উহানের মার্কেট থেকেই ছড়ায় করোনা
প্রথমদিকে করোনা আক্রান্তদের অবস্থান ছিল ওই মার্কেটের প্রাণকেন্দ্রে এবং তারা ওই মার্কেটের জীবন্ত পশু ক্রেতা-বিক্রেতা
চীনের উহানের হুয়ানান সি ফোড মার্কেটই সম্ভবত করোনাভাইরাসের কেন্দ্রস্থল ছিল বলে নতুন গবেষণায় দাবি করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৬ জুলাই) প্রকাশিত সম্পূর্ণ ভিন্ন পদ্ধতিতে করা দুটি নতুন গবেষণা প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। খবর সিএনএন।
গত জুনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা মহামারীর সম্ভাব্য উৎস সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার সুপারিশ করেছিল। সম্ভাব্য উৎসের মধ্যে ল্যাব থেকে লিক হওয়া ভাইরাসের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গবেষণা দুটি প্রিন্টের আগে গত ফেব্রুয়ারিতে অনলাইনে পোস্ট করা হয়েছিল। তবে পিয়ার রিভিউর পর মঙ্গলবার সায়েন্স জার্নালে এগুলো প্রকাশিত হলো।
একটি গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ম্যাপিং টুলস এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রতিবেদন ব্যবহার করে স্থান ও পরিবেশগত বিশ্লেষণ করেন।
এতে দেখানো হয়, প্রকৃত উৎস অস্পষ্ট থাকলেো করোনাভাইরাস সম্ভবত ২০১৯ সালের শেষ দিকে উহানের সি ফোর্ড মার্কেটে বিক্রিত জীবিত পশুর মধ্যে ছিল। এই মার্কেটে ওই পশুগুলোকে একত্রে রাখা হতো, যেখানে খুব সহজে এক পশু থেকে অন্য পশুতে জীবাণু যেতে পারতো। তবে গবেষণায় ঠিক কোন প্রাণি অসুস্থ ছিল, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি।
গবেষকরা বলছেন, প্রথমদিকে করোনা আক্রান্তদের অবস্থান ছিল ওই মার্কেটের প্রাণকেন্দ্রে এবং তারা ওই মার্কেটের জীবন্ত পশু ক্রেতা-বিক্রেতা। পশুদের মধ্যে দুটি ভিন্ন ভাইরাস ছড়িয়েছিল, যা পরে মানুষের মধ্যে দেখা হয়।
গবেষণায় বলা হয়, ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বরের আগে শনাক্ত আট করোনা কেসের সবগুলোই মার্কেটের পশ্চিম পাশ থেকে উৎপত্তি হয়েছিল, যেখানে স্তন্যপায়ী প্রাণীও বিক্রি হতো।
গবেষণায় মার্কেটের পাঁচটি স্টলের কথা বলা হয়েছে, যেখানে জীবিত প্রাণী বা সদ্য জবাই করা প্রাণী বিক্রি হতো এবং সেখানকার মানুষের মধ্যেই প্রথম করোনা শনাক্ত হয়।
স্ক্রিপস রিসার্চের ইমিউনোলোজি অ্যান্ড মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক গবেষণার সহলেখক ক্রিস্টিয়ান অ্যান্ডারসেন বলেন, গবেষণায় ক্লাস্টারিং খুব সুনির্দিষ্ট ছিল। করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে ম্যাপিং থেকে যে ‘বিশেষ’ ধরনটির উদ্ভূত হয়েছিল তা খুব স্পষ্ট ছিল।
গবেষণার আরেক সহলেখক অ্যারিজোনা ইউনিভার্সিটির ইকোলজি অ্যান্ড ইভোল্যুশনারি বায়োলজি ডিপার্টমেন্টের প্রধান ওরোবে বলেন, এটি একটি ইঙ্গিত যে ভাইরাসটি মার্কেটে কাজ করা লোকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল এবং পরে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছিল… আশপাশের স্থানীয় কমিউনিটিতে ছড়ায়। ওই মার্কেটের পশু বিক্রেতারা যখন স্থানীয় দোকানে গিয়েছিল, তখন ওই দোকানগুলোতে যারা কাজ করেছিলেন তারা সংক্রমিত হয়েছিলেন।
অন্য গবেষণাটি করা হয় মলিকুলার অ্যাপ্রোচে, যেখানে কখন প্রথম করোনা সংক্রমণ পশু থেকে মানুষের মধ্যে ছড়িয়েছিল তা অনেকটা স্পষ্ট করে। এই গবেষণায় দেখা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাথমিক ধরনটি সম্ভবত ভিন্ন রূপে এসেছিল, যাকে বিজ্ঞানীরা ‘এ’ ও ‘বি’ নাম দিয়েছেন। এইগুলো মানুষের মধ্যে হওয়া অন্তত দুটি প্রজাতির সংক্রমণের ফল ছিল।
গবেষকদের ধারণা, ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বরের কাছাকাছি সময়ে প্রথম পশু থেকে মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ঘটেছিল এবং সেটি ‘বি’ ধরন থেকে হয়েছিল। গবেষকরা ‘বি’ ধরনটি কেবল সেসব মানুষের মধ্যে পেয়েছেন, যাদের হুয়ানান মার্কেটের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা ছিল।