ভারতে প্রতি ২৫ মিনিটে কেন একজন গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন
মনোবিদ সৌমিত্র পাথারে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে নারীর আত্মহত্যার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকেন পুরুষ।
ভারতের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো (এনসিআরবি) বলছে, গত বছর দেশটিতে ২২ হাজার ৩৭২ গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। এ হিসাবে প্রতিদিন দেশটিতে ৬১ অথবা প্রতি ২৫ মিনিটে একজন গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। খবর বিবিসির।
গত বছর ভারতে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫২ জন আত্মহত্যা করেছেন। এর মধ্যে ১৪ দশমিক ৬ শতাংশ গৃহবধূ। আর আত্মহত্যা করেছেন এমন মানুষের ৫০ শতাংশই নারী। আত্মহত্যার এমন ঘটনা যে শুধু গত বছর ঘটেছে, তা নয়। ১৯৯৭ সাল থেকে এনসিআরবি বিভিন্ন পেশাজীবীদের আত্মহত্যার তথ্য সংগ্রহ করছে। তাতে দেখা গেছে, প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন। ২০০৯ সালে গৃহবধূদের আত্মহত্যা করার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৫ হাজার ৯২ জনে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারি জরিপে ৩০ শতাংশ নারী বলছেন তারা স্বামীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শ্বশুরবাড়িতে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে হয় বলেও জানান তারা।
ভারতের উত্তরাঞ্চলের বারানসি এলাকার মনোবিদ ঊষা ভার্মা শ্রীবাস্তব বলেন, নারীরা সাধারণত নীরবে এ ধরনের নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করেন। ১৮ বছর বয়স হলেই বেশির ভাগ নারীকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। এরপর বাড়িতে বউয়ের ভূমিকায় সারা দিন রান্না, ঘরের কাজেই দিন কেটে যায়। তাদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকে না। খুব কম ক্ষেত্রেই অর্থ উপার্জনের স্বাধীনতা পান। নির্যাতনের শিকার হতে হতে হতাশা গ্রাস করে তাদের।
তিনি বলেন, বয়স্ক নারীদের আত্মহত্যার কারণ কিছুটা আলাদা। সন্তানরা বড় হয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়ায় অনেকে এক ধরনের শূন্যতায় ভোগেন। অনেকে মেনোপজের কারণে নানা মানসিক সমস্যায় ভোগেন। বিষণ্নতাও দেখা দেয় অনেকের। যিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন, তাকে এক সেকেন্ডের জন্য থামাতে পারলেও পরিস্থিতি বদলে যায় বলে জানান শ্রীবাস্তব।
মনোবিদ সৌমিত্র পাথারে বলেন, অনেক ক্ষেত্রে নারীর আত্মহত্যার জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী থাকেন পুরুষ। বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে মারধর করে পুরুষ। এরপর স্ত্রী আত্মহননের পথ বেছে নেন।
এনসিআরবির তথ্য বলছে, এক-তৃতীয়াংশ ভারতীয় নারী পারিবারিক সহিংসতার কারণে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে সরকারি নথিতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে পারিবারিক সহিংসতার কথা উল্লেখ করা হয় না।
করোনা মহামারী ও বিধিনিষেধের কারণে পরিস্থিতি কিছুটা খারাপ হয়েছে। স্বামীরা কর্মক্ষেত্রে থাকলে ঘরে কিছুটা নিরাপদ থাকতে পারেন স্ত্রীরা। করোনাকালে স্বামীরা দীর্ঘসময় ঘরে থেকেছেন। আর এতে স্ত্রীদের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। ক্ষোভ ও হতাশা বাড়তে বাড়তে একপর্যায়ে স্ত্রীরা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হন।
আত্মহত্যার দিক দিয়ে বিশ্বে ভারতের অবস্থান শীর্ষে। বিশ্বে যত আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে, তার এক-চতুর্থাংশ ভারতের পুরুষরা করেন। আর ৩৬ শতাংশ ভারতের নারীরা করেন। দেশটিতে ১৫ থেকে ৩৯ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি।