করোনার ওষুধ আইভারমেকটিন প্রত্যাহারের নেপথ্যে
এমনকি এক রোগী ৩১ জুন হাসপাতাল ছেড়েছেন উল্লেখ করা হলেও গত বছর জুন ছিল ৩০ দিনের
করোনা মহামারি শুরুর পর বিশ্বে অসংখ্য গবেষণায় ভাইরাসটির বিরুদ্ধে আইভারমেকটিন ওষুধের কার্যকারিতার প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে। এরপরও করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসায় এটি ব্যবহার না করার জন্য বলা হয়েছে। মূলত ‘নৈতিক উদ্বেগ’ থেকে ওষুধটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে বলে খবর দিয়েছে দি গার্ডিয়ান।
অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল ওষুধ আইভারমেকটিন চর্মরোগসহ পরজীবীঘটিত বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এটি কম দামি ও সহজলভ্য এবং বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত কার্যকর ও নিরাপদ ওষুধ হিসেবে বিবেচিত।
করোনার বিরুদ্ধে আইভারমেকটিনের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা নিয়ে গত বছর নভেম্বরে রিসার্চ স্কয়ার ওয়েবসাইটে একটি গবেষণা প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা দলের নেতৃত্ব দেন মিসরের বেনহা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. আহমেদ এলগাজ্জার।
বেনহা মেডিকেল জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডের সদস্য আহমেদ এলগাজ্জার তার গবেষণায় উল্লেখ করেন, করোনা নিয়ে হাসপাতালে আসা রোগীদের আইভারমেকটিন দেয়ার পর তারা দ্রুত সুস্থ হয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ না হওয়ায় ৯০ শতাংশ মৃত্যুর ঝুঁকি কমেছে।
তবে ডা. আহমেদের এ গবেষণা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ প্রকাশ করে গত ১৫ জুলাই রিসার্চ স্কয়ার ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা না হলেও গবেষণার বিষয়ে ‘নৈতিক উদ্বেগ’ প্রকাশ করা হয়।
লন্ডনের মেডিকেল শিক্ষার্থী জ্যাক লরেন্স প্রথম ডা. আহমেদের গবেষণাপত্রের ‘গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি’ শনাক্ত করেন এবং এরপরই ওষুধটি করোনা চিকিৎসা থেকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
জ্যাক লরেন্স প্রমাণ করেন, ডা. আহমেদের গবেষণাপত্রের ভূমিকার অংশ পুরোটাই ‘চুরি’ করা। তিনি বলেন, ‘গবেষণাপত্রে আইভারমেকটিন ১৮ থেকে ৮০ বছর বয়সীদের ওপর ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে। তবে তাদের তথ্যেই দেখা গেছে, অন্তত তিন রোগীর বয়স ১৮ বছরের নিচে।’
তিনি আরও বলেন, ‘গবেষণাটি গত বছর ৮ জুন থেকে ২০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিচালনা করার তথ্য দেয়া হয়েছে। অথচ প্রাথমিক তথ্যে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভর্তি রোগীর মৃত্যু হয়েছে ৮ জুনের আগে। এমনকি এক রোগী ৩১ জুন হাসপাতাল ছেড়েছেন উল্লেখ করা হলেও গত বছর জুন ছিল ৩০ দিনের।’
জ্যাক লরেন্সের এসব অভিযোগ এবং তার পক্ষে সরবরাহ করা তথ্য-উপাত্ত দি গার্ডিয়ান ডা. আহমেদ এলগাজ্জারের কাছে পাঠালেও তিনি কোনো জবাব দেননি। এমনকি তার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ বিভাগ কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।