পরীক্ষামূলক ওষুধে পুরোপুরি ক্যান্সার নির্মূল
২০১৯ সালে রেকটাল ক্যান্সারে আক্রান্ত শাশা রথের ওপর ওষুধটি প্রথম প্রয়োগ করা হয়। এখন তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ
ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে আসছেন। এবার যুক্তরাষ্ট্রে এমনই একটি গবেষণায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য পাওয়া গেছে।
ক্যান্সারে আক্রান্ত কয়েকজন রোগীকে প্রায় ছয় মাস ধরে ‘ডোসটারলিমাব’ নামে একটি ওষুধ পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয়। ওষুধটির জেরে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া রোগীদের প্রত্যেকেই সুস্থ হয়েছেন।
বিশ্বে এবারই প্রথম কোনো ওষুধে ক্যান্সারের রোগীদের পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেল বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইমস।
ডোসটারলিমাব এমন একটি ওষুধ, যেটিতে গবেষণাগারে তৈরি মলিকিউলস রয়েছে। এই মলিকিউলস মানুষের শরীরে বিকল্প অ্যান্টিবডি হিসেবে কাজ করে।
গবেষকরা নিউইয়র্ক টাইমসকে বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে ১৮ ক্যান্সার রোগীর ওপর ওষুধটি প্রয়োগ করা হয়েছিল। সবাই মলদ্বারের (রেকটাল) ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন। ছয় মাস ধরে প্রতি তিন সপ্তাহ পরপর ওষুধটি প্রয়োগের পর তাদের শারীরিক পরীক্ষায় দেখা হয় সবাই ক্যান্সারমুক্ত হয়েছেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারের চিকিৎসক লুইস এ ডিয়াজ জে বলেন, ক্যান্সারের চিকিৎসা-সংক্রান্ত গবেষণায় এর আগে এমন অর্জন আর দেখা যায়নি। পরীক্ষামূলকভাবে ওষুধ প্রয়োগের ট্রায়ালে অংশ নেওয়া সব রোগীর ক্যান্সার মুক্তির ঘটনা ইতিহাসে এটাই প্রথম।
তবে গবেষকরা বলছেন, শতভাগ সাফল্য পাওয়া গেলেও এই পরীক্ষা খুবই অল্পসংখ্যক মানুষের ওপর চালানো হয়েছে। তাই আরও বড় পরিসরে ওষুধটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে হবে।
তবে ক্যান্সার নিরাময় নিয়ে এই পরীক্ষা ইতিমধ্যে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার কোলন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অ্যালান পি ভেনোক বলেন, ওষুধ প্রয়োগের পর প্রত্যেক রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার ঘটনা অভাবনীয়। এ ছাড়া ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রোগীরা উল্লেখযোগ্য কোনো শারীরিক জটিলতার শিকার হননি, এটাও বড় একটি অর্জন।
এ গবেষণা নিবন্ধ নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে প্রকাশিত হয়েছে। স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ও গবেষণাপত্রটির সহলেখক চিকিৎসক আন্দ্রেয়া সেরেক বলেন, ট্রায়ালে অংশ নেওয়া রোগীরা যখন তাদের ক্যান্সার মুক্তির খবর জানতে পারলেন, সেটার চেয়ে আনন্দের মুহূর্ত আর ছিল না। অনেকে খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলেন।