চিকিৎসা সম্পর্কিত অধিকাংশ প্রশ্নের ভুল উত্তর দেয় চ্যাটজিপিটি
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি
উন্মুক্তের পর থেকেই এক মুহূর্তে জটিল সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে রীতিমতো আলোড়ন তৈরি করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি। তবে প্ল্যাটফর্মটি চিকিৎসাবিজ্ঞান সংক্রান্ত বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তরই ঠিকভাবে দিতে পারছে না। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য।
লং ল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা চ্যাটজিপিটির ফ্রি ভার্সনে চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত মোট ৩৯টি প্রশ্ন করেন। প্রশ্নগুলো মূলত বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিভুক্ত কলেজ অফ ফার্মেসির ড্রাগ ইনফরমেশন সার্ভিসের কাছ থেকে নেয়া হয়।পরবর্তীতে চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে পাওয়া উত্তরগুলো প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্টদের মাধ্যমে পর্যালোচনা করেন গবেষকরা। সেখানে দেখা যায়, চ্যাটজিপিটি ৩৯টি প্রশ্নের মধ্যে মাত্র ১০টি প্রশ্নের সঠিক জবাব দিতে পেরেছে। অন্য ২৯টি প্রশ্নের ক্ষেত্রে উত্তরগুলো ছিল হয় ভুল, নয়তো অসম্পূর্ণ।
গবেষণাটির ফলাফল গত মঙ্গলবার ক্যালিফোর্নিয়ায় অনুষ্ঠিত আমেরিকান সোসাইটি ফর হেলথ-সিস্টেম ফার্মাসিস্টের বাৎসরিক মিটিংয়ে তুলে ধরা হয়।
উল্লেখ্য, ওপেনএআইয়ের মালিকানাধীন চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি গত বছরের নভেম্বর মাসে বাজারে আনা হয়। এরপর দ্রুতই বাড়তে থাকে এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা। মাত্র ২ মাসেই যা ১০০ মিলিয়নের মাইলফলক ছাড়িয়ে যায়।
গবেষণা সম্পর্কে লং ল্যান্ড ইউনিভার্সিটির ফার্মাসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও গবেষক দলের সদস্য সারা গ্রসম্যান বলেন, চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত ব্যক্তিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে, অন্যান্য ফার্মাসিস্ট ও সাধারণ ভোক্তারা তাদের স্বাস্থ্য ও ওষুধ সম্পর্কে জানতে হয়তো চ্যাটজিপিটির ব্যবহার শুরু করবে। তারই ধারাবাহিকতায় গবেষণাটি করা হয়।
চ্যাটজিপিটির উত্তরগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শুধু ভুলই নয় এমনকি সেগুলো বিপজ্জনকও বটে। যেমন, একটি প্রশ্নে, গবেষকরা চ্যাটবটটিকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে, কোভিড-১৯ অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ প্যাক্সলোভিড এবং রক্তচাপ কমানোর ওষুধ ভেরাপামিল শরীরে একে অপরের সাথে প্রতিক্রিয়া করবে কি-না। চ্যাটজিপিটি উত্তরে জানায়, ওষুধ দুটি একসাথে গ্রহণ করলে মানবদেহে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবে ওষুধ দুটি একসাথে গ্রহণ করলে দেহে রক্তচাপ অনেক কমে যেতে পারে; যা মাথা ঘোরা এবং অজ্ঞানের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। এক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির এমন নির্দেশনা অনাকাঙ্ক্ষিত ক্ষতির কারন হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানান তিনি।
গবেষকরা যখন চ্যাটবটকে উত্তরগুলোর পক্ষে বৈজ্ঞানিক রেফারেন্সের জন্য জিজ্ঞাসা করেছিলেন, তখন প্ল্যাটফর্মটি মাত্র আটটি উত্তরের পক্ষে রেফারেন্স দিতে পেরেছে। আর অবাক করার মতো বিষয় হচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটি ভুল রেফারেন্স তৈরি করছে।
এ সম্পর্কে গ্রসম্যান বলেন, চ্যাটজিপিটির উত্তরে প্রচুর ত্রুটি ছিল। শেষ পর্যন্ত এটি রোগীর দেহের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।
লং ল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণার আগেও পূর্ববর্তী বেশ কয়েকটি গবেষণায় চ্যাটজিপিটির কাল্পনিক উদ্ধৃতি প্রকাশ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
কারণ প্লাটফর্মটিকে যখন চিকিৎসাবিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়, তখন এটি জাল বৈজ্ঞানিক তথ্যসূত্র তৈরি করতে পারে।
এমনকি প্রকৃত লেখকদের নাম বৈজ্ঞানিক জার্নালের পূর্ববর্তী প্রকাশনাগুলির সাথে যুক্ত করে দেয়। সেটি এতটা গুছিয়ে করা হয় যে, এই ক্ষেত্রে একজন পেশাদার ব্যক্তিরও সেটি বুঝতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পর্যালোচনা করতে হবে।
এ সম্পর্কে ওপেনএআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় যে, তারা প্লাটফর্মটির ব্যবহারকারীদের পেশাদার চিকিৎসকদের পরামর্শ বা চিকিৎসার বিকল্প হিসাবে যেন ব্যবহার না করেন। কেননা এর পলিসিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মডেলটি কখনই চিকিৎসা সংক্রান্ত গুরুতর অবস্থার পরিষেবা প্রদান করার মতো উপযোগী নয়৷
অনলাইনে মেডিকেল তথ্য জানতে গ্রসম্যান রোগীদের সরকারী ওয়েবসাইটগুলি ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, অনলাইনের এই পরামর্শ কখনই পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প হতে পারে না।
গ্রসম্যান বলেন, ওয়েবসাইটগুলি হয়তো প্রাথমিক তথ্যের জন্য কাজে আসতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে সকলের ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য নাও হতে পারে। কেননা প্রতিটি রোগীই বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে ভিন্ন। তাই এখানে পেশাদার চিকিৎসকের পরামর্শের অবশ্যই প্রয়োজন।