স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান দুদকের

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2020-10-18 01:15:34
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫৯ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান দুদকের

ছবি সংগৃহীত।

টাকা আত্মসাৎ, বিদেশে অর্থ পাচার ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৫৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ মোট ১১৮ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে অধিদপ্তরের অনেকের নামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ পাওয়া গেছে, যা তাদের আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয় বলে জানিয়েছে ‍দুদক। এমনকি দুর্নীতির দায় থেকে রেহাই পেতে অনেকে কৌশলে স্ত্রীর নামে সম্পদ করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।

দুদক চিহ্নিত ১১৮ জনের মধ্যে ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ৫২ জনের সম্পদ বিবরণী যাচাই করা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৬ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- ঢাকার মহাখালীর জাতীয় বক্ষব্যাধি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মুন্সী সাজ্জাদ হোসেন, ঢাকার মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (প্রশাসন-২) কবির আহমেদ চৌধুরী, অধিদপ্তরের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর, ঢাকার উত্তরার কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান, অধিদপ্তরের মেডিকেল এডুকেশন শাখার অফিস সহকারী/উচ্চমান সহকারী মো. খাইরুল আলম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের হিসাবরক্ষক মো. মজিবুর রহমান, খুলনার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট শহীদ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওয়াহিদুজ্জামান, অধিদপ্তরের চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন শাখার উচ্চমান সহকারী মো. রেজাউল ইসলাম, অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের সহকারী প্রধান মো. জোবায়ের হোসেন, সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন অফিসের প্রধান সহকারী এম কে আশেক নওয়াজ।

তাছাড়া, ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের প্র্রশাসনিক কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন, রংপুর মেডিকেল কলেজের প্রধান সহকারী মো. ফজলুল হোসেন, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হিসাবরক্ষক এ টি এম দুলাল, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান, অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. হারুনুর রশিদ, অধিদপ্তরের এনএনএইচপি অ্যান্ড আইএমসিআই ইউনিটের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর তোফায়েল আহমেদ ভূঁইয়া, হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোর অফিস সহকারী কামরুল হাসান, ইপিআই শাখার হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. মজিবুল হক মুন্সি, গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ওবাইদুর রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. ইমদাদুল হক, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. মাহমুদুজ্জামান, আলোচিত গাড়িচালক মো. আবদুল মালেক, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ধনকুবের স্টোর অফিসার মো. নাজিম উদ্দিন, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষক মো. আনোয়ার হোসেন, বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক (স্বাস্থ্য) মীর রায়হান আলী ও গোপালগঞ্জের শেখ সায়েরা খাতুন মেডিকেল কলেজের স্টেনোগ্রাফার কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. সাইফুল ইসলামও রয়েছেন।

সম্পদ বিবরণী যাচাইয়ের আগে অভিযোগ অনুসন্ধান করা হচ্ছে ২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীসহ ৪২ জনের। অভিযোগ সম্পর্কে এরই মধ্যে ২১ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবরক্ষক আবদুল্লাহ হেল কাফি, মুগদা মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফারুক হাসান, অধিদপ্তরের পরিচালকের স্বাস্থ্য কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. আশরাফুল ইসলাম, একই কার্যালয়ের প্রধান সহকারী মো. সাজেদুল করিম, উচ্চমান সহকারী মো. তৈয়বুর রহমান, মো. সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. ফয়জুর রহমান, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলিমুল ইসলাম, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব সহকারী আবদুল হালিম, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব সহকারী আবদুল হালিম, অধিদপ্তরের গাড়িচালক মো. শাহজাহান, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের স্টোর কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আবদুল মজিদ, সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ল্যাব সহকারী সুব্রত কুমার দাস, অধিদপ্তরের ইপিআই শাখার স্টোর ম্যানেজার হেলাল তরফদার, ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক পরিচালক ডা. আবুল কালাম মো. আজাদ, কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. সাফায়েত হোসেন ফয়েজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের সিনিয়র স্টোর কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আবদুল মজিদ ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলিমুল ইসলাম।

গত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তিন দিনে অধিদপ্তরের আরও ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ পর্যায়ে তাদের স্ত্রীসহ ২৪ জনের সম্পদ অনুসন্ধান করা হচ্ছে। এর মধ্যে ১২ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম পাওয়া গেছে। তারা হলেন- স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের সহকারী প্রোগ্রামার মো. রুহুল আমিন, প্রধান সহকারী জাহাঙ্গীর হোসেন হাওলাদার, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মো. শাহজাহান ফকির, আবু সোহেল, কমিউনিটি ক্লিনিক শাখা সহকারী আনোয়ার হোসেন, উচ্চমান সহকারী মো. শাহনেওয়াজ, শরিফুল ইসলাম, অফিস সহকারী মো. হানিফ, মাসুদ করিম, মো. আলাউদ্দিন, অফিস সহকারী (এনসিডিসি) মো. ইকবাল হোসেন ও কুষ্টিয়ার ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের স্টোরকিপার মো. সাফায়েত হোসেন ফয়েজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য খাতে ব্যাপক দুর্নীতি চলছে। এই খাতে চাকরি মানেই নিজের আখের গুছিয়ে নেয়া- এ মানসিকতা নিয়ে কাজ করছেন অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী। তিনি আরও বলেন, ব্যবস্থাপনাগত উন্নয়নের মাধ্যমে স্বাস্থ্য খাতে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সরকারকেই কার্যক্রম নিতে হবে। এ খাতের দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিশন সরকারের কাছে সুনির্দিষ্ট সুপারিশমালা পেশ করেছে।

দুদকের তথ্যমতে, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধান করছে দুদক পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের তদারকিতে উপপরিচালক মো. সামছুল আলমের নেতৃত্বে একটি বিশেষ টিম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এই খাতের দুর্নীতিবাজ ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে দুদক ২৪টি মামলা করেছে। এর মধ্যে অধিকাংশ মামলার চার্জশিটও দেওয়া হয়েছে আদালতে।

এ বিষয়ে সৈয়দ ইকবাল হোসেন বলেন, কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি অনুসন্ধানে যাদের নামে-বেনামে অবৈধ সম্পদের সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। বর্তমানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের আওতাধীন ৫৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী ও তাদের স্ত্রীর সম্পদ অনুসন্ধান করা হচ্ছে।


আরও দেখুন: