করোনার ভ্যাকসিন কার্যকর বললো মার্কিন ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠান ফাইজার
করোনার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে চলছে ভ্যাকসিন আবিস্কারের চেষ্টা। কোভিড-১৯ এর আঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিলো এবার ভ্যাকসিনের খবর। আমেরিকার বিখ্যাত ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফাইজার তাদের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা পাওয়ার কথা জানিয়েছে। এর পাশাপাশি জার্মান কোম্পানি বায়ো এন টেকও আশাবাদ জানিয়েছে। গতকাল বুধবার ফাইজার তাদের ভ্যাকসিনের ইতিবাচক ফল জানিয়ে দাবি করেছে, এটি স্বাস্থ্যবান মানুষের মধ্যে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। তবে এটি বেশি মাত্রায় দেওয়া হলে জ্বরসহ অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজারের তৈরি ভ্যাকসিনের প্রথম ক্লিনিক্যাল তথ্য ‘মেডআরএক্সআইভি’ সাময়িকীতে গতকাল প্রকাশ করা হয়। তবে এটি এখনো কোনো পিয়ার-রিভিউড জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।
করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষায় ফাইজারের দৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪৫ জনকে ভ্যাকসিনের তিন ডোজ বা অন্য ওষুধ (প্লাসেবো) দেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২ জন ১০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ, ১২ জন ৩০ মাইক্রোগ্রাম, ১২ জন ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পান। ৯ জনকে প্লাসেবো দেওয়া হয়। যাঁরা ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছিলেন, তাঁদের অর্ধেকের ক্ষেত্রে জ্বর আসতে দেখা যায়। পরে দ্বিতীয় ডোজে তাঁদের মাত্রা কমানো হয়।
প্রথমবার ভ্যাকসিন পরীক্ষার তিন সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ইনজেকশন পুশ করে দেখা গেছে, ১০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ গ্রহণকারীদের ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ৩০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ গ্রহণকারীদের ৭৫ শতাংশের জ্বর আসে। অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে দেখা দেয়। তবে এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মারাত্মক কিছু নয়। এ জন্য কাউকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়নি বা কারও মৃত্যুঝুঁকি তৈরি হয়নি।
ভ্যাকসিন আবিস্কারে ফাইজার দাবি করেছে, করোনার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সুখবর হচ্ছে, এটি সার্স-কোভ-২ ভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি উৎপন্ন করেছে এবং এ অ্যান্টিবডির মধ্যে কিছু নিউট্রিলাইজিং বা ভাইরাস নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম এমন অ্যান্টিবডি রয়েছে। কোভিড-১৯ রোগ থেকে সেরে ওঠা ব্যক্তির শরীরে যে নিউট্রিলাইজিং অ্যান্টিবডি তৈরি হয়, তার চেয়ে ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ গুণ বেশি। তবে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবডি তৈরি হলে তা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম হবে, সে বিষয়টি নিশ্চিত নয়। এটা প্রমাণে ফাইজারকে বড় আকারের পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যাতে ৫০ শতাংশের কম মানুষ আক্রান্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্রে এবারের গ্রীষ্মেই এ পরীক্ষা চালানোর পরিকল্পনা করেছে ফাইজার। আমেরিকার এ ওষুধ কোম্পানিটি মোট চার ধরনের ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। এর মধ্যে বড় আকারের পরীক্ষার জন্য যেকোনো একটি সংস্করণ বেছে নেওয়া হবে।
করোনার প্রভাব রুখতে ফাইজারের পরীক্ষায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ মূলত বুস্টার শট, যা প্রতিরোধক্ষমতা তৈরির জন্য দেওয়া হয়। যাঁরা একবার মাত্র ১০০ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের শরীরে অ্যান্টিবডির মাত্রা কম। তবে যাঁরা কম মাত্রার দুটি ডোজ পেয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে বেশি অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে ১৪টি ভ্যাকসিন নিয়ে মানব পরীক্ষা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মিলকেন ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, যেসব প্রতিষ্ঠানের ১৪টি ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষা চলছে, এর মধ্যে রয়েছে ইনোভিও, ক্যানসিনো, অ্যাস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার মতো প্রতিষ্ঠান। আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান শিগগিরই পরীক্ষা শুরু করবে। এ তালিকায় রয়েছে মের্ক, জনসন অ্যান্ড জনসন ও সানোফি। এখন পর্যন্ত ১৭৮টি ভ্যাকসিন উন্নয়ন পর্যায়ে রয়েছে।
গত মঙ্গলবার করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের ছোট আকারের একটি পরীক্ষায় ইতিবাচক ফল পাওয়ার দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার ছোট বায়োটেক কোম্পানি ইনোভিও ফার্মাসিউটিক্যালের গবেষকেরা। প্রতিষ্ঠানটির গবেষকেরা বলেছেন, তাঁদের ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় ৩৬ জনের মধ্যে ৩৪ জনের শরীরের ইতিবাচক প্রতিরোধী সক্ষমতা ‘ইমিউনোলজিক্যাল রেসপন্স রেটস’ পাওয়া গেছে।
মডার্নার মতো ফাইজার ও বায়ো এন টেকের তৈরি ভ্যাকসিনটি মেসেঞ্জার আরএনএন (এমআরএনএ) ভিত্তিক, যা বিশেষ জেনেটিক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে কোষে প্রোটিন তৈরি করে যাতে শরীরের রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে। মডার্নার পক্ষ থেকে এখনো তাদের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়নি। তবে শিগগিরই এর ফল পাওয়া যাবে।