মাঙ্কিপক্স চেনার উপায়, রোগটিতে মৃত্যুঝুঁকি কতটা
মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতটাই ভয়ঙ্কর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে
করোনা মহামারীর মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে বিরল একটি রোগ মাঙ্কিপক্স। ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, স্পেন, পর্তুগালসহ ইউরোপ এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রোগটি ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে।
নতুন রোগের এই প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের দেশগুলোর স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
মাঙ্কিপক্সের লক্ষণ
মাঙ্কিপক্সের অসুস্থতা প্রায়ই সাধারণ ফ্লুজনিত উপসর্গের মতোই। জ্বর, পেশীতে ব্যথা, ক্লান্তি, গলা ফোলা দিয়ে শুরু হয়। পরে মুখসহ গোটা শরীরে চিকেনপক্সের মতো র্যাশ দেখা দেয়। অনেক সময় আকারে বড় বসন্তের মতো গায়ে গুটি গজিয়ে উঠতে পারে।
চিকেনপক্স ও মাঙ্কিপক্সের মধ্যে মূল পার্থক্য হলো- মাঙ্কিপক্সে শরীরে ওঠা চামড়ার গোটা ফুলে যায়। কিন্তু চিকেনপক্সে ততটা ফোলে না।
বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে মাঙ্কিপক্স অনেকটা জল বসন্তের ভাইরাসের মতো। পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার নিরক্ষীয় বনাঞ্চলে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
মাঙ্কিপক্স রোগটি সমকামী পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি ছড়াচ্ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যে তথ্য দিয়েছেন, তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা খতিয়ে দেখার কথা জানিয়েছে। সংস্থার সহকারী মহাপরিচালক সোসে ফল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনকারী পুরুষের মধ্যে আমরা মাঙ্কিপক্সের সংক্রমণ বেশি দেখছি। এই নতুন তথ্যের বিষয়টি আমাদের আরও ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশে স্থানীয় সংক্রমণের বিষয়টিও ভালোভাবে বুঝতে হবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা সিডিসি বলছে, ‘যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে’ বেশিরভাগ মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে।
মাঙ্কিপক্সের একটি রূপ এতটাই ভয়ঙ্কর যে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ১০ শতাংশের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
করণীয়
মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হওয়ার কোনো চিকিৎসা নেই। আক্রান্ত বেশিরভাগ রোগী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে যান। তবে যেকোনো ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মতোই উপযুক্ত পদক্ষেপ নিয়ে এর প্রকোপ রোধ করা যায় বলে মনে করেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত সাধারণ জীবাণুনাশই মাঙ্কিপক্সের ভাইরাসটিকে মারতে যথেষ্ট। ভাইরাসটি মানুষের শরীরের বিভিন্ন তরলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে কিংবা আক্রান্ত রোগীর পোশাক ভাগাভাগিতেও ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে। এজন্য পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যে, প্রতি বছর আফ্রিকার প্রায় ডজনখানেক দেশে মাঙ্কিপক্স সংক্রমণের খবর আসে। বেশিরভাগই কঙ্গোতে, যেখানে বছরে প্রায় ছয় হাজার মানুষ শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়া যায় এবং নাইজেরিয়ায় এ সংখ্যা কমপক্ষে তিন হাজার।
১৯৫৮ সালে বিজ্ঞানীরা প্রথম রোগটি শনাক্ত করেন। তারা তখন গবেষণায় বানরদের মধ্যে ‘পক্স-সদৃশ’ রোগের অস্তিত্ব টের পান এবং পরে এটি মাঙ্কিপক্স নামকরণ করা হয়। মানবদেহে এর সংক্রমণ ঘটে ১৯৭০ সালে। কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি নয় বছর বয়সী একটি ছেলে প্রথম মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত হয়।