স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত?

ডা. সৈয়দা নিয়ামত ই ফেরদৌসি
2020-11-30 01:01:10
স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত?

স্ট্রোক রোগীদের জরুরি চিকিৎসার জন্য সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে ক্যাথল্যাব অপরিহার্য। ফাইল ছবি

গোটা বিশ্বেই শারীরিকভাবে পুরোপুরি অক্ষম হয়ে যাওয়া এবং মৃত্যুর সবচেয়ে বড় কারণ হল স্ট্রোক। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন কোনও কারণে বন্ধ হয়ে গেলে স্ট্রোক হয়।  রক্ত প্রবাহ ছাড়া মস্তিষ্কের কোষগুলি মরে যেতে শুরু করে।  দ্রুত চিকিত্‍সা শুরু না হলে এর ফলে মস্তিষ্কের মৃত্যু হয় । 

কোনও ব্যক্তির স্ট্রোক হলে তার মধ্যে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।  উপসর্গগুলি চিনে নিয়ে দ্রুত চিকিত্‍সার ব্যবস্থা করলে বড় ক্ষতি এড়ানো যায়। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের কথা নিয়ে সাজানো হয়েছে বিশেষ প্রতিবেদন।

 স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত?

একজন পেশেন্ট যখন স্ট্রোক করছেন তখন তিনি একটা হাসপাতালে যাচ্ছেন সেখান থেকে একটা জেলা হাসপাতালে যাচ্ছেন।  এভাবে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।  স্ট্রোক রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কেমন হওয়া উচিত?

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের প্রখ্যাত নিউরোসার্জন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া ডক্টর টিভিকে বলেন, প্রথমত কথাটি হলো আমাদের জ্ঞানের অভাব ও সচেনতা অভাব অভাব।  সেটা যেমন সাধারণ মানুষ, স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝেও আছে।  স্ট্রোকের রোগীদের গোল্ডেন আওয়ার ( আক্রান্ত হওয়ার প্রথম ৩ ঘণ্টা) খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  ব্রেইনের ক্ষেত্রে গোল্ডেন টাইম আছে।  যদি তিন ঘন্টা মধ্যে রোগী যথাযথ হাসপাতালে পৌঁছায় তাহলে উন্নতি করা সম্ভব।

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া

তিনি বলেন, হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে এজন্য নিউরোসার্জন টিম থাকতে পারে।  রোগীর জন্য যে যে স্টেপ নিলে ভালো সেটা ভালো হবে।  সব ধরনের মেশিন থাকতে হবে।  যেমন, সিটি স্ক্যান, এনজিওগ্রাম ইত্যাদি।

অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া আরও বলেন, স্ট্রোক রোগীকে যথাযথ চিকিৎসার জন্য জনসচেনতা খুবই প্রয়োজন।  অনেক সময় দেখা যায় নিউরোসার্জন ডাক্তার থাকলেও রোগী চলে যাচ্ছে মেডিসেন বিভাগে।  সেখান থেকে রেফার হয়ে আসতে সময়ক্ষেপণ হয়ে যাচ্ছে।  কিন্তু স্ট্রোকের রোগী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব  নিউরোসার্জনের হাতে তুলে দিলে রোগীর জন্য অনেক ভালো হয়।  বেশি দেরি করে আসলে চিকিৎসকদের আসলে তেমন কিছু করার থাকে না। 

স্ট্রোক রোগ কয় ধরনের?

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো: শফিকুল ইসলাম ডক্টর টিভিকে বলেন, স্ট্রোক আসলে দুই রকম।  রক্তনালী স্ট্রোক ও রক্তক্ষরণ স্ট্রোক।  রক্তক্ষরণ স্ট্রোক খুবই কম দশ থেকে বার পার্সেন্ট।  মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ে।

তবে ডায়াবেটিসসহ অন্য রোগ কন্ট্রোল করতে পারলে স্ট্রোক করা অনেক কমে যাবে।  আর ব্যায়াম করলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল থাকবে।  যা করার আমাদের স্ট্রোক হওয়া আগে করতে হবে। সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যাবে।

এ ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের নিউরোসার্জারি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. সুমন রানা বলেন, স্ট্রোকের শতকরা ৮৫% রক্তনালী ক্ষরণ হয়ে হয়, আর ১৫ ভাগ রোগী রক্তক্ষরণ হয়ে আসে আমাদের কাছে।  রক্ত বন্ধ হয়ে যাওয়া কারণে বেশিরভাগ স্ট্রোক হয়ে থাকে।

বাংলাদেশে স্ট্রোক সেন্টার প্রয়োজন 

এ ব্যাপারে অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, আমি চাই যে নিউরোলজিস্ট ও রেডিওলজিস্ট রাখতে হবে।  রোগীর যদি সার্জারি প্রয়োজন হয় তাহলে আইসিও কেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।  আপাতত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ গুরুত্বপূর্ণ ৪টি হাসপাতালে স্ট্রোক সেন্টার করা যেতে পারে।  পরবতীতে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করা যাবে। 


আরও দেখুন: