হার্ট অ্যাটাকের রোগী কি ব্যায়াম করতে পারেন?
হার্ট অ্যাটাকের রোগীর প্রতিকী চিত্র (ইনসেটে
ধরে নিচ্ছি, একজন ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তিনি দ্রুত ছুটে গেলেন সিসিইউতে। পরম যত্নে তাকে চিকিৎসা দেয়া হলো বা রিং পড়ানো হলো। এরপর তার জন্য করনীয় কি?
তিনি কতদিন হাসপাতালের বিছানায় থাকবেন?
ছুটি পাবার পর কতদিন ঘরে বন্দী থাকবেন?
তিনি কয় মাস তার অফিসে যাবেন না, গেলে কবে থেকে যেতে পারবেন কিংবা তাকে আসলে কবে আমরা অনুমতি দেব রমনা পার্কে গিয়ে আগের মতো ব্যায়াম করার??
আদৌ কি সেই দিন আজ আসবে?? কোরিয়ান ভাষা লেখা গাইডলাইনটি বাংলাদেশের জন্য শেয়ার করতে ট্রান্সলেট করতে হেল্প করেছেন প্রফেসর কিম।
এই ফাঁকে জেনে ফেলে নেব আপনার হার্ট কি ঝুঁকিতে??
যদি আপনি পুরুষ, চল্লিশোর্ধ. পরিবারের কারো হৃদরোগ আছে অথবা স্ট্রোকের ইতিহাস আছে, আপনি ঝুঁকিতে। আর সাথে যদি বসা-শোয়া-বিশ্রাম মার্কা কাজে থাকেন, সিগারেট, হাই ব্লাড প্রেসার, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল বা টিজি বেশি আবার এইচডিএল কম, পেট মোটা, ডায়াবেটিস আছে আপনি অবশ্যই ঝুঁকিতে, তবে এগুলো আবার নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
আমাদের শরীরে যত অক্সিজেন লাগে তার বেশিরভাগকে ব্যবহার করে জানেন, যেকোন অবস্থায় আপনার ৬৫% অক্সিজেন ব্যবহারকারী হলো হৃদয়। যেখানে ব্রেন করে ৩৬% এবং বাকি শরীর মিলে ২৬%। সব অবস্থাতেই সে চলতে পারে, কিন্তু সবচাইতে সে ভালো থাকে, যখন আমরা এক্সারসাইজ বা কাজে থাকি। ৪০% কার্বোহাইড্রেট শুধু তার মেটাবলিজমে লাগে। সেখানে আপনি তাকে বসা-শোয়া-বিশ্রাম মার্কা কাজে রেখে কিভাবে এনার্জী পোড়াবেন??
সুতরাং হার্ট এটাক বা হার্টের অপারেশন হয়েছে, হার্টে রিং পড়িয়েছে, এতটুকু কখনই তার নিজের রক্ত সঞ্চালন নিশ্চিত করেনা। হার্টের রক্ত সবচেয়ে কম পৌছে যখন ডায়াস্টলে থাকে। তাকে বেশি খাবার দিতে হলে তাকে কাজ দিতে হবে, তার রক্তনালী প্রসারিত হয়ে সেখানে রক্তের সাপ্লাই ভালো থাকবে। কাজের কারণে শরীরে যত কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়, তত হার্টের রক্তনালী প্রসারিত হয়। বসা-শোয়া-বিশ্রাম মার্কা কাজে সেটি হয়না। যত বেশি দায়িত্ব বাড়ে, তার কাছে তত বেশি রক্ত পৌছে যায়, তত বেশি ফাইবারের সাইজ বাড়ে। কথা হলো তাহলে কাল থেকে সবাই কি দৌড়াদৌড়ি শুরু করবে?? একদমই নয়। এজন্যই প্রয়োজন কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্ল্যান।
কেউ স্ট্রোক করলে পরে রিহ্যাবিলিটেশন লাগে। বলা হয়, নিয়ম মানুন, এক্সারসাইজ করুন, নিজেকে ফিট করুন। অথচ হার্ট যখন অসুস্থ হয়, তখন?? প্রেসারের ঔষধ খাচ্ছেন, প্রেসার কন্ট্রোল, ডায়াবেটিস কন্ট্রোল, রক্ত তরলের ঔষধ খাচ্ছেন-অবশ্যই। সবকিছুই জরুরী। কিন্তু এতটুকুতেই কি পুরো সমাধান হয়ে যাবে?
উত্তর হলো: অবশ্যই না। এজন্য দরকার হার্টের দীর্ঘমেয়াদী যত্নের প্ল্যান।
কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশনে কি হার্ট এ্যটাকের রোগী কি ব্যায়াম করতে পারেন??
অবশ্যই। তবে যার যার জন্য যা দরকার, সে অনুপাতে। ডা . ওয়েগনার নামক একজন ভদ্রলোক পুরো বিষয়টিকে চারটি স্টেপ এ ভাগ করেছেন। প্রথম দুদিন কি করবেন, এর পরের দুদিন, এরপরের দুদিন এভাবে। হাসপাতাল ছাড়ার আগে সবারই লো লেভেল ইটিটি করে বাড়ি পাঠানো হয়। এর পরের ছয় সপ্তাহ বেশ গুরুত্বপূর্ণ কারণ আঘাত পাওয়া হার্ট তখন সুস্থ হতে থাকে। এ সময়টি পার হলেই আমরা তাকে ট্রেনিং এ পাঠাবো। প্রথমে আপনার হৃদয়ের চিকিৎসকের সাথে সমন্বয় করে পুরো পরিকল্পনার ছক আঁকা হয়। অবশ্যই এটি একটি টিম ওয়ার্ক। এজন্য ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট এর সহযোগিতা লাগে। রোগীর টলারেন্স লেভেল দেখা হয়, তিনি কতটুকু ব্যায়াম নিতে সক্ষম? কিছু পরিমাপক স্কেল আছে, যা তার স্ট্যাটাস বলে দেবে, তার হার্ট আসলে কতটুকু নেবার যোগ্য??
আর কিছু প্রটোকল/পদ্ধতি আছে, যেগুলো দিয়ে চিকিৎসক বলে দেবেন কোনটি তার জন্য প্রযোজ্য, কোনটি নিষিদ্ধ।
পৃথিবীর সকল উন্নত দেশে সকল ধরনের হৃদরোগীকে অবশ্যই কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশনে বিভাগে যেতে হয়। এজন্য তাকে গাইড লাইন অনুযায়ী এক্সারসাইজ ঠিক দেয়া হয়। হার্ট এটাকের পরে, রিং লাগাবার পরে, হার্টের বাইপাস, ভালভ সার্জারী, পেস পেকার, হার্ট ফেউলিওর সব জায়গায় কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন।
লেখকঃ
ডা. মুহিব্বুর রহমান রাফে
ফিজিক্যাল মেডিসিন এন্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিশেষজ্ঞ