‘বানর থেকে মানুষ’ তত্ত্ব ভুল
‘রি রোড টু হোমো স্পাইন্স’ নামক রেখাচিত্র বিবর্তনবাদ সম্পর্কে আমাদের চরম ভুল তথ্য দেয়
বিবর্তন নিয়ে বিখ্যাত রেখাচিত্রকে (ডায়াগ্রাম) ভুল আখ্যায়িত করেছেন বিট্রেনের এক জিনতত্ত্ববিদ। ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানী ড. অ্যাডাম রাদারফোর্ড বলেছেন, ‘রি রোড টু হোমো স্পাইন্স’ নামক রেখাচিত্র বিবর্তনবাদ সম্পর্কে আমাদের চরম ভুল তথ্য দেয়। ফলে এটি সব জায়গা থেকে সরিয়ে ফেলা দরকার।
দি চেলটেনহ্যাম বিজ্ঞান উৎসবে গত সোমবার (২১ জুন) দেওয়া বক্তব্যে ড. রাদারফোর্ড এমন মন্তব্য করেন বলে খবর দিয়েছে ডেইলি মেইল।
বিবর্তনের রেখাচিত্রে দেখানো হয়, আজকের মানুষের সারির শুরু একটি বানরে। বানরটি ধীরে ধীরে মানুষে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রাদারফোর্ড বলেন, ‘বিবর্তনবাদ সম্পর্কে অনেক কিছু থাকলেও চিত্রটি আমাদের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করে। ফলে জীববিজ্ঞান থেকে এটি সরিয়ে ফেলা উচিত। কারণ, ডায়াগ্রামে বিবর্তনের বিজ্ঞান বলতে মানুষের সারি শুরু হয়েছে একটি বানর দিয়ে। বানরটি ধীরে ধীরে দাঁড়িওয়ালা শ্বেতাঙ্গ মানুষে পরিণত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এ চিত্র পরিশীলতা ও বুদ্ধির নির্দেশনা বোঝায়, যা ১৯৬৫ সালে একটি পাঠ্যবই থেকে এসেছে। আমার যদি একটি ইচ্ছে পূরণের সুযোগ দেয়া হতো, আমি সব ধরনের আর্কাইভ থেকে এ চিত্র মুছে দিতাম।’
‘রি রোড টু হোমো স্পাইন্স’ নামের মুল ডায়াগ্রামে প্লিওপিথেকাসকে ২২ মিলিয়ন বছর আগের বানর বা উল্লুক জাতীয় প্রাণীর পূর্বপুরুষ হিসেবে নির্দেশ করা হয়েছে। চিত্রে মোট ১৪টি চরিত্র রয়েছে। শুরুর চরিত্রটি ২২ মিলিয়ন বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষরা কেমন ছিল, তা নির্দেশ করে। শেষটি আধুনিক মানুষের চরিত্র, যা সর্বত্র বিবর্তনবাদ হিসেবে ছড়িয়ে রয়েছে।
বিজ্ঞানী রাদারফোর্ড বলছেন, ‘বিবর্তনের একটি নির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, যা ছবিটির মাধ্যমে ভুল ধারণা স্থাপন হয়েছে। ছবি বলছে, আমাদের পূর্বপুরুষ বানর জাতীয় প্রাণী। তারা হাঁটতে শুরু করল এবং এক সময় আধুনিক মানুষে পরিণত হলো। কিন্তু বিবর্তন কখনো এভাবে কাজ করে না।’
তিনি বলেন, ‘বিবর্তন নির্ভর করে সে সময়ের পরিবেশগত পরিস্থিতি কেমন ছিল, তার ওপর। অথচ আমরা আমাদের বিবর্তনের শুরুর কথা জানি, এমন ভুল অর্থ ডায়াগ্রামটি আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে। এটির আবার একটি নামও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমরা সত্যিই জানি না, আমাদের পূর্বপুরুষ কারা? বহু তথ্য আমাদের কাছে থাকলেও নিশ্চিত করে কিছুই আমরা বলতে পারি না। বিপরীতে চিত্রটি বিজ্ঞানের বোঝাপোড়াকে নষ্ট করে আসছে।’
রাদারফোর্ডের মতে, মানুষ থেকে আফ্রিকার ছোট্ট একটি কীটের জীবনচিত্রও বলে, পরিবেশের সাথে তারা কীভাবে নিজেকে মানিয়ে টিকে আছে। তবে নিজেকে বির্বতনের কেন্দ্রীয় চরিত্র ভাবার দৃষ্টিভঙ্গি মানুষের খুবই স্বভাবজাত। অবশ্য তিনি বলেন, ‘বিবর্তনের ডায়াগ্রাম ছড়িয়ে পড়া পৃথিবীর বড় কোনো অপরাধ নয়। তবে ভুল। এর অর্থ আমরা আমাদের বিবর্তন সম্পর্কে জানি, যেমন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নেদারল্যান্ডের সম্পর্ক জানি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমরা সত্যিই আমাদের পূর্বপুরুষ সম্পর্কে কিছুই জানি না।’
রাদারফোর্ড বলেন, ‘পূর্বপুরুষ সম্পর্কে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। প্রচুর নমুনাও হাতে এসেছে। কিন্তু সেগুলোর সাথে আমাদের বিবর্তনের সম্পর্ক দাঁড় করানো কখনো ঠিক হবে না। রেখাচিত্রে বলা হচ্ছে, এটিই আমাদের বিবর্তনের পথ। কিন্তু আমি মনে করি, বিজ্ঞানের যা আমরা জানি না, সে বিষয়ে মানুষকে শেখানোর চেয়ে যা জানি তা শেখানো বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিবর্তনের রেখাচিত্র অনেক বেশি অগোছালো, এটি আরও বেশি সংহত হওয়া দরকার, অনেকটা নেটওয়ার্কের মতো।’