নিজের দোষ নাকি জিন, স্থূলতায় কে দায়ী
মানুষ শুধু খেলেই মোটা হবে এমন নয়। অনেকেই জিনগত কারণে মোটা হয়ে থাকেন
স্থূলতার শিকার মানুষকে সমাজ ভালো চোখে দেখে না। তার নিজের দোষ বা খাই খাই স্বভাবই শরীর নিয়ন্ত্রণহীন হওয়ার কারণ বলে ধারণা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
তবে যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, মানুষ শুধু খেলেই মোটা হবে এমন নয়। অনেকেই জিনগত কারণে মোটা হয়ে থাকেন। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে ওজন বাড়ে অসুস্থতার কারণে।
বিবিসি বলছে, অনেকের জন্মগতভাবে ওজন বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাদের জিনেই ত্রুটি থাকে। ফলে তাদের পেটে পর্যাপ্ত খাবার থাকার পরও মস্তিষ্ক বারবার ক্ষুধার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
সব সময় নিজেকে ক্ষুধার্ত মনে করা কেভিন জ্যাকসন বলছেন, ‘আমি পেট ভরে খেলাম। ৫-১০ মিনিট পরই আমার মনে হয় যেন কিছুই খাইনি। তখন একটি স্যান্ডউইচ, আধা ঘণ্টা পরে এক বাটি সিরিয়াল এমনকি ঘুমানোর আগে আরেক বাটি খেতে হয়। তা না হলে রাতে উঠে কিছু খেতেই হবে।’
এ সমস্যা থেকে বাঁচতে কেভিন তার ডিএনএ পরীক্ষা করাচ্ছেন। যুক্তরাজ্যের লুটনে তার মতো শতাধিক স্থূল ব্যক্তির ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এর মাধ্যমে তাদের শরীরে ত্রুটিপূর্ণ জিন আছে কি না তা খুঁজে বের করবেন বিজ্ঞানীরা।
এ বিষয়ের গবেষক ড. বিনীশ মাসুদ বলেন, ‘কতজন জিনগত কারণে; কতজন পারিপার্শ্বিক কারণে মোটা হচ্ছে, তা বের করতে পারবো বলে আশা করছি। ফলে বোঝা সহজ হবে, মোটা হওয়া কোনো দোষ নয় বরং হরমোনগত সমস্যা। হরমোনের ভারসাম্যের অভাবেই তাদের অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগে এবং তারা খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না।’
জিনগত স্থূলতা নিয়ে গবেষণায় এরই মধ্যে বিজ্ঞানীরা শতশত ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা করেছেন। গত ২৫ বছরে তারা এমন ৪০টি জিন চিহ্নিত করেছেন, যা স্থূলতার সাথে সম্পর্কিত।
কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক সাদাফ ফারুকী বলেন, ‘কিছু মানুষ সত্যিই অনেক খেতে পারেন। কিন্তু কেউ কেউ যত বেশিই খাক, কখনো মোটা হন না। জিনগত কারণেই এটি হয়। এসব জিন আমাদের মস্তিষ্ক ও ক্ষুধাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আগে ভাবা হতো, আমরা কতটা খাব, তা আমরাই নিয়ন্ত্রণ করি। আসলে ব্যাপারটা এত সরল নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘জিনগুলো এবং মস্তিষ্কের সার্কিটগুলো কীভাবে কাজ করে, তা অনেক দিন ধরেই আমরা জানার চেষ্টা করছি। একা সাথে এর ওষুধ কী হতে পারে তাও বের করার চেষ্টা চলছে। এখন আমরা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি যে, এর নতুন কিছু চিকিৎসা বের হচ্ছে।’
স্থূলতার জেনেটিক কারণ জানা গেলে এর ভালো চিকিৎসাও সম্ভব হবে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা। যেমনটি কেভিন জ্যাকসন বলছেন, ‘মানুষ কেন মোটা হচ্ছে, আসল কারণ জানতে পারলে সবাই বুঝবে, এটি তার দোষে হয়নি। তখন সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি নিশ্চয় বদলাবে।’