বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে বৈচিফ এর অভিনন্দন
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষকে বৈচিফ এর অভিনন্দন
এমডি, এমএস অথবা এমফিল কোর্স থেকে কোর্স আউট প্রথা ও জরিমানা বাতিল করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) কর্তৃপক্ষকে অভিনন্দন জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ফোরাম (বৈচিফ)। সোমবার (১৮ নভেম্বর) সন্ধায় বৈচিফ এর সভাপতি ডা. সামিউর রশিদ রিফাত ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মাহমুদুল হাসান নয়ন স্বাক্ষরিত প্রেস-বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অভিনন্দন জানান তারা। ২০২১ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই দাবি জানিয়ে আসছিল তরুণ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘বৈচিফ’।
উল্লেখ্য, বিএসএমএমইউর একাডেমিক কাউন্সিলের ৭২ তম সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোর্স আউট প্রথা বাতিল হয়েছে। একইসভায় সকল যোগ্য প্রার্থী জানুয়ারি ২০২৫ সেশনে কোর্স পরীক্ষায় জরিমানা ব্যতীত পরীক্ষায় নির্ধারিত ফিস প্রদান করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এর সুযোগ পাবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
উচ্চতর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেয়ায় বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. শাহীনুল আলম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ আলী এবং চিকিৎসক নেতা ডা. আতিয়ার রহমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ‘বৈচিফ’।
উল্লেখ্য, বৈষম্যহীন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন এর লক্ষ্যে বিএসএমএমইউ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস ফোরাম এর যাত্রা শুরু ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসে। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ক্রান্তিলগ্নে কতিপয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয় এর যাত্রা। কোভিডকালীন বিসিপিএস এর অধীনস্থ এফসিপিএস ফাইনাল পরীক্ষায় পাশের হার ছিল অভাবনীয়। পক্ষান্তরে বিএসএমএমইউ এর অধীনস্থ এমডি/এমএস/ডিপ্লোমা পরীক্ষার্থীদের পাশের হার ছিল যথারীতি ১০-১৫ শতাংশের কোটায়, কোন কোন ক্ষেত্রে ০% এর কোটায়। ২০২১ এর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে এই ব্যাপারে এসএমএমইউ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস ফোরামের প্রতিনিধিরা তৎকালীন ভিসি অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন স্যারের সাথে প্রথম সাক্ষাৎ করেন। এই ব্যাপারে ২০২১ এর শেষলগ্নে, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে বেশ কয়েকবার এমডি/এমএস/ডিপ্লোমাদের একাডেমিক পরিবেশ সুনিশ্চিতকরণ, ক্লাস, ফলাফল এবং কোর্স আউট প্রথা বাতিলের ব্যাপারে আন্দোলন করে সংগঠনটি।
আশানুরূপ ফলাফল না পাওয়া এবং এহেন বারংবার ইতিবাচকতা বিমুখ বৈরি প্রেক্ষাপটে বিগত চলতি বছরের ১৮ মার্চ বিএসএমএমইউ পোস্ট গ্রাজুয়েট স্টুডেন্টস ফোরাম রূপান্তরিত হয়ে জন্ম নেয় বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ফোরাম (বৈচিফ) এর। এফসিপিএস এবং এমডি এর মধ্যকার বৈষম্য দূর করতেই এই নাম ধারণ করে ফোরামটি।
নিম্নোক্ত ৫টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে যাত্রার প্রারম্ভ হয় বৈচিফ এরঃ
১) এমডি/এমএস/ডিপ্লোমা-তে বিদ্যমান কোর্স আউট প্রথা ও জরিমানা বাতিল।
২) পাশের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়াতে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ (পর্যাপ্ত একাডেমিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করণের মধ্য দিয়ে)
৩) সেগমেন্টাল পাস সুনিশ্চিত করণ যেমন পরীক্ষার্থী ক্লিনিক্যাল /লিখিত যে সেগমেন্টে অকৃতকার্য হবে শুধু সেই সেগমেন্ট এর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কোর্স সম্পন্ন করবে।
৪) একই এক্সামিনার সেট কমপক্ষে ০২ বারের বেশি পরীক্ষা নিতে পারবে না।
৫) বেসরকারি রেসিডেন্টদের ভাতা বিসিএস ৯ম গ্রেড (প্রথম শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা) এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে বাস্তবায়ন।
২০২৪ এর মে, জুন, জুলাই একাডেমিক পরিবেশ উন্নতকরণ ও Course out প্রথা বাতিলের দাবিতে বৈচিফ এর পক্ষ থেকে তদানীন্তন ভিসি অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হকের সাথে কয়েক দফায় সাক্ষাৎ করেন ডা. সামিউর রশিদ রিফাত, ডা. মাহমুদুল হাসান নয়ন, ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন, ডা. কুদরত ই ইলাহি, ডা. মো. জাকির হুসেন, ডা. জুবায়ের সহ বেশ কয়েকজন চিকিৎসক। সে সময় বারংবার ইতিবাচক আশ্বাস দিলেও একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং করতে পারেননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। অবশেষে জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ২৭ আগস্ট ভিসি পদে নিযুক্ত হন স্বনামধন্য অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর বৈচিফের পক্ষ থেকে ডা. রিফাত, ডা. নয়ন, ডা. রাকিব, ডা. মঈন, ডা. শরীফ, ডা. নজরুল, ডা. মামুন, ডা. কুদরত, ডা. জাকির, ডা. আপেল সহ আরও অন্যান্য শিক্ষার্থী নবনিযুক্ত ভিসি অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সুনির্দিষ্ট দাবি দাওয়া পেশ করেন।
পরবর্তীতে ২৫শে সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. মিলন অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানে ভিসি অধ্যাপক ডা সায়েদুর রহমান এবং প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. শাহীনুল আলম এর উপস্থিতিতে বৈচিফ নেতা ডা. সামিউর রশিদ রিফাত এবং ডা. মাহমুদুল হাসান নয়ন বক্তব্য রাখেন। পরবর্তীতে ৩ অক্টোবর ৭২ তম একাডেমিক কাউন্সিল মিটিং এ ৩টি বিষয় চূড়ান্ত হয়:
১) Course out প্রথা বাতিল হয়।
২) জরিমানা বাতিল হয়
৩) বেসরকারি রেসিডেন্ট ভাতা ৯ ম গ্রেডে চূড়ান্ত হয়।
এর মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসক ফোরাম (বৈচিফ) এর প্রাথমিক বিজয়গাঁথা রচিত হয়। বিগত ৪ বছরের সাধনালব্ধ এই অর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণে বিএসএমএমইউর ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান, প্রোভিসি (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. শাহীনুল আলম, প্রক্টর ডা. শেখ ফরহাদ আলী এবং চিকিৎসক নেতা ডা. আতিয়ার রহমানকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে ‘বৈচিফ’।