নারী চিকিৎসকেরা রোগীকে সময় বেশি দিয়েও বেতন কম পাচ্ছেন
প্রতীকী ছবি।
মিনেসোটা ফ্যামিলি চিকিৎসক জে-শেরি অ্যালেন যখন তার রোগীদের ভিজিট করা আরম্ভ করে তখন সে তার পানির কল চালু করে হাত ধুয়ে নেয়। সে কারো সাথে হ্যান্ডশেকও করে না যাতে কোভিড-১৯ না ছড়ায়। সে তার রোগীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার আগে একটু সময় নেয় হাত ধোয়ার জন্য।
দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন কর্তৃক প্রকাশিত একটি গবেষণা সম্প্রতি পড়েছে অ্যালেন। সেখানে দেখানো হয়েছে প্রাইমারি কেয়ারের পুরুষ চিকিৎসকদের তুলনায় নারী চিকিৎসকেরা বেশি সময় ব্যয় করছে তাদের রোগীদের সেবায়। প্রতিটি ভিজিটে গড়পড়তায় ২.৪ মিনিট সময় বেশি ব্যয় করেও নারীরা কম বেতন পাচ্ছেন।
অ্যালেন বলছেন, রোগীদের সাথে সম্পর্ক তৈরি করতে গেলেই দুই মিনিট চলে যায়। এই সময় আমি ব্যয় করি প্রক্রিয়া শুরু করতে এবং সামাজিক কথা বার্তা বলতে গিয়ে।
২.৪ মিনিট মনে হতে পারে অযৌক্তিক, কিন্তু নিউ ইংল্যান্ড জার্নালের গবেষকেরা যুক্তি দেখাচ্ছে নারী চিকিৎসকেরা এই অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে যাতে তারা দ্রুত রোগটির বিষয়ে মীমাংসা করতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব মিনেসোটার হেলথ পলিসির সহকারী অধ্যাপিকা হান্নাহ নেপ্রেশ জানান, একটি ইলেকট্রনিক মেডিক্যাল রেকর্ডস কোম্পানির যেটি প্রাইমারি কেয়ার প্রাকটিসে বিস্তৃত ব্যবহার হয়ে থাকে। ২০১৭ সালের ২৪ মিলিয়ন প্রাইমারি কেয়ার ভিজিটস-এর ডাটা বিশ্লেষণ করে স্টাডির গবেষকেরা। যার স্যাম্পলে অন্তর্ভুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রাইমারি কেয়ারের শতকরা ৫ পারসেন্ট চিকিৎসক।
নেপ্রেশ এবং তার টিম 'টাইমস্ট্যাম্পস' ব্যবহার করে তথ্য বিশ্লেষণ করেন। রোগীদের ডাক্তারের কাছে যাওয়া এবং আসার সময় চেক করেন তারা। নারী এবং পুরুষ ডাক্তারদের মধ্যে রোগীদের পিছে ব্যয় করা সময়ও বিশ্লেষণ করেন।
তারা পর্যবেক্ষণ করেন, নারী প্রাইমারি কেয়ার চিকিৎসকেরা প্রতিটি ভিজিটে ১৫ পারসেন্ট বেশি সময় করে ব্যয় করছে পুরুষদের তুলনায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্যুরেন্স কোম্পানিগুলো ডাক্তারদের পারিশ্রমিক প্রদান করে তাদের রোগী দেখার সংখ্যার উপর ভিত্তি করে, রোগীর পিছে সময় ব্যয় করার উপর নয়। একারণে নারী ডাক্তাররা ১১ পারসেন্ট কম বার্ষিক আয় করে থাকে তাদের পুরুষ সহকর্মীদের তুলনায়।
এই গবেষণা একটি বড় জবাব হতে পারে যে জন্য নারী চিকিৎসকেরা কম পারিশ্রমিক পান। নেপ্রেশ যুক্তি দেখান, নারীরা তাদের রোগীদের পিছে বেশি সময় ব্যয় করেন।
তিনি বলেন, এই স্টাডি আমাকে বিস্মিত করে না। আমি একজন নারী প্রাইমারি কেয়ার চিকিৎসক এবং আমি রোগীদের ব্লাড প্রেশার এবং বার্থ কন্ট্রোল নিয়ে কথা বলার আগে তাদের পরিবার এবং কাজ নিয়ে কথা বলি। আমি এসব বিষয়ে কথা বলতে পছন্দ করি। আমি মনে করি এগুলো আমাকে ভাল ডাক্তার তৈরি করতে সহায়তা করবে। কিন্তু তাড়াতাড়ি কাজ করা ঠিক নয়, পুরুষ ডাক্তারদের চেয়ে কম সময়ে করতে পারি কি?
নেপ্রেশ বলছেন, চিকিৎসায় লিঙ্গ ভিত্তিতে পারিশ্রমিক বৈষম্যের বড় একটি ডকুমেন্ট হল এটি। এটি যুগ যুগ ধরে লেখা হবে, কিন্তু সঠিকভাবে উপলব্ধটা বিরল যেটি পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে পুরুষ ডাক্তারদের বেতন ছিল বছরে ৮৬ হাজার বেশি ডলার। যেখানে নারী ডাক্তাররা পেতেন এর মধ্যম আয়ের পারিশ্রমিক।