্বাস্থ্যবিধি মানার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিশেষ করে এলজিইডি মন্ত্রণালয়ের নানা ধরণের যোগসূত্র রয়েছে। সুতরাং পাবলিক হেলথের মশা নিধনের কথা যখন বলা হচ্ছিল তখন সিটি করপোরেশনের ভূমিকা ছিল। অর্থাৎ আমরা যদি একটা পাবলিক হেলথ কনসেপ্ট-এর মধ্যে যাই। এটা একটা কনসার্ট-এর মতো।
একটা যন্ত্র প্লে করবে তাহলে এর সংগীতটা হবে। তাহলে ধারণার ক্ষেত্রে আমাদের এই গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রটির কথা ভাবতে হবে। যে পাবলিক হেলথ শুধু ডাক্তারদের বিষয় না। পাবলিক হেলথ কেন হেলথ। মানে আমরা যদি স্বাস্থ্যের কথা ভাবি, আমরা তখন সাইকোলজিকাল মানসিক স্থাস্থ্যের কথা ভাবছি। শুধু সাইকিয়াস্টিকদের কথা ভাবলে চলবে না, ক্লিনিক্যাল সাইকিয়াস্টিকদের কথাও ভাবতে হবে। আমরা যখন পুষ্টি। স্বাস্থ্যের একটা মূল বিষয় নিয়ে ভাবছি, তখন নিউট্রিশনিস্ট, ডাইয়েটিশিয়ান অন্যদের কথাও ভাবতে হবে। যখন আমরা রিহ্যাবিটেশন কথা ভাবছি তখন আমাদের সমাজকর্মীর কথাও ভাবতে হবে।
সেইজন্য এই বিষয়টিকে বিশেষ করে যখন আমরা, স্বাস্থ্যকে ব্যাপক অর্থে নিব তখন ডাক্তার বা নার্স শুধুমাত্র একটা বিষয় হতেই পারে না। সবাই মিলে মিশেই করবে। এই বিষয়টি আমাদের দেশে একদমই অনুধাবন করা হয় না। আমরা যদি নিপসনের (জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান) দিকে তাকাই বা বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পাবলিক হেলথ ফোর্স-গুলোর দিকে তাকাই, প্রোগ্রামগুলোর দিকে তাকাই, তাহলেই বুঝতে পারবো যে ডাক্তার ছাড়া গতি নাই। দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া। তো এভাবে আসলে জনস্বাস্থ্যের ধারণা সম্পূর্ণ বিফলে যাবে।
জনস্বাস্থ্য আসলে সার্বিক সমাজের সব মানুষের দায়িত্ব। এবং এটিকে আমরা বলি, হেলথ অ্যান্ড এভরি পলিসি। প্রত্যেক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে স্বাস্থ্যের ধারণা থাকতে হবে। আমি যখন একটি কারখানা বানাবো তখন ও স্বাস্থ্যের উপর তার প্রভাব ভাবতে হবে। আমি যখন একটা কৃষি পরিকল্পনা করব, ভাববো। এমনকি একটি রাস্তা বানালেও তা নিয়ে ভাববো। তাহলে আপনার প্রশ্নের সঠিক এক কথার উত্তর হচ্ছে না। শুধু চিকিৎসক কিংবা নার্সের বিষয় না। এটি হচ্ছে সার্বিক জনগণের যারা রেলিমেন্ট তারা এক সঙ্গে করার বিষয়। একসঙ্গে সমবেত করে একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করার বিষয়।
ডক্টর টিভি: আপনি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কথা বলেছেন। আসলে আমরা যদি ভুলগুলো থেকে শিক্ষা না নেই, ভবিষতের জন্য যদি আমাদের প্রস্তুত না করি তাহলে আসলে শিক্ষা কোনো কাজে আসবে না। আপনার কাছে এখন জানতে চাইবো যে- আমাদের দেশে আসলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক যে শিক্ষা এটা কতটুকু অগ্রগতি রয়েছে বা এটি নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কি পরিমাণ সুযোগ রয়েছে বা কি পরিমাণ ফ্যাসিলিটি রয়েছে। সুযোগ-সুবিধা কি রয়েছে বা কেমন হওয়া উচিত ? আপনি মনে করেন একজন শিক্ষাবীদ হিসেবে।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত: এটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন। সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থায় বাজেট এর অবস্থা হচ্ছে শতকরা ৩০ ভাগ পাবলিক হেলথ-এ ব্যবহার হয়। এর বেশিরভাগই ব্যবহার হয় ওই হাসপাতালে, হাসপাতালের কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতনে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার যে খরচ যতটুকু দেয়া হয়, পাবলিক হেলথ সেক্টরে ৩০ শতাংশও পাই না।
পাবলিক হেলথ-এর ক্ষেত্রে জনশক্তি অত্যন্ত অপ্রতুল। তো এখন সমাধানের প্রথম পথ হচ্ছে, যদি এখন পথ তৈরি করা হয়। আসলে, সঠিক অর্থে শিক্ষা ব্যবস্থাটা না থাকলে এই লাভ হবে না। সেক্ষেত্রে আরেকটা বড় বিষয় হলো, যে চিকিৎসকেরা তৈরি হচ্ছেন, আন্ডারগ্রাজেুয়ট এমনকি এমবিবিএসকেও আমি ধরি। সেই ফ্যাক্টরিতে যারা তৈরি হচ্ছেন তাদের সেখানে যদি সঠিক পদক্ষেপ না থাকে। চিকিৎসকদের মধ্যে যদি জনস্বাস্থ্যমূলক সচেতনতা না থাকে, তাহলে আমরা যতই বলি, এই ধরণের চিন্তাধারা বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।
সেজন্য খুব হার্ড অ্যান্ড ফাস্ট যে এরা হচ্ছে জনস্বাস্থ্যের চিকিৎসক তারা হচ্ছে ক্লিনিক্যাল। সোজা কথায় হলো, যারাই তৈরি হবেন পোস্ট গ্রেজোয়েশনের মধ্যে স্পেশালাইসড যাই করেন না কেনো, আন্ডার গ্রেজুয়াটদের মধ্যে একটা জনস্বাস্থ্যমুখী একটা চিন্তা চেতনা প্রবেশ করাতেই হবে। সে যদি ক্লিনিক্যাল-ও হয়, ক্লিনিক্যাল এর মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা থাকবে। আশির দশকের শুরুতে তখনও কমিউনেটিং মেডিসিন বলে একটা সাবজেক্ট ছিলো। আমাদের আন্ডার গ্রেজুয়েটে।
কমিউনেটিং গ্রেজুয়েশনে এখনো পর্যন্ত এই নামে কমিউনেটিং মেডিসিনই রয়েছে। হেলথ এর কনসেপ্ট এবং মেডিকেল এর কনসেপ্টের মধ্যে তফাৎ রয়েছে। এর কারণ ব্যাপক অর্থে তো এই যে কমিউনিটি মেডিসিন সেটা খুব দায়সারা একটা শিক্ষা ব্যবস্থা। এর মাঝে মাস তিনেক এর জন্য পোস্টিং দেয়া হয় গ্রামের দিকে। একটা ভিজিট-টিজিট দেয়া হয় আমাদেরকে। কিন্তু এর দ্বারা সত্যিকার অর্থে জনস্বাস্থ্যের ধারণা লাভ করা হয় না। আর ইন্টার্নির সময়ও এই ছিলো যে এক ধরণের এক্সপোজ দেয়া। তো এটা এক ধরণের একটা যে ছোট্ট সামান্য দেয়া হয়। যা কোনো লাভ হয় না।
তাহলে আমাদের প্রথম দরকার হচ্ছে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থায় এ নিয়ে বেশ কয়েকটা সেমিনারও হয়ে গেলো ইদানিং আমাদের এই ঘটনার প্রেক্ষিতে। সেইখানে আমরা বলছি যে, কমিউনিটিং মেডিসিন না পাবলিক হেলথ। নামটাই পাবলিক হেলথ হয়ে যেতে হবে। না হলে কমিউনিটিং মেডিসিন থেকে যেই লোক পোস্ট গ্রেজুয়েশনও করে বা এধরণের পাবলিক হেলথ থেকে তারা আসলে ডিগ্রিটাকে প্রাকটিসের জন্য ব্যবহার করে। সেটা আসলে সত্যি অর্থে পাবলিক হেলথ-এর যে ধারণা তার সাথে তাদের কোনো সমন্বয় নেই। কারণ এটা স্বাস্থ্যব্যবস্থা থেকে শুরু করে নানান দিকে কিন্তু এর প্রভাব রয়েছে।
আমাদের আন্ডারগ্রেজুয়েট শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে এই পাবলিক হেলথ এর ধারণা বা বিষয়টিকে আরও গুরুত্বের সঙ্গে এবং সেটিকে একদম কমিউনিটি পর্যায়ে- একদম গ্রাম থেকে শহর পর্যায়ের মানুষের মাঝে কি করে তাদের এক্সপোজ করা হবে এ বিষয়টি। অত্যন্ত সিরিয়াসলি ভাবা দরকার। আর যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা আসছে সত্যিকার অর্থে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেমন আমাদের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ডিপার্টমেন্ট পাবলিক হেলথ অ্যান্ড মেডিকেল টেকনোলজি ডিপার্টমেন্ট থাকার এখানে অর্থ হয় না।
এটি হচ্ছে একটি ফ্যাকালটি থাকা, অনেক গুলি ডিপার্টমেন্ট লাগবে। সেটি নিপসনে রয়েছে কিনা যেটা আমি একটু আগেই বললাম। যে আমাদের ইচ্ছিত লক্ষমাত্রায় আমরা সেটিকে পৌঁছাতে পারিনি। কারণ পাবলিক হেলথ-এর ব্যাপক ধারণার মধ্যে এটি যায়নি এবং বঙ্গবন্ধু ইউনিভার্সিটির ফ্যাকালটি যেটা এইযে নিপসনকে কেন্দ্র করে সেটির মধ্যেও কিন্তু এ ধারণা নেই। আর যেটা বঙ্গবন্ধু ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ অ্যান্ড টেকনোলোজি যার মধ্য দিয়ে অনেক উচ্চতর ডিগ্রি পিইচডি বিশেষ করে তৈরি হওয়ার কথা ছিলো বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিন্তু এটা তৈরি হয়নি।
নিপসন থেকেও খুব কম যেটা ঢাকা ইউনিভার্সিটির সঙ্গে একসময় যুক্ত ছিলো পিএইচডি কমিটিতে। সেটিও কিন্তু কিছু কিছু হয়েছে তবে খুবই কম। তো আমাদের বক্তব্য হলো যে, সবচেয়ে সেরা পাবলিক ইউনিভার্সিটি বা আমাদের এখনকার মেডিকেল সেক্টরে সেখানে কিন্তু সত্যি অর্থে উচ্চতর শিক্ষা মানে সম্পূর্ণ পিএইচডি লেভেলের কোনো প্রোডাক্ট তৈরি হচ্ছে না। আরেকটি হচ্ছে যে, আরও তিনটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে চালু হয়ে গিয়েছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা শেখ হাসিনা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় নামে আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন হয়ে গেছে। এগুলোর মধ্যে কিন্তু ফ্যাকালটির পাবলিক হেলথ অব এলাইড হেলথ সাইন্সেস, ফ্যাকালটি অব টেকনোলজি এগুলো রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এগুলো কার্যকর হয়নি।
আমরা আশা করবো যে, যেগুলো কার্যকর হয়নি সেগুলো যখন ওদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে চালু হবে আমরা চাইবো তারা যেনো ফ্যাকালটি-গুলোকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত করে। কোর্স, কারিকোলাম, সিলেবাস, রোলস রেজুলেশন আমূল পরিবর্তন করে যেভাবে পাবলিক হেলথ-এ সারা দুনিয়াব্যাপী মেডিকেল, নন-মেডিকেল বিভিন্ন সাবজেক্ট-এ যুক্ত করে ব্যাপক অর্থে পাবলিক হেলথ অ্যান্ড এলাইড হেলথ সাইন্সের ধারণা সেই ধারণাগুলোকে বাস্তবায়ন করেন। এখন পর্যন্ত এগুলো শুধু এফিলিয়েটেড মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড ইনস্টিটিউট দিয়ে চালাচ্ছে। তো আপনার এই কথাটি যে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
সত্যিকার অর্থে এখন পর্যন্ত নেই তো আছে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে বেশিরভাগ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি হয়তো ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক হেলথ তা দিয়ে কয়েক ধরণের পোগ্রাম চালু। কারণ কিভাবে করেছে, করছে। এই যে হয়তো প্রথমে ঢুকলো একটা সাবজেক্ট-এ, তারপরে হয়তো ছয় মাস পরেই স্ট্রিম দিয়ে একটা পার্টিকুলার সাবজেক্ট এ স্পেশালাইজস্ড এমপিএস ডিগ্রি দিয়ে দিলো। আরও দুঃখের বিষয় হচ্ছে এন্ট্রি রোলস। যেটিকে আপনার সাবজেক্ট থেকে যেকোনটাতে ঢুকে পড়লো পাবলিক হেলথ ওপেন থাকবে।
ওপেন থাকা মানে এই নয় যে, লোকের জিওগ্রাফির বিভিন্ন যন্ত্রের ধারণা নেই, মেডিকেল সাইন্সের ধারণা নাই, এনভায়রনমেন্টাল সাইন্সের ধারণা নাই, সে এনভায়রনমেন্টাল সাইন্সের বিষয়ে হেল্প করতে পারবে। সোসিওলজি পড়ে এসে তো এনভায়রনমেন্টাল সাইন্সের হেল্প করতে আসলে চলবে না। তাহলে এইযে মিনিমাম রোলস রেজুলেশন এর হোরিজিনিটি নাই, এগুলোর স্মৃতি যে স্কিনে থাকা দরকার সেটিও ঠিকমতো নেই। আমাদের আগে ডিগ্রি ছিলো এক বছরের। এই এক বছরের ডিগ্রি দিয়ে কোথাও মাস্টার্স যেটা পিএইচডি করার জন্য উন্নত দেশে অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইউরোপে এখানে করার সুযোগ খুব সীমিত।
আমরা চেষ্টা করে এটাকে দেড় বছর করতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশ ইউনিভারসিটি অব হেলথ সাইন্স এ এটা আমরা দু বছরের কোর্স করেছিলাম। ওটা আজও চলছে। কিন্তু আমাদের এগুলোতে আমূল চিন্তার পরিবর্তন লাগবে। কোর্স এর ডিউরেশন ঠিক করতে হবে। এগুলোর সঙ্গে পিএইচডি’কে লিঙ্ক করতে হবে। উচ্চতর পর্যায়ে হিউম্যান রিসোর্স তৈরি করতে হবে। সঠিক শিক্ষা ছাড়া, সঠিক শিক্ষক ছাড়া, শিক্ষাব্যবস্থা ছাড়া, কোর্স কারিকোলামের রেজুলেশন ছাড়া এই বিষয়ের উন্নতি সাধন করা যাবে না।
আন্ডার গ্রাজ্যুয়েট গ্রেজুয়েট, পোস্ট গ্রাজ্যুয়েট দুই ক্ষেত্রেই এগুলো দরকার এবং পিএইচডি ডিগ্রি বা এমফেল উচ্চতর ডিগ্রি ছাড়া গবেষণা এক বছরের কিংবা দুই বছরের গবেষণার অভিজ্ঞতা ছাড়া কিন্তু পাবলিক হেলথ এর উন্নতি নেই। অন্য বিষয়ে যতই আমরা হয়তো সেখান থেকে একটা ওষুধ ধার করে আনতে পারি কিন্তু পাবলিক হেলথ এর বিষয় হচ্ছে দেশের জনগণের এই দেশের প্রেক্ষিত, সামাজিক বাস্তবতা, ভৌগলিক এবং জেনেটিক বাস্তবতার প্রেক্ষিতেই কিন্তু এদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে ডিজাইন করতে হবে এবং জনস্বাস্থ্যেরে সেটিই প্রধান কাজ।
এই ব্যাপারগুলো এখন আমদের দেশে খুবই অবহেলিত। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খুবই অবহেলিত। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে যেগুলো রয়েছে সেগুলো বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অর্থ উপার্জনের একটা হাতিয়ার মাত্র।
ডক্টর টিভি: সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ডা. লিয়াকত: ডক্টর টিভি পরিবারকেও ধন্যবাদ। সকল দর্শক, পাঠক ও শ্রোতাদেরও ধন্যবাদ।
[অনুলিখন: রহমত উল্লাহ নীরব]