ম্যালেরিয়ার ওষুধ কাজ করছে না আফ্রিকান শিশুদের শরীরে: গবেষণা
ম্যালেরিয়ার ওষুধ কাজ করছে না আফ্রিকান শিশুদের শরীরে
আফ্রিকার শিশুদের ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ব্যবহৃত প্রধান ওষুধ আর্টেমিসিনের কার্যকারিতা কমে এসেছে। সারা বিশ্বে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর ৯৫ শতাংশ মৃত্যু হয়ে থাকে এই আফিকা মহাদেশে এবং শিশুরা সবচেয়ে খারাপভাবে প্রভাবিত হয়। সম্প্রতি ‘জার্নাল অব দ্য আমেরিকান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-এ প্রকাশিত একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার কমিউনিকেশনস’ বিজ্ঞান পত্রিকায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আর্টেমিসিনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলেছে ম্যালেরিইয়ার জীবাণু। বিশেষত গুরুতরভাবে সংক্রমিত শিশুদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
গবেষণা প্রতিবেদনের সহ-লেখক ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. চ্যান্ডি জন বলেন, ‘গবেষণাটির মাধ্যমে আফ্রিকায় প্রথম দেখা গেল যে ম্যালেরিয়া ও গুরুতর রোগের স্পষ্ট লক্ষণযুক্ত শিশুরা আর্টেমিসিনিনের আংশিক প্রতিরোধের সম্মুখীন হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ম্যালেরিয়া ‘প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপারাম’ নামক এক প্রকার পরজীবী দ্বারা সংক্রামিত হয়। মশার কামড়ের মাধ্যমে এই পরজীবী ছড়ায়। এই রোগের চিকিৎসায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত আর্টেমিসিন ভিত্তিক কম্বিনেশন থেরাপি ব্যবহৃত হয়। এতে আর্টেমিসিনের সাথে একটি ‘পার্টনার’ ওষুধ থাকে, যা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে থেকে অবশিষ্ট পরজীবী ধ্বংস করে। কিন্তু এবার এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রভাব কমছে আফ্রিকান ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের মধ্যে।
বিশেষ করে শিশুদের ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতির প্রভাব কম দেখা যাচ্ছে। উগান্ডায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ৬ মাস থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের ওপর পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ১০০ জন গুরুতর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত শিশুর মধ্যে মাত্র ১১ জনের ক্ষেত্রে আর্টেমিসিনের প্রতিরোধ ক্ষমতা শনাক্ত করা গেছে। এদের মধ্যে সবাই জেনেটিক মিউটেশন বহনকারী ম্যালেরিয়া পরজীবী দ্বারা সংক্রমিত হয়েছিল, যা আর্টেমিসিনিন প্রতিরোধের সঙ্গে সম্পর্কিত। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ওষুধের কার্যকারিতা কম দেখা গেছে।
গবেষণায় আরও ১০ শিশুকে পাওয়া যায়, যাদের ম্যালেরিয়া থেকে নিরাময় হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু এক মাসের মধ্যে একই ধরনের ম্যালেরিয়ায় তারা আবার আক্রান্ত হয়। যে ফল পাওয়া গেছে তাতে দেখা গেছে, আর্টেমিসিনিনের সঙ্গে ‘লুমফ্যানট্রিন’ নামে ম্যালেরিয়ার আরেক ওষুধের সমন্বয়ে শিশুদের ‘গোল্ড-স্ট্যান্ডার্ড’ যে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে তা যতটা কার্যকরভাবে কাজ করা উচিত ছিল ততটা কার্যকর হয়নি।
এ বিষয়ে ড. চ্যান্ডি জন বলেন, পুরোপুরি নিরাময় হয়ে গেছে বলে মনে করার পর রোগের পুনরাবৃত্তি আমাদের কাছে যা ইঙ্গিত করে, তা হলো যে অংশীদারের ওষুধটি যেমন কাজ করা উচিত তেমনভাবে কাজ করছে না, কারণ পরজীবীগুলো ফিরে আসছে এমনকি আমরা নির্দিষ্টভাবে অনুসন্ধান শুরু করার আগেই ওষুধে প্রতিরোধের প্রমাণ পেতে শুরু করি, যা উদ্বেগজনক লক্ষণ।