যুক্তরাষ্ট্রে আদালতের রায়ের পর সংকটে গর্ভবতীরা
উইসকনসিনে এক নারীর মিসক্যারেজ হয়েছিল। জরুরি বিভাগের কর্মীরা গর্ভ থেকে মৃত ভ্রুণ বের করেননি
যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট গর্ভপাতের অধিকার কেড়ে নেওয়ার পর এক নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছেন চিকিৎসক ও রোগীরা। হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা পেতে অনেক সময় ভুগতে হচ্ছে গর্ভবতীদের। আর রোগীর জীবন সংকট জেনেও চিকিৎসকরা পড়ছেন দ্বিধায়।
গর্ভের শিশুর হৃদস্পন্দন শোনার পর এক গর্ভবতীর চিকিৎসা করাতে ঘাবড়ে গিয়েছিলেন তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক। কারণ চিকিৎসকের আশঙ্কা ছিল, এই চিকিৎসা হয়ত গর্ভপাতে নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন হয়ে যাবে। ফলে জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ করা ওই নারীকে ইউনিভার্সিটি অফ মিশিগান হসপিটালে জরুরি চিকিৎসা বিভাগে ভর্তি হতে হয়।
উইসকনসিনে এক নারীর মিসক্যারেজ হয়েছিল। জরুরি বিভাগের কর্মীরা কেউ গর্ভ থেকে মৃত ভ্রুণ বের করে আনেননি। যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর তাদের ভয় ছিল, হয়ত আইনি ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে হবে। তাতে করে ভুগতে হয়েছিল ওই নারীকে, ১০ দিনের বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছিল তার।
ওয়াশিংটন পোস্ট লিখেছে, মিসক্যারেজ হলে, এক্টোপিক গর্ভাবস্থার বেলায় এবং গর্ভকালে অন্য যে কোনো জটিলতায় সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাছবিচার করা হচ্ছে এখন। সেবা দিতে দেরি করা হচ্ছে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকারও করা হচ্ছে।
নতুন আইন যুক্তরাষ্ট্রের যেখানে যেখানে চালু হয়েছে, সেখানকার চিকিৎসকদের মতে, এতে করে ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রসূতির স্বাস্থ্য।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, ৩০ শতাংশ গর্ভবতীর বেলাতেই মিসক্যারেজ ঘটতে পারে। এসব ক্ষেত্রে মায়ের গর্ভে ভ্রণের মৃত্যু ঘটে হঠাৎ করে। মিসক্যারেজ রোগীর চিকিৎসা আসলে গর্ভপাত করানো রোগীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার মতোই।
দেখা যায়, একই ধরনের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অস্ত্রোপচারের বেলাতেও একই কাজ করতে হয়। ডাইলেশন এবং কিউরটেজ অথবা ডিঅ্যান্ডসি, যাতে জরায়ু প্রশস্ত করে ভ্রণ বের করে নিয়ে আসা হয়।
কখনও কখনও মিসক্যারেজ হলে আলাদা চিকিৎসার দরকার হয় না। শরীর নিজেই এই ধকল থেকে সেরে উঠতে পারে। তবে অন্যসব ক্ষেত্রে চিকিৎসা না নিলে সংক্রমণ ও রক্তক্ষরণের মতো নানা জটিলতা হতে পারে। তাতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
হিউসটনের ফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ রাশমি কুদেসিয়া বলেন, প্রসবের সময় আসার আগেই গর্ভপাত (মিসক্যারেজ) হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটতেই পারে। আমাদের এ কথা উপলব্ধি করা খুব জরুরি।
টেক্সাসে গত সেপ্টেম্বর থেকে গর্ভপাত করানো অবৈধ। কুদেসিয়া বলেন, ওষুধের দোকানে দাঁড়িয়ে থাকা এখন খুব ভয়ের ব্যাপার হয়ে গেছে। সেখানে সবার সামনে বলতে হচ্ছে, মিসক্যারেজ হওয়ার কথা। বলতে হচ্ছে কোনো হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে না।
কোনো কোনো আইনজীবী চিকিৎসকদের পরামর্শ দিচ্ছেন, এ ধরনের পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত দুজন চিকিৎসক যেন সঙ্গে থাকেন, যারা লিখিত দেবে যে রোগীর জীবন সংকটাপন্ন। আবার কোনো কোনো আইনজীবী এ ধরনের পরামর্শকে নাচক করে দিয়ে বলছেন, এমন কোনো কিছু লিখিত নেওয়ার দরকার নেই।
লাইভ অ্যাকশন এবং লাইফনিউজ ডটকমের মতো গর্ভপাতবিরোধী সংগঠনগুলো বলছে, সুপ্রিম কোর্টের ওই রায়ের পরও এক্টোপিক গর্ভাবস্থা অথবা মিসক্যারেজের চিকিৎসা দিতে চিকিৎসকদের কোনো বাধা নেই।
অলাভজনক প্রতিষ্ঠান প্রো-লাইফ অ্যাকশন লিগের নির্বাহী পরিচালক এরিক শিডলার বলেন, এই চিকিৎসা পদ্ধতি একদমই বৈধ এবং তা গর্ভপাত বলে গণ্য হবে না। কোনো চিকিৎসকই বলতে পারবেন না যে তারা এসব জানেন না।