বাচ্চা নিলেই বিপুল অর্থ দেবে জাপান
বাচ্চা নিলেই দম্পতিকে উৎসাহমূলক ৫ লাখ ইয়েন দেবে জাপান সরকার
উদ্বেগজনক হারে জন্মহার কমে গেছে জাপান। এমন পরিস্থিতিতে জন্মহার বাড়াতে অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এখন থেকে বাচ্চা নিলেই দম্পতিকে উৎসাহমূলক ৫ লাখ ইয়েন দেবে জাপান সরকার। এত দিন চার লাখ ২০ হাজার ইয়েন করে দেওয়া হতো।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, জাপানের জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে দেশটিতে জনসংখ্যা ছিল ১২ কোটি ৮০ লাখ। ২০২১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১২ কোটি ৫৭ লাখে। করোনার আগে একটি মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়, এই শতকের শেষে জাপানের জনসংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ৫ কোটি ৩০ লাখে।
সাম্প্রতিক দশকগুলোতে জাপানে মানুষ বেশি বয়সে বিয়ে করছে। তাদের সন্তানাদিও হচ্ছে কম। এর প্রধান কারণই হলো আর্থিক চিন্তা। কোভিড, ইউক্রেন যুদ্ধ, মুদ্রাস্ফীতির ফলে সমস্যা আরও বেড়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রকাশ করা সংখ্যাতত্ত্বে দেখা গেছে, গত বছরের প্রথম ছয় মাসে তিন লাখ ৮৪ হাজার ৯৪২টি শিশুর জন্ম হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় পাঁচ শতাংশ কম। মন্ত্রণালয় মনে করছে, গোটা বছরে শিশুর জন্মের সংখ্যা ৮ লাখের কম হবে। ১৮৯৯ সালের পর থেকে যেমনটা কখনো হয়নি।
সন্তানকে বড় করার জন্য যে পরিমাণ অর্থ লাগে, তা বিপুল বলে মনে করছেন জাপানিরা। টোকিওর গৃহবধূ আয়াকো জানিয়েছেন, সরকারের দেওয়া অর্থ তিনি পেয়েছেন। তার একটি ছেলে আছে। কিন্তু সরকারের দেওয়া টাকায় তিনি হাসপাতালের খরচ পুরোপুরি মেটাতে পারেননি।
সংবাদপত্র মাইনিছি জানিয়েছে, জাপানে সিজারিয়ান বাচ্চার জন্ম দিতে গেলে গড়ে চার লাখ ৭৩ হাজার ইয়েন খরচ হয়।
আয়াকো বলেছেন, 'আমরা আরেকটি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু আমি ও আমার স্বামী মিলে আলোচনা করে দেখলাম, আর্থিক দিক দিয়ে তা সম্ভব নয়। ৮০ হাজার ইয়েন বাড়তি দিলে সুবিধা হবে ঠিকই, কিন্তু তাতেও খরচ মিটবে না। তাই আমরা বাস্তবতাকে মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা বাচ্চাকে বড় করতে প্রচুর খরচ হয়।'
আয়াকো জানিয়েছেন, করোনার পর তার পরিবারের আয় কমেছে। খরচ বেড়েছে। খাবার ও গাড়ির তেলের দাম খুবই বেড়ে গেছে। ফলে তারা আর খরচ বাড়াতে চাইছেন না।
এই অবস্থায় জাপান সরকারের নতুন উদ্যোগ সফল হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অর্থনৈতিক অস্থিরতা, অভিবাসনে কড়াকড়ি এবং পরিবার ছোট রাখার প্রবণতা ইত্যাদি কারণে বিশ্বজুড়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। এ সবের ফলে পূর্বানুমানের চেয়ে দ্রুত হারে কমছে জাপানের জন্মহার। এমনই জানাল সে দেশের সংবাদমাধ্যম আশাহি শিমবানের একটি সমীক্ষার রিপোর্ট।
জাপানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গণনার সূত্র এবং প্রাথমিক সব তথ্য বিশ্লেষণ করে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ২০২১-এ সে দেশের জন্মহার আট লক্ষ পাঁচ হাজার। এই পরিসংখ্যান ২০২৮-র আগে কোনোভাবেই সম্ভব নয়। ২০২০ সালে দেশটিতে জন্মহার ছিল আট লাখ ৪০ হাজার ৭৩২, যা কি না ২০১৯ সালের চেয়ে ২.৮ শতাংশ কম।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগের তুলনায় করোনাকালে জাপানে বিয়ের সংখ্যা কমেছে। জন্মহার তাই আরও কমে যেতে থাকবে, যদি না যুবসমাজ বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে উদ্যোগী হয়।
করোনা মহামারির শুরুতে মজার ছলে প্রচার করা হয়েছিল যে, বিভিন্ন দেশে লকডাউনের ফলে প্রতিটি দেশে প্রচুর শিশুর জন্ম হবে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক নিরাপত্তাহীনতা জন্মের হারের ওপর বিপরীত প্রভাব ফেলে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের অনুমান, এর ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন লাখ শিশুর জন্মই হয়নি। জন্মহার পতনের ফলেই চীন গত বছর তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনে ঘোষণা করে, যে কোনো দম্পতি তিনটি সন্তানের জন্ম দিতে পারবেন।