অকাল মেনোপজে হতে পারে ডিমেনশিয়া
এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কর্মকাণ্ড, ওজন ও ধুমপানের মতো অভ্যাস যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা করা দরকার
বয়স ৪০ পেরুনোর আগেই মেনোপজ হলে তা ৩৫ শতাংশের ক্ষেত্রে পরে স্মৃতিভ্রংশ বা ডিমেনশিয়ার কারণ হতে পারে বলে এক গবেষণা উঠে এসেছে। খবর সিএনএনের।
মেয়েদের ওভারি বা ডিম্বাশয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডিম্বাণু থাকে এবং পিরিয়ডের পর প্রতি মাসে ডিম্বাণু নিঃসৃত হয়। বয়স ৫০ পার হলে ডিম্বাণু শেষ হয়ে যায় এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, যেটিকে মেনোপজ বলা হয়।
কোনো নারীর ডিম্বাশয় হরমোন উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়ার কারণে ৪০ বছর বয়সের আগেই মাসিক চক্র থেমে গেলে তাকে অকাল মেনোপজ বলা হয়। কারও এমন হলে বুঝতে হবে স্বাভাবিক সময়ের অনেক আগেই তার মেনোপজ ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অফ হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস অফিস অন উইমেন হেলথের তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে নারীদের স্বাভাবিক মেনোপজের বয়স গড়ে ৫২ বছর। আর বাংলাদেশে তা ৫১ বছর বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ মেনোপজ সোসাইটি।
সিএনএন বলছে, ইউকে বায়োব্যাংকে সংরক্ষিত দেড় লাখের বেশি নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে অকাল মেনোপজের প্রভাব বোঝার চেষ্টা করেছেন গবেষকরা। এ মাসেই আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সম্মেলনে ওই গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. ডোনাল্ড লিওড জোনস বলেছেন, ‘গবেষণায় অকাল মেনোপজ আর ডিমেনশিয়ার মধ্যে একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে।’ তিনি বলেন, ‘আসলে জৈবিকভাবে শরীরের কোষ, প্রত্যঙ্গের কার্যকারিতায় বার্ধক্য দেখা দেওয়ার সঙ্গে অকাল মেনোপজের সম্পর্ক রয়েছে।’
শিকাগোর নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ফেইনবার্গ স্কুল অফ মেডিসিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘জিনগত, পরিবেশগত অথবা স্বাস্থ্যগত জটিলতার কারণে অকালে মেনোপজ হতে পারে। বিভিন্ন পর্যায়ে শরীর সেই ইঙ্গিত দিতে পারে, যেখানে মনোযোগ দেওয়া দরকার।’
লিওড জোনস বলেন, ‘ইউকে বায়োব্যাংকের ১ লাখ ৫৩ হাজার নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করার সুযোগ হয়েছে এ গবেষণায়। এই বিপুল তথ্যের যে ব্যাপ্তি, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ধারণা পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে কার্যকারণ সম্পর্কে যা যা বোঝা প্রয়োজন ছিল, তার সব বোঝা যায়নি।’
এ গবেষণায় বয়স, জাতীয়তা, ওজন, শিক্ষা ও আয়, ধুমপান ও মদে আসক্তি, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, ডায়বেটিস এবং শারীরিক সক্রিয়তার দিকে নজর দেওয়া হয়েছিল।
ফলাফলে দেখা যায়, যে নারীদের বেলায় ৪৫ বছর বয়সের আগেই মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, তাদের ৬৫ বছর বয়সের মধ্যে ডিমেনশিয়া ধরা পড়ার ঝুঁকি ১ দশমিক ৩ গুণ বেশি। অনেক সময় ৪০ থেকে ৪৫ বছর বয়সের মধ্যেও নারীর মেনোপজ হতে পারে। সেটাকে অকাল মেনোপজ বলছেন না গবেষকরা।
যদিও এ দুই রকম মেনোপজ হওয়ার কারণগুলো একই রকম হতে পারে; বংশগত, দীর্ঘদিন ধরে ক্লান্তিতে ভোগাসহ অন্যান্য অটোইমিউন রোগ, এইচআইভি এবং এইডস, ক্যান্সারের কারণে কেমোথেরাপি অথবা পেলভিক রেডিয়েশন চিকিৎসা, ডিম্বাশয় অথবা জরায়ু অপসারণ এবং ধুমপানের অভ্যাস এ ধরনের কারণ।
অবশ্য অস্ত্রোপচার করে ডিম্বাশয় বা জরায়ু অপসারণের কারণে যে মেনোপজ হয়, তাতে অকাল মেনোপজের চেয়ে ঝুঁকি কম বলে জানান লিওড জোনস।
নারীর মেনোপজ হলে ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন কমতে শুরু করে। এর সঙ্গে গবেষণায় পাওয়া ইঙ্গিতকে মেলাতে চাইছেন এর লেখক ওয়েন্টিং হাও। চীনের জিনান শহরে শানডং ইউনিভার্সিটির এ ডক্টরেট প্রার্থী বলেন, ‘আমরা জানি, দীর্ঘদিন ধরে ইস্ট্রোজেন ঘাটতি হতে থাকলে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস দেখা দিতে পারে। আর তাতে করে মস্তিস্কে বার্ধক্য দেখা দিতে পারে। এর ফলে আমাদের চিন্তাশক্তি কার্যকারিতা হারাতে পারে।’
লিওড জোনস বলছেন, ‘অকালে মেনোপজ হওয়ার বিষয়টি ইস্ট্রোজেনের ঘাটতির চেয়েও বড় সতর্কবার্তা দেয়। গর্ভাবস্থায় ডায়বেটিস বা খিঁচুনি হওয়াও একটি লক্ষণ। অকাল মেনোপজ বলে দেয়, ওই নারী পরে হৃদপিণ্ড অথবা মস্তিস্কের জটিলতা দেখা দেওয়ার ঝুঁকিতে আছেন। এক্ষেত্রে খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কর্মকাণ্ড, ওজন ও ধুমপানের মতো অভ্যাস যতটুকু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তা করা দরকার।’
এক্ষেত্রে আশার আলো দেখিয়ে ওয়েন্টিং হাও বলেন, ‘কিছু নিয়ম অনুসরণ করে অকাল মেনোপজ পরবর্তী স্মৃতিশক্তির ক্ষয়ের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। এর মধ্যে রয়েছে নিয়মিত ব্যায়াম, অবসর ও শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়া, ধুমপান না করা, অ্যালকোহল না খাওয়া এবং একটা স্বাস্থ্যসম্মত ওজন বজায় রাখা।’