গর্ভের শিশুর হৃৎপিণ্ডে সফল অস্ত্রোপচার
মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর হৃৎপিন্ডে সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা
মায়ের গর্ভে থাকা শিশুর হৃৎপিণ্ডে সফলভাবে অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকেরা। ভারতের চিকিৎসা ও গবেষণা বিষয়ক সরকারি প্রতিষ্ঠান অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেস (এআইআইএমএস)-এ এই অস্ত্রোপচার হয়। আশা করা হচ্ছে, অস্ত্রোপচার করায় গর্ভস্থ শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে জন্ম নেবে।
বার্তাসংস্থা এএনআইয়ের বরাত দিয়ে বুধবার (১৫ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিল্লি এআইআইএমএস-এর চিকিৎসকরা মাতৃগর্ভে ভ্রূণের হার্ট সার্জারি সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। অস্ত্রেপচারের সময় চিকিৎসকরা জরায়ুর ভেতরে একটি ছোট আঙ্গুরের আকারের হৃদপিণ্ডের বেলুন প্রসারণ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করেন। এটি খুব বিরল অস্ত্রোপচার বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকেরা।
চিকিৎসক দলের দাবি, অস্ত্রোপচার না করা হলে শিশুটি হৃদরোগ নিয়ে জন্ম নিতো। পরবর্তীতে খুব অল্প সময় বেঁচে থাকত সে। কিন্তু অস্ত্রোপচার সফল হওয়ায় শিশুটি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে জন্ম নেবে বলে আশা করছেন তারা।
এআইআইএমএস-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দিল্লি এআইআইএমএস-এ ভর্তি হওয়া ২৮ বছর বয়সী গর্ভবতী ওই নারীর এর আগে তার তিনবার গর্ভপাত হয়। এ কারণে এই অস্ত্রোপচারটি অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং ছিল। চিকিৎসকরা যখন ওই নারী এবং তার স্বামীকে সন্তানের (ভ্রূণের) হার্টের অবস্থা সম্পর্কে বলেছিলেন, তখন তারা দু’জনেই এই সন্তানের জন্ম দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
এরপর চিকিৎসকরা তাদের সামনে এই বিরল অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দিলে তারা দু’জনেই রাজি হন। আর এরপরই এআইআইএমএস-এর কার্ডিওথোরাসিক সায়েন্স সেন্টারে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
এই অস্ত্রোপচার করার জন্য ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট এবং ভ্রূণের ওষুধ বিশেষজ্ঞসহ বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকের নিয়ে একটি যৌথ দল গঠন করা হয়েছিল। কার্ডিওলজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক অ্যানেস্থেশিয়া বিভাগ এবং প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের চিকিৎসকদের একটি দল ওই গর্ভবতী নারীকে পর্যবেক্ষণ করছে।
চিকিৎসকের দলটি জানিয়েছে, অস্ত্রোপচারের পর মা ও ভ্রূণ উভয়ের স্বাস্থ্যই ভালো আছে। চিকিৎসকেরা গর্ভস্থ শিশুটির হার্ট চেম্বারের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করছেন- যাতে তার ভবিষ্যৎ ব্যবস্থাপনা করা যায়।
চিকিৎসকরা বলছেন, শিশুটি মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থায়ই তার ভেতরে কিছু গুরুতর হৃদরোগের লক্ষণ দেখা যায়। শিশু গর্ভে থাকার সময়ই এই ধরনের গুরুতর কিছু হার্ট সমস্যা চিহ্নিত করা যায় এবং গর্ভের ভেতরেই চিকিৎসা দেওয়া হলে তা জন্মের পর শিশুর স্বাভাবিক বিকাশকে ত্বরান্বিত করে।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অস্ত্রোপচারের এই পদ্ধতিটিকে শিশুর হৃৎপিণ্ডে বাধাপ্রাপ্ত ভালভের বেলুন প্রসারণ বলা হয়। বেলুন প্রসারণ পদ্ধতি মূলত হৃৎপিণ্ডের ভালভের কোনও বাধা অপসারণ করতে ব্যবহৃত হয়। এই পদ্ধতিটি আল্ট্রাসাউন্ড নির্দেশিকার মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়।
গর্ভের ভেতরে থাকা সন্তানের হৃৎপিণ্ডে এই প্রক্রিয়াটি সম্পাদন করার জন্য এআইআইএমএস-এর চিকিৎসকরা মায়ের পেটে একটি সূঁচ প্রবেশ করান। এরপর বেলুন ক্যাথেটারের মাধ্যমে ভালভের বাধা অপসারণ করা হয় এবং এর ফলে হৃৎপিণ্ডে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক হয়।
অস্ত্রোপচারকারী দলের চিকিৎসক বলছেন, অস্ত্রোপচারের পর এখন শিশুর হৃদযন্ত্র স্বাভাবিকভাবে গড়ে উঠবে এবং জন্মের সময় যে কোনও হৃদরোগের তীব্রতা অনেক কম থাকবে বলে আমরা আশাবাদী।
সংবাদমাধ্যম বলছে, অস্ত্রেপচারের এই প্রক্রিয়াটি ৯০ সেকেন্ডের মধ্যে সম্পন্ন হয়, অন্যথায় শিশুটি মারা যেতে পারত। চিকিৎসকের মতে, এ ধরনের অস্ত্রোপচারের সময় ভ্রূণের জীবনের জন্য বড় ধরনের বিপদ রয়েছে। এই কারণেই এই অস্ত্রোপচারটি খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল এবং অত্যন্ত যত্ন সহকারে করতে হয়েছিল।
চিকিৎসকরা বলছেন, এই পদ্ধতিতে সাধারণত এনজিওগ্রাফি ব্যবহার করা হয়, কিন্তু এখানে তা করার সুযোগ ছিল না। এজন্য আমরা আল্ট্রাসাউন্ড নির্দেশিকা ব্যবহার করেছি। এই প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত সম্পন্ন করতে হয়েছিল, কারণ আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ হার্ট চেম্বার পাংচার করতে যাচ্ছিলাম। এমতাবস্থায় কোনও ভুল হলে শিশুটির মৃত্যু হতে পারত। আমরা কার্যত সময় গণনা করেছি এবং মাত্র ৯০ সেকেন্ডে অস্ত্রোপচারটি সম্পন্ন হয়েছে।