অটিজম শনাক্তে অভিনব আবিষ্কার
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের আবিষ্কৃত নতুন টুল এসএসিএস। এর দুটি অংশ রয়েছে।
শিশুর অটিজম শনাক্তে বর্তমানে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা চলমান রয়েছে। এর সবগুলোই খুব শুরুতে অটিজম শনাক্তে সফল নয়। এম-চ্যাট (দ্য মোডিফাইড চেকলিস্ট ফর অটিজম ইন টডলার্স) পরীক্ষার মাধ্যমে ৪ থেকে ৬ বছর বয়সীদের মধ্যে অটিজম শনাক্ত করা যায়। এটিই এতদিন পর্যন্ত সেরা পদ্ধতি।
তবে অস্ট্রেলিয়ার গবেষকরা দাবি করেছেন, শিশুদের অটিজম শনাক্তে নতুন একটি কৌশল অবলম্বন করে তারা ভালো ফল পেয়েছেন। নতুন এ স্ক্রিনিং টুল ব্যবহার করে ১২ থেকে ২৪ মাস বয়সীদের মধ্যে অটিজম শনাক্তে সফলতা এসেছে। অর্থাৎ প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর চেয়ে তারা তিন বছর আগে শিশুদের মধ্যে অটিজম শনাক্ত করতে পারছেন।
ডয়েচে ভেলের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার লা ট্রোব ইউনিভার্সিটির গবেষকরা পাঁচ বছরে ১৩ হাজার ৫০০ শিশুর ওপর গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য দিয়েছেন। তারা বলছেন, আবিষ্কৃত নতুন টুলটি যেসব শিশুর অটিজম নেই বলেছিল, পরে দেখা যায় ১২ থেকে ২৪ মাস বয়সী ওই শিশুদের ৮৩ শতাংশের মধ্যে অটিজম রয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এটি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে তিন বছর আগে অটিজম শনাক্ত করতে পারছে। যত দ্রুত কোনো শিশুর অটিজম শনাক্ত হবে, সে শিশুর চিকিৎসা ফল তত ভালো হবে। জেএএমএ ওপেন নেটওয়ার্কে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান জোসেফিন বারবারো বলেন, ‘শিশুদের অটিজম কম বয়সে শনাক্ত হলে, স্কুলে যাওয়ার বয়সে তারা চিকিৎসায় ভালো সাড়া দেয়। ফলে মূলধারার বিদ্যালয়ে যেতে পারার সুযোগও তাদের জন্য বেশি থাকে। পরে শনাক্ত শিশুদের চেয়ে তাদের সহায়তাও কম লাগে।’
অটিজমকে অসুস্থতা বলে বিবেচনা করা হয় না। এটি শারীরিক এমন কোনো অবস্থাও নয় যা থেকে সুস্থ হওয়াই একমাত্র পথ। যার মধ্যে অটিজম রয়েছে, তা সারাজীবনই থাকবে। তবে অটিজমের শিকারদের সাথে অন্যদের মেলামেশা কঠিন, উজ্জ্বল আলো বা বেশি শব্দ তাদের মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি তৈরি করে।
অস্ট্রেলিয়ার গবেষকদের আবিষ্কৃত নতুন টুল এসএসিএস। এর দুটি অংশ রয়েছে- এসএসিএস-রিভাইসড আর অন্যটি হলো এসএসিএস-প্রিস্কুল। জোসেফিন বারবারো বলছেন, ১৩টি গবেষণায় দেখা গেছে, ‘লো রিস্ক কমিউনিটি সেটিংসে’ এমচ্যাট যেখানে ৬ শতাংশ ক্ষেত্রে সঠিক ফল দিয়েছে, সেখানে এসএসিএস-রিভাইসডের ক্ষেত্রে এ হার ৮৩ শতাংশ।
এসএসিএস আটটি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে ও বাংলাদেশ, চীন, ইতালি, জাপান, নেপাল, নিউজিল্যান্ড, পোল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন এবং যুক্তরাজ্যে এটি ব্যবহৃত হয়েছে।
গবেষক দলের প্রধান বারবারো চান এ টুল আরও বেশি করে ব্যবহৃত হোক। তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষিত প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতে এ টুল তুলে দিতে হবে। তাহলে তারা শিশুদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় অটিজমের স্ক্রিনিংও করতে পারবেন। এটি সম্ভব হলে দ্রুত অটিজম শনাক্তের ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটা পরিবর্তন আসবে।’
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন বলছে, পরবর্তী জীবনে অটিজম শনাক্ত কঠিন হয়ে যায়। কারণ রক্ত পরীক্ষার মতো এর কোনো মেডিকেল টেস্ট হয় না। চিকিৎসকরা সাধারণত একটি শিশুর বেড়ে ওঠা ও তার ব্যবহার দেখে অটিজমের বিষয়টি শনাক্ত করেন।