করোনায় আমেরিকানদের মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও মহামারী শেষ হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের একটি সমস্যা থাকলেও’ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হচ্ছে।

পরিসংখ্যান বলছে, করোনাভাইরাসে প্রতিদিন গড়ে চার শতাধিক বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রধান তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়াসুস বলেছিলেন, মহামারীর শেষ ‘দেখা যাচ্ছে’।

বিবিসি বলছে, সিবিএস টেলিভিশনের ‘সিক্সটি মিনিট’ অনুষ্ঠানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাইডেন বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র এখনও ‘অনেক কাজ’ করছে।

সাক্ষাৎকারটি রবিবার সম্প্রচারিত হলেও এর অংশবিশেষ ডেট্রয়েট অটো শো এর সময় ধারণ করা হয়েছিল, সেখানে জনতার মাঝে বাইডেনও উপস্থিত হয়েছিলেন।

সেখানে বাইডেন বলেছিলেন, ‘আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখেন কেউ মাস্ক পরেনি। সবাই বেশ ভালো আছে বলে মনে হচ্ছে। আমার মনে হয় এটি পরিবর্তিত হচ্ছে।’

মহামারী আমেরিকানদের মানসিকতার ওপর একটি ‘গভীর’ প্রভাব রেখে গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি।

বাইডেন বলেন, ‘এটি সবকিছু পরিবর্তন করে দিয়েছে। নিজেদের, পরিবারের, জাতির অবস্থা সম্পর্কে, সমাজের অবস্থা সম্পর্কে মানুষের মনোভাব পাল্টে দিয়েছে। এটি খুব কঠিন সময় ছিল। খুব কঠিন।’

কিন্তু সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের গণমাধ্যমকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, প্রেসিডেন্টের মন্তব্যগুলো নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনার ইঙ্গিত দিচ্ছে না এবং চলতি কভিড-১৯ জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা তুলে নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই।

আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জনস্বাস্থ্য জরুরি অবস্থার মেয়াদ ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ান, এটি ২০২০ এর জানুয়ারি থেকে জারি করা আছে।

শীর্ষ রিপাবলিকান নেতারা বাইডেনের মন্তব্যের সমালোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও টুইটে লিখেছেন, তার কভিড টিকার নির্দেশনার মাধ্যমে লাখো স্বাস্থ্যবান সেনাকে সামরিক বাহিনী থেকে বের করে দেওয়ার পর এখন বাইডেন বলেছেন ‘মহামারী শেষ হয়েছে’।

সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বিশ্ব মহামারী পরিস্থিতি কাটিয় ওঠা শুরু করেছে, এমন সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে তারা মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানোও অব্যাহত রেখেছেন।

এ পর্যন্ত করোনায় ১০ লাখের বেশি আমেরিকানের মৃত্যু হয়েছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এখন সাত দিনের গড় মৃত্যু ৪০০’র বেশিতে দাঁড়িয়েছে। আর গত সপ্তাহে তিন হাজার জনের বেশি মারা গেছে।

২০২১ সালের জানুয়ারিতে ভাইরাসটি একটি সপ্তাহে ২৩ হাজার জনের বেশি মানুষের প্রাণ নিয়েছিল। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশের পুরোপুরি টিকা নেওয়া আছে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যকর্মী, সামরিক বাহিনীর সদস্য ও বিমানযোগে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী বিদেশি নাগরিকদের জন্য এখনও দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী টিকা নেওয়ার বাধ্যবাধকতা বজায় আছে।

বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ৬৫ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, তারপর ভারত ও ব্রাজিলে।