আফগানিস্তানে বন্ধ এক-চতুর্থাংশ হাসপাতাল

অনলাইন ডেস্ক
2021-09-25 16:57:43
আফগানিস্তানে বন্ধ এক-চতুর্থাংশ হাসপাতাল

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি সতর্কতা জারি করে এক বিবৃতিতে বলেছে, আফগানিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে

আফগানিস্তানে করোনা রোগীদের চিকিৎসায় চালু হওয়া এক-চতুর্থাংশ হাসপাতাল চলতি সপ্তাহে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে দেশটির দুর্বল পদক্ষেপ সামনে এসেছে বলে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি সতর্কতা জারি করে এক বিবৃতিতে বলেছে, আফগানিস্তান মানবিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান সম্প্রতি আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল সফরে আসেন। এরপর তিনি গত ১৫ আগস্ট দেশটির দখল নেয়া তালেবান নেতা ছাড়াও দেশটিতে সংস্থার কর্মকর্তা, জাতিসংঘের সহযোগী স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এরপরই মূলত এ সতর্কতা জারি করেছে ডব্লিউএইচও।

যৌথ বিবৃতিতে ডব্লিউএইচও’র প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস এবং সংস্থার পূর্ব মধ্যসাগরীয় অঞ্চলের পরিচালক ডা. আহমেদ আল-মানধারি বলেছেন, ‘আফগানিস্তানের বৃহৎ স্বাস্থ্য প্রকল্প সেহাতমন্দিতে সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে দাতারা। এরপর মেডিকেল সহায়তা ও বেতনভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় হাজারো স্বাস্থ্যকর্মী চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন।’

আফগানরা স্বাস্থ্যসেবার দুই-তৃতীয়াংশ সুবিধা এই সেহাতমন্দি প্রকল্প থেকে পেয়ে আসছিলেন। তিন বছর মেয়াদি ৬০০ মিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পে অর্থায়ন করছিল বিশ্ব ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থা এআইডি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য দাতারা। আফগানিস্তানের জনস্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এ প্রকল্পে অর্থ খরচ করা হচ্ছিল। কিন্তু তালেবান পুনরায় ক্ষমতা নেয়ার পর সহায়তা বন্ধ করে দেয় দাতারা। ফলে প্রকল্পের মাত্র ছয় ভাগের এক ভাগ কার্যক্রম কোনোমতে চলছে বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অনেক স্বাস্থ্য সুবিধা কমিয়ে দেয়া অথবা একেবারে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে কোন রোগীকে রক্ষায় চিকিৎসা করতে এবং কাকে মৃত্যুর পথে যেতে দিতে হবে— এমন কঠিন সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।

কর্মকর্তারা বলছেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসায় ৩৭টি হাসপাতাল চালু হলেও সপ্তাহ ব্যবধানে নয়টি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। একই সাথে করোনাভাইরাস পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও টিকাদানের মতো কার্যক্রম সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। অথচ গত জুনের শেষদিক থেকেই আফগানিস্তানে সংক্রমণ বাড়ছে এবং ভারতীয় ডেল্টা ধরনের কারণে তা ভয়ানক পর্যায়ে রয়েছে।

ডব্লিউএইচওর গত মাসের হিসাবে, ২২ লাখ (মোট জনসংখ্যার মাত্র ৬ শতাংশ) মানুষকে করোনার টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি সপ্তাহে টিকাদানের গতি নেই বললেই চলে এবং ১৮ লাখ টিকা অব্যবহৃত অবস্থায় রয়েছে।

এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) আশরাফ ঘানি সরকারের শেষ ব্যক্তি হিসেবে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. ওয়াহিদ মাজরুহকে বরখাস্ত করেছে তালেবান। ইউরোলজিস্ট ডা. কালান্দার ইবাদকে তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। যদিও টুইট করে ডা. কালান্দার ইবাদকে স্বাগত জানিয়েছেন ওয়াহিদ মাজরুহ।

জাতিসংঘের জরুরি ত্রাণ সংস্থার সমন্বয়ক মার্টিন গ্রিফিতস জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের ভঙ্গুর স্বাস্থ্যসেবার জন্য তারা জরুরি ভিত্তিতে ৪৫ মিলিয়ন ডলার তহবিল ছাড় করেছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানে ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও জ্বালানির চরম সংকট চলছে। জরুরি স্বাস্থ্যকর্মীদের বেতন দেয়া হচ্ছে না। এরপরও অনেকে শুধুমাত্র মানবিক কারণে সেবায় যুক্ত আছেন।’

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনেও জনস্বাস্থ্যের চরম দুর্দশা উঠে এসেছে। সংস্থাটি বলছে, এখন ৯৫ শতাংশ আফগান পরিবারে খাদ্যের সংকট রয়েছে। আসন্ন শীতে এ অবস্থার আরও অবনতি হবে। কারণ তখন প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক জনগোষ্ঠীকে কয়েক মাসের জন্য সব ধরনের সহায়তা থেকে বাইরে থাকতে হতে পারে।


আরও দেখুন: