স্বাস্থ্যসেবায় বাইডেনের যত চ্যালেঞ্জ
জো বাইডেন। ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের সবচেয়ে বড় কাজ করতে হবে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে। নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্য এজেন্ডাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন তিনি। যার ফলে এসেছে সফলতা। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের ভোট তার পক্ষে গেছে।
তিনি কোভিড-১৯ মোকাবেলায় সরকারি সক্ষমতা বাড়াতে ‘অ্যাফরডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’ প্রসারণ, যেসব মার্কিন নাগরিক এখনো স্বাস্থ্যবীমা করেনি তাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিতে হবে তাকে। এজন্য তিনি বিকল্প ব্যবস্থা প্রণয়ন এবং মেডিকেয়ার এবং মেডিকেড প্রসারণকেই প্রাধ্যন্য দেবেন তার স্বাস্থ্য এজেন্ডায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, নবনির্বাচিত এই প্রেসিডেন্টকে স্বাস্থ্যসেবার তালিকা অনেক বড় করতে হবে। এমনকি আদালত এবং কংগ্রেসেও অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে তাকে। জাতীয় মাস্ক ম্যান্ডেডসহ কোভিড-১৯ নিয়ে জো বাইডেনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রস্তাবনাটি আইনি জটিলতা এবং রাজনৈতিক বাধায় বিঘ্নিত হতে পারে, এমনকি তিনি কংগ্রেসে ভাঙনেরও সম্মুখীন হতে পারেন।
আমেরিকান ইন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের রক্ষণশীল হেলথ পলিসি বিশেষজ্ঞ জোসেফ আন্তোস-পিএইচডি বাইডেনকে ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বলেন, তিনি বারাক ওবামার দ্বিতীয় মেয়াদের মতো 'পরিবদ্ধ' অবস্থার সঙ্কটের সম্মুখীন হবেন।
তিনি বলেন, এই ধরনের সমস্যা অনেক দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের এখানে আছে, পারস্পারিক সহযোগিতার অভাব, কোন সমস্যা নিয়ে নিজেদের মত প্রকাশের সক্ষমতা থাকলেও স্বীকৃতি দেয়ার মানসিকতার অভাব প্রত্যেক দলে আছে।
বাইডেনকে পরামর্শ দিয়ে আন্তোস বলেন, তিনি প্রচুর রাজনৈতিক চাপ অনুভাব করতে পারেন করোনাভাইরাসের এই সময়ে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রেও। এবং অন্যকিছু ঘটার আগে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে, ব্যবসা বন্ধও হতে পারে। তিনি বলেন, আমি মনেকরি অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বিকাশে এটি একটি ভালো প্রচেষ্টা হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাইডেনের পরিকল্পনা হল ওবামাকেয়ার প্রসারিত করা। কিন্তু এটি সামনের বছরেই অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। এই মাসেই হাইকোর্ট এই আইন নষ্ট করতে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। তবুও বাইডেনের শাসনামলে বেশি জোর থাকবে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রসার করা।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যাককোর্ট স্কুল অফ পাবলিক পলিসির সেন্টার অন হেলথ ইনস্যুরেন্স রিফর্মসের সহ-পরিচালক সাবরিনা করলেট, জেডি বলেন, প্রেসিডেন্টের প্রাধান্যের তালিকায় স্বাস্থ্য সেবা থাকবে সবচেয়ে উপরের সারিতে।
তিনি বলেন, আমি মনেকরি, বছরের শুরুতেই এই প্রশাসন কোভিট-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং অর্থনৈতিক ধস পুনরুদ্ধারে খুবই ব্যস্ত থাকতে চলেছে।
করোনাভাইরাস মোকাবেলায় বাইডেন কী করবেন?
কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী আদেশকে প্রাধান্য দিবেন আমেরিকার অঙ্গরাজ্যগুলোতে। তিনি আগের কিছু করা পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন যেমন- জাতীয় পলিসি অনুযায়ী মাস্ক পরিধান করা, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা এবং সিডিসি গাইডলাইন মেনে স্কুল খোলা এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা। নির্বাচনের সময়ও তিনি মাস্ক পরিধানের কথা বলে এসেছেন।
তাছাড়া ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ প্রতিরোধে বাইডেন টাস্ক ফোর্স গঠনের জন্য আহবান জানিয়েছেন। সোমবার (৯ অক্টোবর) ওই টাস্ক ফোর্সে ১২ জন সদস্যকে রেখে একটি বিশেষ দল গঠন করবে বলে তার নির্বাচনী বিজয়ী প্রথম ভাষণে গত শনিবার এ কথা জানান।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাইডেনের জাতীয়ভাবে মাস্ক পরিধানের বিষয়টি একটি চ্যালেঞ্জ হবে। অনেকে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে চাইবে না, মাস্ক পরতে চাইবে না। অনেক সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও সমস্যা হতে পারে।
বাইডেনের করোনা মোকাবেলার পরিকল্পনাসমূহ
সব আমেরিকানদের জন্য কোভিড-১৯ পরীক্ষা ফ্রি করা।
১ লাখ কনট্যাক্ট ট্রেসার সংগ্রহ করা।
করোনা ভাইরাস ট্রিটমেন্টে অযথা খরচ পরিহার করা।
প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য পিপিই যোগান দেয়া।
বিজ্ঞানসম্মত করোনা টিকাকে সমর্থন করা এবং মেডিকেল সেবাকে উন্নত করা।
সিডিসি অনুসারে স্কুল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ কর্ম সংস্থান খুলে দেয়া।
মহামারিতে কর্মীরা যখন বিভিন্ন জায়গায় যাবে তখন তাদেরকে জরুরি অর্থ দেয়া এবং তাদের পরিবার এবং ছোট ব্যবসায়ও অর্থ সহায়তা করা।
বয়স্করাসহ ঝুঁকির মধ্যে থাকা আমেরিকানদের সুরক্ষা নিশ্চয়তা করা।
সামনের সারির স্বাস্থ্য সেবা কর্মীদের বেতন বাড়ানো।
যদিও বাইডেনের জানা নেই সে কিভাবে এগুলো প্রদান করবে। তবে, তিনি বার্ষিক কর বাড়ানোর কথা বলছেন, যেটি অবশ্য অনুমোদনের জন্য কংগ্রেসের অনুমতি লাগবে।
ওবামা কেয়ার কী প্রতিবন্ধকতার পথে?
ওবামা কেয়ার বন্ধে সুপ্রিম কোর্ট পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। তবে সুপ্রিম কোর্টের ওই পদক্ষেপ বন্ধ করতে বাইডেন প্রশাসন ব্যবস্থা নেবেন। কারণ, ওবামা কেয়ার স্বাস্থ্য পরিকল্পনায় বাইডেনের জন্য হবে বড় হাতিয়ার। এটি বিপদগ্রস্ত মার্কিনীদের মেডিকেল সেবা নিশ্চিত করবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের দল রিপাবলিকানরা সব সময় ওবামা কেয়ারের বিরোধিতা করে আসছেন। এর আগে এটিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয়। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই এটি বাতিলে একটি রায় হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আমেরিকান ইন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ আন্তোস বলেন, রক্ষণশীলরা বিশ্বাস করে ওবামা কেয়ার গত কয়েক দশকের চেয়ে বেশি খরচ বৃদ্ধি করেছে স্বাস্থ্যসেবা এবং বীমায়। এমন পরিকল্পনা খুব বেশি দৃঢ় না। এটি আগের মতো উচ্চ ঝুঁকিতেও ফেলে দেয়। যেটি সবার জন্য খরচ বৃদ্ধি করেছে।
ওবামা কেয়ারের আইনের সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্ট সামনের বছর মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত নিবে না। কিন্তু অনিশ্চিতভাবে এই আইনে বাইডেনের প্রস্তাবনা প্রসারিত হবে।
ওষুধ খরচ কীভাবে কমাবেন বাইডেন?
ইতিমধ্যে বাইডেন মেডিকেয়ার, মেডিকেড এবং ওষুধের দাম বৃদ্ধি সংস্করণের জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। মেডকিয়ারে বীমা করার জন্য ৬৫ বছরের যোগ্যতা কমিয়ে ৬০ বছরে করার কথা তিনি বলছেন। এর ফলে আরও ২০ মিলিয়নেরও বেশি আমেরিকানকে এতে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।
মেডিকেড হল স্বল্প আয় এবং প্রতিবন্ধী আমেরিকানদের জন্য। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এতে সরকারি অর্থ আরো বাড়ানোর কথা বলছেন এই সংকটময় সময়েও।
নতুন প্রশাসনে মেডিকেয়ারের গুরুত্ব বেশি থাকবে। গত এপ্রিলে মেডিকেয়ার ট্রাস্টি বলেছে, পার্ট-এ এর আর্থিক প্রোগ্রাম হাসপাতাল এবং রোগীদের জন্য ২০২৬ সাল নাগাদ পরিচালিত হতে পারে। কেউ কেউ বলছে এটি ২০২২ সালের আগেই অর্থ শূন্য হতে পারে।
মেডিকেয়ার পার্ট-বি যেটি ডাক্তার এবং বহিরাগতদের জন্য ব্যয় করা হয়। এটি অর্থায়ন হয় সাধারণ কর এবং বিমাকারীর অর্থে, সুতরাং এটি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েক দশকের চেয়ে প্রেসক্রিপশন ওষুধে ৪২ ভাগ খরচ বেড়েছে। বাইডেন এখন এগুলো কমানোর কথা বলছেন। এতসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাইডেন প্রশাসন কী কী পদক্ষেপ নেয় সেটাই হবে দেখার বিষয়।
সূত্র: ওয়েবএমডি