চ্যাটজিপিটির সহায়তায় রহস্যময় জটিল রোগ শনাক্ত
এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটি
অবশেষে জনপ্রিয় এআই চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সহায়তায় শনাক্ত হলো যুক্তরাষ্ট্রের ৪ বছর বয়সী অ্যালেক্সের রহস্যময় জটিল রোগ। ইতোপূর্বে ১৭টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ঘুরে হয়রান হয়েছেন অ্যালেক্সের মা কোর্টনি। কিন্তু কোথাও রোগ নির্ণয় সম্ভব হয়নি।
মার্কিন সংবাদমাধ্যম ইনসাইডারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, করোনা মহামারির সময় অ্যালেক্সের মধ্যে বেশ কিছু উদ্বেগজনক লক্ষণ ধরা পড়ে। তার সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। হাতের কা্ছ যা পায় সেটাই চিবায়। এসব কারণে তার শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়। সন্তানের এমন রোগে দিশেহারা হয়ে পড়েন মা কোর্টনি। একে একে ১৭টি চিকিৎসা কেন্দ্রে যান তিনি। কিন্তু প্রতিবারই হতাশ হতে হয়েছে তাকে। কোন প্রতিষ্ঠানই অ্যালেক্সের রোগ নির্ণয় করতে পারেননি।
অবশেষে চ্যাটজিপিটির শরণাপন্ন হন কোর্টনি। টুডেডটকম নামের সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ২০২১ সালে অ্যালেক্সের শরীরের ডান ও বাম দিকে ভারসাম্য রক্ষায় সমস্যা দেখা দেয়। সে চলাফেরার জন্য মূলত তার ডান পা ব্যবহার করত ও বাম পা কোনো রকম এগিয়ে নিত। কিন্তু কেউই রোগ ধরতে পারেননি না।
কোর্টনি জানান, তিন বছরের মধ্যে ১৭ চিকিৎসা কেন্দ্রে যাওয়ার পর সম্প্রতি চ্যাটজিপিটিতে নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে শুরু করেন তিনি। অ্যালেক্সের মেরুদণ্ডে সমস্যা হয়েছে বলে জানায় চ্যাটজিপিটি। এরপর ডাক্তারি পরীক্ষা করানো হলে- চ্যাটজিপিটির তথ্যের প্রমাণ পান তিনি।
শুরুতে অ্যালেক্সের সকল এমআরআই চ্যাটজিপিটির মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করান। এ সময় এমআরআইয়ের সবকিছু লাইন ধরে পড়ে চ্যাটজিপিটিতে পাঠান।
সে সময় কোর্টনি লক্ষ্য করেন, অ্যালেক্স আড়াআড়ি পা রেখে বসতে পারছে না। ফলে অ্যালেক্সের শরীরে কাঠামোগত ত্রুটি আছে বলে ধারণা করেন তিনি। চ্যাটজিপিটি রোগটিকে ‘টিদারড কর্ড সিনড্রোম’ বলে শনাক্ত করে। এটি একটি বিরল স্নায়বিক রোগ।
এ রোগে সুষুম্নাকান্ড শিরদাঁড়ার চারপাশের টিস্যুর সঙ্গে যুক্ত থাকে। এতে মেরুদণ্ডের বৃদ্ধির সঙ্গে সুষুম্নাকান্ডের প্রয়োজনীয় বিকাশ ও নড়াচড়া বাধাগ্রস্ত হয়। এই সমস্যার ফলে স্নায়ু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং মেরুদণ্ডে প্রচণ্ড ব্যথা হয়।
চ্যাটজিপিটির কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর কোর্টনি এ সিনড্রোমে আক্রান্ত শিশুদের পরিবারের ফেসবুক গ্রুপে যুক্ত হন এবং সেখানে অ্যালেক্সের মতো আরও অনেকের সম্পর্কে জানতে পারেন।
এরপর কোর্টনি ছেলেকে নিয়ে চলে যান এক নিউরোসার্জনের কাছে। সেখানে চ্যাটজিপিটির থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অনুমানকে সঠিক বলে নিশ্চিত করেন নিউরোসার্জন। ওই চিকিৎসক অ্যালেক্সের এমআরআই দেখে শিরদাঁড়ার ঠিক কোন জায়গায় সমস্যা হয়েছে তা খুঁজে বের করেন।
অ্যালেক্সের মেরুদণ্ড ঠিক করতে সম্প্রতি অস্ত্রোপচার করা হয়। এখন সে সুস্থ হয়ে উঠছে। চ্যাটজিপিটি কিছু স্বাস্থ্যগত জটিলতা শনাক্ত করতে পারলেও কখনও কখনও ভুল উত্তর দেয়। চ্যাটজিপিটি কোর্টনিকে তার ছেলে অ্যালেক্সের রোগ নির্ণয়ে সাহায্য করলেও এটি অনেক সময় ভুল করতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।