রাতে আগে ঘুমানো আর ভোরে ওঠার সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক কী?

ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন
2021-08-26 17:01:01
রাতে আগে ঘুমানো আর ভোরে ওঠার সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক কী?

রাতে আগে ঘুমানো আর ভোরে ওঠার সঙ্গে হরমোনের সম্পর্ক কী?

হরমোনের ভারসাম্যহীনতা আমাদের শরীরের বড় একটি অসুখ। সমাজে এই রোগটি আমরা অনেক বেশি পেয়ে থাকি। হরমোনের রোগটি আরও বেড়ে যাচ্ছে করোনা মহামারীর সময়।

করোনার এই সময়ে আমরা গৃহবন্দী হয়ে গেছি। আমাদের হাঁটাচলা এবং শারীরিক পরিশ্রম কমে গেছে। ফলে মহামারীতে আমাদেরকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। আমাদের খাদ্যাভ্যাস ঠিক করতে হবে এবং সঠিক সময়ে ঘুমাতে হবে। সঠিক সময়ে ঘুম থেকে ওঠা অত্যন্ত জরুরি।

আল্লাহ তা’আলার নির্দেশ অনুযায়ী আমাদের সঠিক সময়ে ফরজ নামাজ কায়েম করতে হবে। আমাদের সূর্যোদয়ের পূর্বে ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে, এবং এশার নামাজের মাধ্যমে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ শেষ করতে হবে।

আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ফজরের নামাজের পর জীবিকা অন্বেষণের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। এশার নামাজের পর তিনি জেগে থাকা পছন্দ করতেন না।

এই কাজগুলোর সঙ্গে আমাদের শরীরের হরমোনের সম্পর্ক রয়েছে। সকাল বেলা যখন আমরা ঘুম থেকে ওঠি, তখন আমাদের শরীরে কর্টিসন হরমোন রিলিজ হয় অ্যাড্রেনাল গ্লান্ড থেকে। এটি আমাদের স্মৃতি, প্রতিদিনের কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করে। তখন যদি আমাদের প্রতিদিনের কাজ শুরু করি তাহলে আমাদের পারফরম্যান্স ভালো হয়। এর বদলে আমরা যদি সকাল ১০টা কিংবা ১২টা পর্যন্ত ঘুমিয়ে থাকি, তাহলে খাবারে এলোমেলো হয়। শরীর অতিরিক্ত বিশ্রাম পায়, যার ফলে ওজন বাড়তে শুরু করে। সারা দিনের পরে কর্মদক্ষতা কমতে থাকে।

এরপর রাতে যখন আমাদের তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাওয়ার কথা। কারণ বিকেলের পর থেকে কর্টিসন হরমোন আস্তে আস্তে কমে যায়। তখন রাতে যদি আমরা দেরিতে ঘুমাই, তখন আমাদের স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। স্ট্রেস হরমোন বেড়ে গেলে আস্তে আস্তে আমাদের ব্লাডপ্রেশার, ব্লাড গ্লুকোজের ওপর প্রভাব পড়ে।

লাইট বন্ধ করে না ঘুমালে আমাদের ঘুমের মেলাটোনিন হরমোন ঠিকমতো ব্লাডের ওপর কাজ করতে পারে না। আর দেরি করে ঘুমালে আমাদের রাতে খিদা লাগে। ফলে আমরা খাওয়া-দাওয়া করি। এতে আমাদের ওজন বেড়ে যায়।

রাত জেগে থাকলে আমরা সকালে উঠতে পারি না আবারও সকালে দেরি করে উঠতে হয়। এভাবে টেনে নিয়ে আমরা আমাদের লাইফস্টাইলের ছন্দটাকে সরিয়ে ফেলি। লাইফস্টাইলের ছন্দ এভাবে বদলে ফেলার কারণে অনেক অসুখের জন্ম হয়।

এসব রোগের মধ্যে রয়েছে- ওজন বেড়ে যাওয়া, কর্মদক্ষতা কমে যাওয়া, পারফরম্যান্স কমে যাওয়া, কোয়ালিটি অব লাইফ কমে যাওয়া, সঙ্গে শিশু বয়স থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সে ডায়াবেটিস, প্রেসার, কোলেস্টেরল ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা, আচরণে পরিবর্তন, বিরক্তভাব হওয়া এবং ব্যক্তিগত সম্পর্কে প্রভাব পড়ে।

সুতরাং আমাদের পরিবারের সবাইকে ইসলামের নিয়ম-কানুন এবং এর সঙ্গে আমাদের শরীরের হরমোনের রিদমগুলো ফলো করতে হবে। তাহলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অনেক সুস্থ রাখবেন।


আরও দেখুন: