স্ট্রোক করার ঝুঁকিতে যারা আছেন
স্ট্রোক করার ঝুঁকিতে যারা আছেন (ইনসেটে ডা. মারুফ রায়হান খান)
স্ট্রোক- এই অসুখটির নাম শোনেনি এমন কেউই বোধহয় নেই। কেনইবা এই ভয়ঙ্কর অসুখটির নাম শুনবে না? বর্তমানে সারা বিশ্বজুড়েই মৃত্যু এবং শারীরিক অক্ষমতার প্রধানতম কারণ স্ট্রোক। যেকোনো ব্যক্তির জীবনে স্ট্রোক একটি দুঃস্বপ্নময় অন্ধকার অধ্যায় হয়েই থাকে। তার পরিবারও ভোগে নিদারুণভাবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, প্রতি বছর পৃথিবীতে ১.৫ কোটি মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। তার মধ্যে ৫০ লক্ষ মানুষ মারা যায় এবং আরও ৫০ লক্ষ মানুষ স্থায়ীভাবে শারীরিক অক্ষম হয়ে পড়ে।
তাই আমাদের প্রত্যেকেরই স্ট্রোক সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক ধারণা রাখা শ্রেয়। আজ আমরা জানব কারা স্ট্রোক করার ঝুঁকিতে থাকেন।
স্ট্রোকের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলোকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়।
ক. নন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টর্স; অর্থাৎ যে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো চাইলেও পরিবর্তন করা সম্ভব না।
খ. মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টর্স; অর্থাৎ যেগুলো চাইলেই পরিবর্তন করা যায়।
প্রথমেই আমরা দেখি নন-মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টর কী কী আছে:
১. বয়স : বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। ৫৫ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ১০ বছরে স্ট্রোকের ঝুঁকি ২ গুণ করে বাড়ে।
২. লিঙ্গ : কম বয়সে নারীদের স্ট্রোক হবার ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে বেশি৷ তবে বেশি বয়সে পুরুষদের স্ট্রোক হবার ঝুঁকি নারীদের চেয়ে কিছুটা বেশি।
৩. জাতি : কৃষাঙ্গ জনগোষ্ঠী শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর চেয়ে দ্বিগুণ ঝুঁকিতে থাকে স্ট্রোক হবার।
৪. জিনেটিক ফ্যাক্টর্স : কিছু কিছু জিনেটিক ভ্যারিয়েবিলিটি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। স্ট্রোক হবার পারিবারিক ইতিহাস থাকলে ঝুঁকি ৩০% বেড়ে যায়।
এবার তাহলে মডিফায়েবল রিস্ক ফ্যাক্টরগুলো আলোচনা করা যাক :
১. উচ্চ রক্তচাপ : যদি স্ট্রোকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর বলতে হয়, তবে সেটি উচ্চ রক্তচাপ। উচ্চ রক্তচাপ বলতে আমরা ১৪০/৯০ মিমি. মার্কারির অধিক রক্তচাপকে বুঝি। ৫০%-এরও বেশি স্ট্রোক হবার পেছনের কারণটি উচ্চ রক্তচাপ।
২. ডায়াবেটিস মেলাইটাস : ডায়াবেটিস স্ট্রোকের ঝুঁকি দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেয়।
৩. ধূমপান ও তামাক : এগুলো রক্তনালীতে রক্ত জমাট বাধার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়। মস্তিষ্কের রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেধে ঘটে যায় স্ট্রোক।
৪. অতিরিক্ত মদ্যপান : মদ্যপানের ফলে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, লিভার ড্যামেজসহ নানা অসুবিধা হয়। আর এগুলোর সবই স্ট্রোকের জন্য দায়ী।
৫. রক্তে উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা : রক্তে অধিক মাত্রায় কোলেস্টেরল থাকলে তা অন্যান্য রক্তনালীর মতো মস্তিষ্কের রক্তনালীতেও জমা হয়। ফলে রক্তনালী সরু হয়ে যায়। মস্তিষ্কের স্বাভাবিক রক্তপ্রবাহ ব্যাহত হয়। তাতে স্ট্রোক হতে পারে।
৬. অধিক লবণ খাওয়া : বেশি পরিমাণে লবণ খেলে তা উচ্চ রক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৭. খাবারে ফ্রেশ ফল ও শাকসবজি না থাকা।
৮. শারীরিক পরিশ্রম না করা ও মুটিয়ে যাওয়া : উভয়ই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
৯. হার্টের কিছু রোগ : অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশান, হার্টের ভালভের অসুখ ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
১০. পূর্বে যদি কারও স্ট্রোক হয়ে থাকে তাদের পুনরায় স্ট্রোক হবার উচ্চ ঝুঁকি থাকে।
১১. কিছু রক্তের রোগ : সিকেল সেল এনিমিয়া, পলিসাইথেমিয়া এবং হাইপার-ভিস্কোসিটি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
১২. ড্রাগস ও সাবসট্যান্স ইউজ (নেশাজাতীয় দ্রব্য সেবন) : কিছু কিছু ড্রাগস যেমন : কোকেইন, এক্সট্যাসি, এমফিটামিন (ইয়াবা) এবং হিরোইন স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুলাংশে বাড়িয়ে দেয়।
লেখকঃ
ডা. মারুফ রায়হান খান
পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেইনি চিকিৎসক, হৃদরোগ বিভাগ,
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।