ট্যাবলেট খেলেই সাপের বিষ পানি!
সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় ‘ভ্যারেসপ্ল্যাডিব’ নামের এক ট্যাবলেট প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে
সাপের বিষের প্রতিক্রিয়ায় মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে বিজ্ঞানীরা ওষুধ আবিষ্কার করেছেন। আর এ ওষুধের পরীক্ষামূলক ট্রায়ালে সাফল্যও মিলেছে পশ্চিমবঙ্গে।
ভারতের বেশিরভাগ সাপে কাটা রোগীর মৃত্যু হয় অনুন্নত রাস্তাঘাটের কারণে হাসপাতালে দেরিতে পৌঁছনোর কারণে। এখন পর্যন্ত সাপে কাটা রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য একমাত্র প্রতিষেধক অ্যান্টি-ভেনম, যা স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে রোগীর দেহে প্রয়োগ করা হয়। খবর আনন্দবাজার পত্রিকা।
একমাত্র হাসপাতালেই পাওয়া যায় এই অ্যান্টি-ভেনম। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রয়োজনীয় অ্যান্টি-ভেনম পাওয়া যায় না। এখন সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায় ‘ভ্যারেসপ্ল্যাডিব’ নামের এক ট্যাবলেট প্রয়োগের কথা বলা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, সাপে কাটা রোগীর প্রাণ বাঁচানোর জন্য সহায়ক হতে পারে এ ট্যাবলেট।
ই-লাইফ নামে একটি জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, ২০০০ সালের হিসাব ধরে গত ২০ বছরে ভারতে শুধু ১২ লাখ মানুষ মারা গেছেন সাপের কামড়ে। সর্প দংশনে ভারতে বার্ষিক মৃত্যু হয় গড়ে ৫৮ হাজার মানুষের। সাপের কামড়ে মৃতের প্রায় পঞ্চাশ শতাংশের বয়স ৩০ থেকে ৬৯-এর মধ্যে এবং এক-চতুর্থাংশ শিশু।
ভারতে সর্পদংশনে বেশিরভাগ মানুষ মারা যায় কোবরা গ্রুপের গোখরা, কেউটে, রাসেলস ভাইপার এবং ক্রেইট গ্রুপের কালাচ প্রজাতির সাপের কামড়ে। বর্ষাকালে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাপের কামড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাপের কামড়ের ঘটনা ঘটে পায়ে।
সাপের কামড়ের চিকিৎসায় ট্যাবলেট একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তবে বিষয়টি এমন নয় যে, অ্যান্টি-ভেনমের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, পশ্চিমবঙ্গে বর্তমানে অ্যান্টি-ভেনম তৈরি হয় না। ফলে এটি আনতে হয় ভারতের দক্ষিণের রাজ্যগুলো থেকে। আর এতেই সমস্যা বাড়ে। দক্ষিণ ভারতের সাপের প্রোটিন আর পশ্চিমবঙ্গের সাপের প্রোটিনের মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে। এই অ্যান্টি-ভেনম অনেক মাত্রায় দিলেও তা অনেক সময় কাজ করে না। তাই এই ট্যাবলেট দিয়ে যদি অ্যান্টি-ভেনম দেওয়া যায় তাহলে মৃত্যু আটকানো অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হবে।
জানা গেছে, ট্যাবলেটে রয়েছে মেটাজিনসিন গ্রুপের মেটালোপ্রোটিনেজ ইনহিবিটর, যা জিঙ্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় সাপের বিষ থাকা মেটালোপ্রোটিনেজ এনজাইমকে শরীরে কাজ করতে দেয় না। এর ফলেই মানবদেহে বিষের তীব্রতা কিছুটা পরিমাণে হ্রাস পায়।
পূর্ব ভারতে প্রথমবার কলকাতার ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করা হয় ‘ভ্যারেসপ্ল্যাডিব’ ট্যাবলেট।
ট্রায়ালের মুখ্য গবেষক চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রথমে এই ট্রায়ালে দেখা হয়, অ্যান্টি-ভেনমের সঙ্গে এই ট্যাবলেটের ব্যবহার করা হলে সেটা কতটা কাজ করছে। শুধু অ্যান্টি-ভেনম ব্যবহার করলে যতটা কাজ হয়, ট্যাবলেট আর অ্যান্টি-ভেনম একসঙ্গে দেওয়া হলে কি তার থেকে বেশি কাজ হচ্ছে? যদি বেশি হয়, তা হলে বুঝতে হবে এই ট্যাবলেট কাজ করছে।’
জানা গেছে, চলতি মাসের ১০ তারিখ মধ্যরাতে ২১ বছর বয়সী সর্প দংশিত এক যুবক ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আসেন। ওই যুবকের সব পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে চিকিৎসকরা ‘ভ্যারেসপ্ল্যাডিব’ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
গবেষক চিকিৎসক পার্থপ্রতিম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘ওই ট্যাবলেটের সঙ্গে মাত্র ২০ ভায়াল অ্যান্টি-ভেনমেই দারুণ কাজ হয়েছে। আগে যেখানে ৩০ থেকে ৪০ ভ্যায়াল অ্যান্টি ভেনম দেওয়ার পরেও রোগীর মৃত্যু হয়েছে।’
ভ্যাকসিন ফিসিসিলেটর স্নেহেন্দু কোনার বলেন, ‘ওই ট্যাবলেটের প্রথম ধাপ ও দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়াল হয়েছে পাশ্চাত্যে। দেখা গেছে কার্যকারিতা ৮০ শতাংশ। আমাদের এখানে প্রথম ট্রায়ালে যথেষ্ট আশানুরূপ ফল পাওয়া গেছে, আমরা যথেষ্টই আশাবাদী।’