শিশুর ডিভাইস আসক্তি কমাতে করণীয়
শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি কমাতে প্রথমে বাবা-মায়ের ডিভাইস আসক্তি কমাতে হবে|
বর্তমান সময়ে ডিভাইস ছাড়া শিশুকে বড় করার কথা অনেক বাবা-মা ভাবতেই পারেন না। অথচ অতিরিক্ত স্ক্রিন দেখা শিশুদের বিকাশ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। তবে বাস্তবে প্রতিটি শিশু কম-বেশি স্ক্রিন দেখছে। অতিরিক্ত স্ক্রিন দেখার কারণে শিশুর মানসিক বিকাশে নানা ধরনের জটিলতা হতে পারে। কোন নিয়মানুযায়ী স্ক্রিন দেখলে শিশুকে আসক্তি থেকে দূরে রাখা যাবে সেই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সিফাত ই সাইদ
» শিশুকে ইন্টারনেট অফ রেখে স্ক্রিন দিন। কারণ ইন্টারনেট অন থাকলে ক্রমাগত স্ক্রল করে প্রায়ই এমন কিছু কনটেন্ট দেখে ফেলে, যা একেবারেই তার বয়স উপযোগী নয়।
» শিশুর বয়স এবং আমাদের সংস্কৃতির সাথে উপযোগী কিছু ভিডিও ডাউনলোড করে দেখতে দিন। এভাবে কিছুদিন পর পর নতুন ভিডিও ডাউনলোড করুন নতুবা সে বিরক্ত হয়ে যাবে।
» শুধুমাত্র ইউটিউব না দেখিয়ে খেলার ছলে শেখায় এরকম কিছু অ্যাপস ব্যবহার করতে দিন। যেমন: Khan academy kids, ABC kids, Piano Kids. এতে তার ভিডিওর প্রতি আসক্তি তৈরি হবেনা।
» মোবাইলের পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন শিশু যেন না জানে সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কোনোভাবে সে যদি জেনে ফেলে, তাহলে পাসওয়ার্ড বা প্যাটার্ন লক পরিবর্তন করুন।
» শিশু যখন স্ক্রিন দেখবে তার সাথে কথা বলুন। এটাকে বলা হয় প্রসিড স্ক্রিন টাইম। যেমন: সে ‘ম্যারি হ্যাড এ লিটল ল্যাম্ব’ এর ভিডিও দেখছে, আপনি তাকে বলুন, বাহ! কি সুন্দর একটা ভেড়া, ওর নাম কি? ওর গায়ের রঙ কি?
» স্ক্রিন দেখার সময় তার আশে পাশে থাকার চেষ্টা করুন। আপনি একরুমে কাজ করছেন, শিশু আরেক রুমে বসে নিবিষ্টভাবে স্ক্রিন দেখছে, এটি যেন না হয়।
» শিশুকে নিজস্ব ডিভাইস দিবেন না। কোথাও বেড়াতে গেলে সার্বক্ষণিক তাকে ডিভাইস দিয়ে রাখবেন না। প্রকৃতির সাথে মিশতে দিন, অন্যান্য বাচ্চাদের সাথে মিশতে দিন।
» শিশুকে টিভি, মোবাইল ও ট্যাব দেখার আগেই সময় বেঁধে দিন। আপনি যদি তাকে বলেন, তোমাকে আধা ঘণ্টার জন্য এসব ডিভাইস দিলাম, তাহলে ঠিক আধাঘণ্টা পরেই এটা ফেরত নিন। কান্নাকাটি করলেও নিয়ে নিন।
» শিশুদের নিজের হাতে মাঝে মাঝে খাবার খেতে দিন। খাবার অল্প খেলেও সু-অভ্যাস গড়ে উঠবে। এক বেলা স্ক্রিনসহ খাওয়ালে অন্য বেলায় স্ক্রিন ছাড়া খাওয়ানোর চেষ্টা করুন।
» সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হলো শিশুদের স্ক্রিন আসক্তি কমাতে প্রথমে বাবা-মায়ের ডিভাইস আসক্তি কমাতে হবে। আপনি শিশুকে যা শেখাতে চান, আপনি নিজে আগে তা করুন।
প্রসঙ্গত, উপরের সবগুলো পয়েন্ট স্বাভাবিক বিকাশের শিশুদের জন্য প্রযোজ্য। যেসব শিশুরা কথা দেরিতে বলছে (স্পিচ ডিলে), চোখে চোখে তাকায় না, অন্য শিশুদের সাথে মেশে না, ডাকলে ঠিকভাবে সাড়া দেয় না, তাদের জন্য স্ক্রিন টাইম শূন্যতে নিয়ে আসতে হবে।
শিশুকে প্রচুর সময় দিবেন, তার সাথে খেলবেন, কথা বলবেন, ছড়া শোনাবেন, গান শোনাবেন। তাকে ধর্ম শিক্ষা দিন, আমাদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত করান, তাকে বাসার বাইরে মাঝে মাঝে খেলাধুলা করতে নিয়ে যান। মনে রাখবেন, পরিবারের সদস্যদের সাথে গুণগত সময় কাটানোর কোন বিকল্প নেই।