দাঁতের রুট ক্যানেল চিকিৎসা
দাঁতের সমস্যা নিয়ে লিখেছেন ডেন্টাল সার্জন ডা. নিয়াজ রহমান
আচ্ছা...দাঁত ব্যথা হলেই কি দাঁত ফেলে দিতে হবে?? উত্তর হলো- না। দাঁত ব্যথা হলে আগে ব্যথার কারণ জানতে হবে, দেখতে হবে সমস্যা কতদূর। দাঁতের অবস্থা খুব বাজে হলে হয়তো আমরা দাঁত ফেলে দেওয়ার চিন্তা করি তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দাঁত রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে রেখে দেওয়া সম্ভব। একটা সাকসেসফুলি রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্টের পর ঐ দাঁতে আর কোন ব্যথা থাকবে না। স্বাভাবিক সবকিছু খাওয়া যাবে অর্থাৎ ন্যাচারাল দাঁতের মতোই সার্ভিস দিবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে.......
রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট কি?
দাঁতের মাড়ির উপরের যতটুকু অংশ আমরা দেখি সেটাকে বলা হয় ক্রাউন আর মাড়ির নিচে চোয়ালের হাড়ের ভেতর থাকে দাঁতের রুট বা শেকড়। দাঁতের রুটে ক্যানেল থাকে এবং তাতে দাঁতের প্রয়োজনীয় নার্ভ (পাল্প) ও ব্লাড সাপ্লাই থাকে। এখন ক্যানেল ভেতরে এগুলো সংক্রমিত বা প্রদাহ হলে যে চিকিৎসা দেওয়া হয় তা-ই রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট।
রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট কখন প্রয়োজন হয়?
দাঁতে ক্যারিজ বা গর্ত হয়ে যদি দাঁতের এনামেল, ডেন্টিন ক্ষয় করে পাল্প পর্যন্ত চলে যায় এবং এক্সরে করে যদি পাল্প ইনভলভমেন্ট বুঝা যায় তাহলে ঐ দাঁতকে রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করতে হবে। এছাড়াও দাঁত এক্সিডেন্টাল আঘাত পেয়ে ভেঙে গেলে, কালার চেঞ্জ হয়ে গেলে, দাঁতের গোড়ায় পুজ জমলে (পেরিএপিক্যাল লেশন), দাঁত ফেটে গেলে(ক্রাক টুথ) বা দাঁত হাইপার-সেনসেটিভ হলে আমরা রুট ক্যানেল এর পরামর্শ দিয়ে থাকি।
রোগী কি কি সিম্পটম নিয়ে আসে:
অধিকাংশ রোগীই দাঁতে ব্যথা নিয়ে আমাদের কাছে আসে। এছাড়াও দাঁতে প্রচুর শিরশির ভাব হয়, দাঁতের কালার চেঞ্জ হয়ে যায়, মাড়ি ফুলে যায়, পুজ বের হয়, দাঁত ভেঙে যায় বা দাঁতে ক্যারিজ (গর্ত) নিয়ে আসে।
রুট ক্যানেলে কি দাঁতে অনেক ব্যথা হয়?
না। প্রথম দিন অবশ করে কাজ করা হয়, পরের ভিজিটগুলোতে আর কোন ব্যথা অনুভব হয় না। অনেক রোগীই প্রচুর আতংকে থাকেন এই চিকিৎসা নিয়ে- কিনা কি করে ফেলে তার দাঁতে! আতংক বা ভয়ের কিছুই নেই। সংক্রমিত দাঁতকে সুস্থ করতে হলে রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট করতেই হবে।
রুট ক্যানেল প্রসিডিওরটা কি?
খুবই সহজ প্রসিডিওর। সমস্যা হলে রোগী ডাক্তারের কাছে আসবেন, ডাক্তার ক্লিনিক্যালি ও এক্সরে দেখে ট্রিটমেন্ট প্লান দিবেন। রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট প্রয়োজন হলে প্রথম সেটিংয়ে লোকালি অবশ (এনেস্থিসিয়া) করে নিবেন। তারপর দাঁতের ক্যানেলে থাকা সংক্রমিত পাল্প (মজ্জা) বের করে ফেলবেন। ক্যানেলকে ইন্টাক্যানেল মেডিকামেন্টস দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে জীবাণুমুক্ত করবেন। এভাবে কয়েক ভিজিটে দাঁতের রুট ক্যানেল শেষ হয়। এছাড়াও এক ভিজিটেও রুট ক্যানেল ট্রিটমেন্ট শেষ করা সম্ভব সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় মেশিনারি ও স্কিল থাকা প্রয়োজন।
রুট ক্যানেল করা না হলে কী ধরনের জটিলতা হতে পারে?
রুট ক্যানেল করা না হলে দাঁতটি অবশ্যই ফেলে দিতে হবে। কারণ, ক্ষতিগ্রস্ত দাঁতটি পাশের দাঁতটিরও ক্ষতি করতে পারে। পাশাপাশি যখন রোগী আসে তখন দেখা যায়, গর্ত হতে হতে গোড়ার দিকে চলে গেছে। তখন আমরা একে আর রাখতে পারি না। তখন দাঁত ফেলে দিতে হবে। এর অনেক ঝামেলা রয়েছে। এতে সমস্যা বাড়তেই থাকবে।
যে কারণে রুট ক্যানেল চিকিৎসাটি করার প্রয়োজন হয়, সেটি থেকে মুক্ত থাকার কি উপায় রয়েছে?
আসলে সবকিছুরই তো প্রতিরোধ দরকার। প্রথমে আমরা ওরাল হাইজিন (মুখের পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা) যদি মেনে চলি, নিয়মিত দুবার দাঁত ব্রাশ করি, দিনে একবার অবশ্যই ফ্লসিং করি, তাহলে দাঁত ভালো থাকবে। আমরা কিন্তু ফ্লসিং সাধারণত করি না এবং ব্রাশও করি খুবই আলসেমি করে। আমাদের দেশে যেটি প্রচলিত, সকালবেলা উঠে দাঁত ব্রাশ করা, সেটি ঠিক নয়। আসলে রাতে খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করতে হয় এবং সকালবেলা নাশতার পর দাঁত ব্রাশ করতে হয়।
এ ছাড়া নিয়মিত যদি চেকআপে যাওয়া হয় তখন দেখা যায়, সমস্যা শুরু হওয়ার আগেই চিকিৎসা করতে পারব। তখন আর সমস্যা হবে না। আমরা অনেক ভালো থাকতে পারব।
ভালো থাকুক আপনার দাঁত ও মুখ, ভালো থাকুক আপনার স্বাস্থ্য। নিজে সচেতন হোন অপরকেও সচেতন করুন।
লেখকঃ
ডা. নিয়াজ রহমান
কনসালটেন্ট এন্ড চিফ
এডভান্সড ডেন্টাল সল্যুশন।