ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসের পার্থক্য কী

অনলাইন ডেস্ক
2021-05-26 10:48:11
ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসের পার্থক্য কী

ভারতে করোনা সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

ভারতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কিছুটা কমতে শুরু করলেও দেশটিতে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ফাঙ্গাসজনিত সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

বিবিসি বলছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ও হোয়াইট ফাঙ্গাসের সংক্রমণের পর সোমবার প্রথম কোনো রোগীর মধ্যে ইয়েলো বা হলুদ ফাঙ্গাস সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।

উত্তরপ্রদেশের গাজিয়াবাদের হার্ষ ইএনটি হাসপাতালে একজন রোগীর মধ্যে তিন ধরনের- কালো, সাদা ও হলুদ ফাঙ্গাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

বিষয়টিকে বিরল আখ্যা দিয়ে হাসপাতালের প্রধান ডা. বিপিএস ত্যাগী বলেন, ৫৯ বছর বয়সী একজন রোগীর দেহে হলুদ ফাঙ্গাস তথা ‘মিউকর সেপটিকাস’র উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই ফাঙ্গাস সাধারণত সরীসৃপদের মধ্যে পাওয়া যায়।

মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস

মিউকোর বা রাইজোপাস ফাঙ্গাসের মাধ্যমে এই সংক্রমণ হয়ে থাকে। এই ফাঙ্গাস সাধারণত মাটি, গাছ, সার, পচা ফল এবং সবজিতে পাওয়া যায়।

এই ফাঙ্গাস সাইনাস, মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে প্রভাব ফেলে। কয়েকটি ক্ষেত্রে এই ফাঙ্গাসের কারণে পরিপাকতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়ে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়লে চোখ বা চোয়াল অপসারণেরও প্রয়োজন হতে পারে।

চিকিৎসকদের মতে, এই ফাঙ্গাস ফুসফুস বা পরিপাকতন্ত্র আক্রমণ করলে তা শনাক্ত করা কঠিন, কারণ তখন উপসর্গগুলো দেরিতে প্রকাশিত হয়।

মিউকোরমাইকোসিসে মৃত্যুহার প্রায় ৫০ শতাংশ।

এর উপসর্গগুলো হলো- নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, নাক নিয়ে রক্ত বা কালো তরল নির্গত হওয়া, মাথা ব্যথা, চোখ ফুলে যাওয়া বা ব্যথা, চোখের পাতা খসে পড়া, চোখে ঝাপসা দেখা এবং শেষ পর্যন্ত অন্ধত্ব।

এছাড়া নাকের আশেপাশে কালো ছোট দাগ দেখা যেতে পারে এবং নাকের চারপাশে অসাড়তা তৈরি হতে পারে। ফুসফুসে সংক্রমণের ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মিউকোর সেপটিকাস বা হলুদ ফাঙ্গাস

এটিও এক ধরণের মিউকোরমাইকোসিস। এর উপসর্গের মধ্যে রয়েছে জ্বর, নাক দিয়ে লাল বা কালো তরল নির্গত হওয়া, দুর্বলতা ও নাকের আশেপাশে অসাড়তা।

ক্যানডিডা বা হোয়াইট ফাঙ্গাস

যেসব রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম এবং যাদের দীর্ঘসময় আইসিইউতে থাকতে হয়েছে, তাদের মধ্যে এই ধরনের ফাঙ্গাস সংক্রমণের সম্ভাবনা বেশি।

এই ধরনের সংক্রমণের ক্ষেত্রে জিহ্বায় সাদা ছোপ দেখা যায়। এই সংক্রমণ যকৃত ও ফুসফুসে হয়ে থাকে। এটি মিউকোরমাইকোসিসের মত ভয়াবহ নয়।

এই সংক্রমণে মৃত্যুর হার শতকরা প্রায় ১০ ভাগের মত। তবে সংক্রমণ রক্তে ছড়িয়ে গেলে এই ধরনের সংক্রমণ ভয়াবহ রূপ ধারণ করতে পারে।

অবশ্য দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের পরিচালক রনদীপ গুলেরিয়া বলেছেন, ‘ফাঙ্গাসের সংক্রমণ বোঝাতে কালো, সাদা, হলুদ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে এটি সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ফাঙ্গাসটি একেক অঙ্গে একেক রকম রঙয়ের হয়ে প্রতীয়মান হতে পারে, কিন্তু এটি আসলে একই জাতের ফাঙ্গাস।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণত তিন ধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণ দেখতে পাই আমরা- মিউকরমাইকোসিস, ক্যানডিডা অথবা অ্যাসপারগিলাস ফাঙ্গাস সংক্রমণ।’


আরও দেখুন: