চিকিৎসায় বাবা-ছেলের প্রথম নোবেল কীর্তি
১৯৮২ সালে প্যাবোর বাবা বায়োকেমিস্ট সুনে বার্গস্টর্ম চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি মারা যান
চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন সুইডেনের সাভান্তে প্যাবো। সোমবার (৩ অক্টোবর) সুইডেনের ক্যারোলিনা ইনস্টিটিউটে নোবেল কমিটি তাঁর নাম ঘোষণা করে।
নোবেল কমিটি বলেছে, বিলুপ্ত হোমিনদের জিনোম ও মানবজাতির বিবর্তন বিষয়ে গবেষণার জন্য সুইডেনের জিনবিজ্ঞানী সাভান্তে প্যাবোকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। বিলুপ্ত নিয়ান্ডারথালের জেনেটিক কোড ক্র্যাক করার আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব কাজটি করেছেন তিনি।
এ ছাড়া প্যাবো সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা গুহা থেকে পাওয়া ৪০ হাজার বছর পূর্বের ছোট একটি আঙুলের হাড় থেকে পাওয়া জিনোম তথ্য থেকে আরেকটি অজানা হোমিনিন ডেনিসোভার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য আবিষ্কার করেছেন।
প্যাবো তার এই গবেষণার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন বাবার কাছ থেকে। ৪০ বছর আগে ১৯৮২ সালে তার বাবা বায়োকেমিস্ট সুনে বার্গস্টর্ম চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছিলেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানে বাবা-ছেলের নোবেল কীর্তি বিশ্বে এই প্রথম। ২০০৪ সালে প্যাবোর বাবা মারা যান।
৬৭ বছর বয়সী প্যাবো পরে জেনেছিলেন, তার বাবার দ্বৈত জীবন সম্পর্কে। সুনে বার্গস্টর্ম ছেলের অস্তিত্ব তার অন্য পরিবারের কাছে গোপন করেছিলেন।
মানুষের উৎপত্তি কীভাবে এবং তাদের পূর্বপুরুষের সঙ্গে বর্তমান আধুনিক মানুষ কীভাবে সম্পর্কিত এই প্রশ্নগুলো সব সময় মানুষকে ভাবিয়েছে। প্যাবো তার মানব বিবর্তন সম্পর্কিত আবিষ্কার থেকে সেই কৌতূহল মেটানোর প্রক্রিয়াকে আরও এগিয়ে নিয়েছেন। প্যাবোর এই আবিষ্কার মানুষের বিবর্তনীয় ইতিহাস এবং কীভাবে মানুষ পৃথিবীর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে তা বের করতে সাহায্য করবে বলে মনে করে নোবেল কমিটি।
সুইডেনের স্টোকহোমে ১৯৫৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন প্যাবো। তার মা এস্তোনীয় রসায়নবিদ কারিন প্যাবো। বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্যাবো প্রাণরসায়ন বিষয়ে পড়ালেখা করেন। সাধারণ ঠান্ডার উপসর্গ সৃষ্টি করে এমন অ্যাডেনো ভাইরাসের ডিএনএ বিষয়ে ১৯৮৬ সালে স্টকহোমের উপসালা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন তিনি।
এরপর তিনি জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয় ও পরে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্কলেতে পোস্ট-ডক্টরাল সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৯০ সালে মিউনিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত হন। প্যাবো ১৯৯৯ সালে ‘বিবর্তনীয় নৃবিজ্ঞান’-এর জন্য ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট, লিপজিগ প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে সেখানেই কর্মরত তিনি। ২০২০ সাল থেকে প্যাবো জাপানের ওকিনাওয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে একজন সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
২০১৪ সালে উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্মৃতিচারণ করে প্যাবো বলেছিলেন, উপসালা বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ান্ডারথাল মানুষের জিনোম গবেষণার অনুপ্রেরণা তিনি পেয়েছেন বাবার কাছ থেকে। পরে জানতে পারেন, বাবার দুটি পরিবার সম্পর্কে। যদিও বাবার অন্য পরিবারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
প্যাবো বলেছিলেন, আমি সুনে বার্গস্টর্মের গোপন বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের সন্তান হিসেবে বেড়ে উঠেছি। প্রাপ্ত বয়সে বাবাকে মাঝে মধ্যে দেখেছি।