৮০ শতাংশ ভারতীয় ছেলেসন্তান চান
প্রায় ৮০ শতাংশ ভারতীয় বলেছেন, তারা নিজেদের জীবদ্দশায় অন্তত একটি ছেলেসন্তান চান
ভারতের জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হার উন্নত হয়েছে। তবে দেশটির জনসংখ্যার একটা বড় অংশ এখনো ছেলেসন্তান চান।
জনসংখ্যা নিয়ে সরকারের ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভে (এনএইচএস) এমন তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জরিপে অংশগ্রহণকারী প্রায় ৮০ শতাংশ বলেছেন, তারা নিজেদের জীবদ্দশায় অন্তত একটি ছেলেসন্তান চান। এটি পারিবারিক পর্যায়ে বিস্তৃতভাবে ভারত সরকারের পরিচালিত জরিপ।
ভারতের সামাজিক প্রথা অনুসারে, ছেলেসন্তানেরা বংশগত উপাধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন। বৃদ্ধ মা-বাবার দেখাশোনার দায়িত্ব নেন। অন্যদিকে কন্যাসন্তানরা বিয়ের পর অন্য পরিবারে চলে যান। তাদের বিয়েতে যৌতুক দিতে হয়। এসব কারণে ছেলেসন্তানের আকাঙ্ক্ষা বেশি।
জরিপ পরিচালনাকারীরা বলছেন, এ ধরনের মনোভাবের জন্য ভারতের জনসংখ্যায় নারীর তুলনায় পুরুষের আনুপাতিক হার বেশি। এটি ভারতের জন্য লজ্জার।
ভারতের জনসংখ্যা জরিপ বলছে, প্রায় ১০০ বছর ধরে দেশটিতে নারীর তুলনায় পুরুষ বেশি। ২০১১ সালে পরিচালিত সর্বশেষ জরিপ অনুসারে প্রতি ১ হাজার পুরুষের বিপরীতে নারীর সংখ্যা ৯৪০। একই বছর প্রতি ১ হাজার ছেলেশিশুর বিপরীতে মেয়েশিশুর সংখ্যা ৯১৮।
২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ভারতে ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের জরিপ পরিচালিত হয়। এতে আগের বছরের তুলনায় দেশটির জনসংখ্যায় নারী ও পুরুষের আনুপাতিক হারে উন্নতি দেখা গেছে। জরিপে এই প্রথমবারের মতো ভারতে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি দেখা গেছে।
তবে জরিপ বলছে, ভারতীয় সমাজে এখনো পুরুষের প্রাধান্য রয়েছে। জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৬ শতাংশ পুরুষ ও ১৪ শতাংশ নারী বলছেন, তারা মেয়েসন্তানের চেয়ে ছেলেসন্তান বেশি চান। ২০১৫-১৬ সালে জরিপে অংশগ্রহণকারী ১৮ দশমিক ৫ শতাংশ নারী ও ১৯ শতাংশ পুরুষ বলেছেন, তারা ছেলেসন্তান বেশি চান। অর্থাৎ ছেলে বা মেয়েসন্তান নিয়ে মনোভাবে কিছুটা বদল এসেছে।
অনেক দম্পতি ছেলেসন্তানের আশায় একের পর এক মেয়েসন্তানের জন্ম দিয়ে থাকেন। তবে এখন এ ভাবনায় বদল এসেছে। ৩২ বছর বয়সী ইন্দ্রানী দেবীর তিনটি মেয়েসন্তান। দিল্লির এ গৃহকর্মী বিবিসিকে বলেন, ‘দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সম্পূর্ণ পরিবার চেয়েছিলাম। তবে ঈশ্বরের পরিকল্পনা ছিল আলাদা। তাই আমার তিন সন্তানই মেয়ে। আমার স্বামী বাসচালক। আমরা আর সন্তানের ভরণপোষণ করতে পারব না। এজন্য ছেলের আশায় আর সন্তান নিতে চাই না।’
ইন্দ্রানীর মতো ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারী, যাদের বয়স ১৫ থেকে ৪৯ বছরের মধ্যে, তাদের দুই মেয়েসন্তান রয়েছে। তবে কোনো ছেলেসন্তান নেই। এই ৬৫ শতাংশ বিবাহিত নারী বলেছেন, তারা আর কোনো সন্তান চান না। ছয় বছর আগে এ রকম ইচ্ছা পোষণ করেন, এমন বিবাহিত নারীর সংখ্যা ছিল ৬৩ শতাংশ।
ছেলেদের তুলনায় বেশি মেয়েসন্তান চান, এমন মা-বাবার সংখ্যা ২০১৫-১৬ সালে ছিল ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এই হার বেড়ে ৫ দশমিক ১৭ শতাংশে পৌঁছেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে প্রজননের হার কমে যাওয়ার পেছনে এটি একটি কারণ হতে পারে। নগরায়ণ, নারী সাক্ষরতার হার বেড়ে যাওয়া, জন্মনিরোধকের ব্যবহার বেড়ে যাওয়া- এসব কারণে ভারতে প্রজনন ২ শতাংশ। এ হার আরও কমে গেলে ভারতের জনসংখ্যার হার আশঙ্কাজনকভাবে কমতে শুরু করবে।
১৩০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারতে প্রজননের হার এভাবে কমাটা খুব বেশি উদ্বেগের হবে না। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সুস্থ জনসংখ্যার বৃদ্ধির জন্য ভারতকে লিঙ্গের আনুপাতিক সমতা বজায় রাখতে হবে।