চিকিৎসায় সারবে ‘বার্ধক্য’
বার্ধক্য একটি রোগ, চিকিৎসায় যার নিরাময় সম্ভব: মার্কিন বিজ্ঞানী
বার্ধক্য প্রাকৃতিক নিয়ম এবং প্রত্যেকেরই নিয়তি। তবে দুই দশকের বেশির এ বিষয়ে গবেষণা করে যুক্তরাষ্ট্রের জেনেটিক বিজ্ঞানী ড. ডেভিড সিনক্লেয়ার বলছেন, বার্ধক্য একটি রোগ এবং একে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের জন্য প্রয়োজন শুধু কিছু সহজ অভ্যাস। খবর বিবিসির।
সিনক্লেয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এমন দিন খুব দূরে নেই যখন ওষুধের সাহায্যে বার্ধক্য সারিয়ে তোলা সম্ভব হবে। এসব ওষুধ এখন পরীক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। এসব ওুষধে বুড়ো হওয়ার প্রক্রিয়া আসলেই আটকে রাখা যাবে বলে আত্মবিশ্বাসী তিনি।
বুড়ো হওয়ার নয়টি প্রধান কারণ চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা। গত ২৫ বছরের গবেষণায় একটিকে বৃদ্ধ হওয়ার পেছনে এবং অন্য সবগুলো কারণের জন্য দায়ী এবং এর ফলে শরীর তার সব তথ্য হারিয়ে ফেলে।
সিনক্লেয়ারের মতে, আমাদের শরীরে দুই ধরনের তথ্য মজুত থাকে। একটি বংশগত বা মা-বাবা থেকে; অন্যটি শরীরে তৈরি হয় এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবেশগত নানা উপাদান থেকে পেয়ে থাকে। জেনেটিককে আমরা ‘ডিজিটাল’ এবং অন্যটিকে ‘অ্যানালগ’ বা ‘এপিজিনোম’ বলে। এটি কোষের ভেতরের একটি পদ্ধতি। কোন জিন চালু এবং কোনটি বন্ধ করে দিতে হবে, সেটি এই পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে।
তিনি বলেন, জীব বিজ্ঞানে কোথাও লেখা নেই যে, আমাদের বুড়ো হতে হবে। আমরা জানি না ঠিক কীভাবে এই প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হয়। যদিও এই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার বিষয়টা আমরা ক্রমশ শিখেছি। আমাদের ল্যাবে আমরা বৃদ্ধ হবার প্রক্রিয়াটা বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। এই প্রক্রিয়া; যেটাকে বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় এপিজিনোম বলে- সেটা বদলানো সম্ভব।
ইঁদুর, তিমি, হাতি ও মানুষের ওপর পরীক্ষা করে দেখা গেছে, একেকটি প্রাণীর জীবনযাত্রা একেক রকম। ফলে তাদের প্রত্যেকের বয়স বাড়ে ভিন্ন গতিতে। একজন ব্যক্তির ভবিষ্যত স্বাস্থ্য কেমন হবে, তার ৮০ শতাংশের বেশি নির্ভর করে জীবনযাত্রার ওপর, ডিএনএ-র ওপর নয়।
সিনক্লেয়ার বলেন, শরীর ভালো রাখতে অভ্যাসের যেসব পরিবর্তন আমরা করি, সেগুলো রোগব্যাধি ও বার্ধক্যের বিরুদ্ধে শরীরের একটা স্বাভাবিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। গরম বা ঠান্ডা, ক্ষুধাবোধ, দমের অভাব ইত্যাদি অনুভূতি শরীরের এ প্রতিরোধ প্রক্রিয়াকে সক্রিয় করে তোলে। আর এ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মূলে রয়েছে মাত্র গুটিকয়েক জিন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এগুলোর ওপর পরীক্ষা চালিয়েছি। এই জিনগুলো এপিজিনোমকে নিয়ন্ত্রণ করে। ক্ষুধা ও ব্যায়াম এগুলোকে সক্রিয় করে তোলে। এ কারণেই আমরা মনে করি, সঠিক খাবার এবং উপোস করা বয়সের ঘড়িকে ধীরে চলতে সাহায্য করতে পারে।’