বিশ্বে ক্ষুধায় প্রতি চার সেকেন্ডে একজন মারা যাচ্ছেন
খোলা চিঠিতে সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতি দ্রুত লাগামহীন হচ্ছে। এর লাগাম টানা জরুরি
একদিকে করোনা মহামারীর জের, অন্যদিকে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে বৈশ্বিক মন্দার। বৈশ্বিক খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। সরবরাহ কমে আসায় দাম বেড়েছে খাদ্যপণ্যের।
এই পরিস্থিতিতে দেশে দেশে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য আগের তুলনায় বেড়েছে। বাড়ছে মৃত্যুও। বর্তমান বিশ্বে প্রতি চার সেকেন্ডে একজন ক্ষুধার্ত মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে এসব মৃত্যু ঠেকানো ও ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী গড়তে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন সামনে রেখে মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি প্রকাশ করেছে ৭৫ দেশের মানব উন্নয়নকাজে জড়িত ২৩৮টি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। এ তালিকায় অক্সফাম, সেভ দ্য চিলড্রেন, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের মতো বিশ্বখ্যাত সংস্থাও রয়েছে।
খোলা চিঠিতে ক্ষুধায় প্রাণ হারানো মানুষের এই সংখ্যার কথা জানিয়ে সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক ক্ষুধা পরিস্থিতি দ্রুত লাগামহীন হচ্ছে। এর লাগাম টানা জরুরি।
চিঠিতে এসব সংস্থার ভাষ্য, বর্তমান বিশ্বের প্রায় ৩৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ চরম ক্ষুধার সঙ্গে লড়ছে। এই সংখ্যা ২০১৯ সালের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি। বিশ্বে চরম ক্ষুধা নিয়ে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে ১৯ হাজার ৭০০ মানুষ। সেই হিসাবে, প্রতি চার সেকেন্ডে একজনের মৃত্যু হচ্ছে।
উন্নয়ন সংস্থাগুলো বলেছে, একুশ শতকে এসে বিশ্বজুড়ে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে, বিশ্বনেতারা নিশ্চয়ই এমনটা চাইবেন না। ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব গড়তে বিশ্বনেতাদের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও এই শতকে সোমালিয়া দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ৪৫টি দেশের ৫ কোটি মানুষ অনাহারের মুখে রয়েছে।
খোলা চিঠিতে ইয়েমেন ফ্যামিলি কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে সই করেছেন মোহান্না আহমেদ আলী আল–জাবালি। তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে কৃষি খাত আধুনিক হয়েছে। ফসল উৎপাদন ও কাটার ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এরপরও একুশ শতকে এসে আমরা খাবারের সংকটে ভুগছি। বিভিন্ন জায়গায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। এটা দুঃখজনক।
তিনি আরও বলেন, সংকটময় এই পরিস্থিতি একটি দেশ, অঞ্চল কিংবা মহাদেশে সীমাবদ্ধ, তা নয়। এটা পুরো মানবতার জন্যই অন্যায়।
সংকট নিরসনে জরুরি সহায়তা দিতে বিশ্বনেতাদের আহ্বান জানিয়ে আহমেদ আলী আল–জাবালি বলেন, এই পরিস্থিতিতে আমরা চুপ থাকতে পারি না, তাতে সংকট আরও বাড়বে। আমাদের অতিদ্রুত ক্ষুধার্ত মানুষের জীবন বাঁচাতে খাবার সরবরাহ করতে হবে। একই সঙ্গে তাঁরা যাতে ভবিষ্যতে নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের জীবন বাঁচাতে পারে, এ জন্য দীর্ঘ মেয়াদে সহায়তা দিতে হবে।