দাবি না মানলে ফের ধর্মঘটে যাবেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা
২০০৮ এর সমমান স্যালারি ও সুবিধা বাড়ানোর দাবিতে সম্প্রতি ধর্মঘট করেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা
৩৫% বেতন বাড়ানোর দাবি না মানলে ফের ধর্মঘটে যাবেন যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকেরা। গত ১৩-১৫ মার্চ টানা ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতির মধ্যেই দেশটির স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষাসেবা বিষয়ক মন্ত্রী স্টিভ বার্কলে বৈঠকে ডেকেছেন বৃটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নেতৃবৃন্দকে। আাগামী সপ্তাহের ঐ বৈঠকে বিষয়টির সুরাহা হবে বলে প্রত্যাশা করছেন দেশটির চিকিৎসকেরা। ডক্টর টিভি অনলাইনকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক রাইয়িক রিদওয়ান।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বেতন বাড়ানোর দাবিতে যুক্তরাজ্যের সাম্প্রতিক ধর্মঘটে প্রায় ৪০,০০০ চিকিৎসক অংশ নেন।
আন্দোলনের উৎপত্তি সম্পর্কে রাইয়িক রিদওয়ান জানান, ২০১৫-১৬ তে প্রথম চিকিৎসক আন্দোলন হয়েছিল পেশেন্ট সেইফটি নিয়ে। সে সময় নতুন একটা কন্ট্র্যাক্ট সরকার দিয়েছিল, যার সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তাররা একমত ছিলেন না। সেবারের আন্দোলনের পর যেই সমঝোতা হয়, সেটা অধিকাংশ ডাক্তার না মেনে নিলেও একপ্রকার চাপিয়ে দেয়া হয়। তখন থেকেই একটা রাগ কাজ করছিল যুক্তরাজ্যের ডাক্তারদের মধ্যে।
এর মধ্যে ইনফ্লেশান অর্থাৎ সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। কিন্তু বেতন তেমন বাড়ছেনা। মুদ্রাস্ফিতির সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, ২০০৮ থেকে ২০২৩ এই ১৫ বছরে একজন ডাক্তারের স্যালারি প্রায় ২৬% কমে গেছে।
ডা. রাইয়িক রিদওয়ান জানান, ২০২১ এ reddit নামের সোস্যাল মিডিয়া সাইটে এ নিয়ে কিছু ডাক্তারদের মধ্যে কথাপকথন হওয়া শুরু হয়। তারা অনেক রেগে ছিল nhs এর অবস্থায় এবং কাজের চাপ আর বৃদ্ধির জন্যে। তখন তারা নিজেদের মধ্যে একটা গ্রুপ বানায় নাম DoctorsVote।
তিনি বলেন, ডাক্তারের সবাই বুঝে ফেলেন যে, কোন চেঞ্জ আনতে হলে British Medical Association (BMA) এর টপ লিডারশিপ নিতে হবে। ২০২১-২২ এর কমিটির ৫০%+ সিট তারা জিতে যায়। কমিটি ইলেকশানে তাদের অঙ্গিকার ছিল Full Pay Restoration।
২০২২ এর অক্টোবরে তারা সরকারকে প্রথম জানান যে, দাবি নিয়ে তারা ডিস্পিউটে অর্থাৎ বিতর্কে যাবেন। কিন্তু এ বিষয়ে বারবার বলার পরেও দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোন সাড়া মেলেনি।
অবশেষে, ২০২৩ এর ৯ জানুয়ারি থেকে ডাক্তারের স্ট্রাইকের/ধর্মঘটের জন্য BMA মেম্বারদের ভোটিং শুরু করেন। ৭৭% মেম্বার এতে ভোট দেন। ভোটদাতাদের মধ্যে ৯৮% স্ট্রাইকের/ধর্মঘটের পক্ষে মতামত দেন।
এরই প্রেক্ষিতে ১৩মার্চ সকাল ৭টা থেকে জুনিয়র ডাক্তার-কনসাল্টেন্ট ব্যতিত সবাই ৭২ ঘন্টার কর্মবিরতিতে যান (কোন এক্সেপশান ছাড়া)। এবার বিপুল সংখ্যক কনসাল্টেন্টরাও এতে সাপোর্ট করেন।
স্ট্রাইক/ধর্মঘট শেষ হওয়ার পরেরদিন অর্থাৎ ১৬ মার্চ দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী চিঠি পাঠান বৃটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)-কে। চিঠিতে বৈঠকের জন্যে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
ডা. রাইয়িক রিদওয়ান জানান, যুক্তরাজ্যের আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের এবারের দাবি শুধু একটাই- Fair Pay Restoration। অর্থাৎ ২০০৮ এর সমমান স্যালারি ও সুবিধা এনে দেয়া। যা হারিয়েছেন- এবার তারা সব ফিরে পেতে চান। এ জন্যে বর্তমান বেতন কাঠামোকে ৩৫% বাড়ানো দরকার। এই এক দাবী নিয়েই বৈঠক শুরু হচ্ছে আগামি সপ্তাহে।
যুক্তরাজ্যের চিকিৎসকদের বক্তব্য, বেতন বাড়ানোর জন্য যদি সমঝোতা না হয়, তাহলে ফের স্ট্রাইক/ধর্মঘট হবে। আর সরকার যদি নতুন প্রস্তাব দেন, সেটা নিয়ে BMA/ বিএমএ মেম্বাররা আবারো ভোট দিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।