মানসিক রোগ: বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার ও প্রচলিত কুসংস্কার
মানসিক রোগ: বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার ও প্রচলিত কুসংস্কার (ইনসেটে ডা. সাঈদ এনাম)
বাইপোলার মুড ডিসওর্ডার, কারেন্টলি ম্যানিক (Bipolar Mood Disorder Currently Manic) একটি অদ্ভুত মানসিক রোগ।
এ রোগে আক্রান্ত রোগী মনে করেন, তার গায়ে হঠাৎ হঠাৎ অশরীরী আত্মা ভর করে, তার কি যেনো হয়ে যায় তার, সে অদ্ভুত গায়েবী, আধ্যাত্মিক শক্তি পায় এবং সেই গায়েবী শক্তি দিয়ে সে অকল্পনীয় সব কাজ করতে পারেন, সে মানুষের ভবিষ্যত বলে দিতে পারে ইত্যাদি ইত্যাদি।
অনেক সময় রোগী ভয়ংকর ভায়োলেন্ট হয়ে নিজের বা অন্যের ক্ষতি করতে পারে। রোগী অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলতে পারে, গায়েবী আওয়াজ ও শুনতে পারে যাকে অনেক সময় বলা হয় জ্বীনের বাদশাহর আওয়াজ।
ক্ষেত্র বিশেষে রোগী মারাত্মক অবুঝ আর ভায়োলেন্ট থাকেন যে গত সপ্তাহে এ রোগে আক্রান্ত এক তরুন মিস ম্যানেজমেন্ট এর শিকার হয়ে হয়ে তার মা'কে দা দিয়ে নাকে মুখে এমন ভাবে আঘাত করে ফলে মায়ের নাক ও এক চোখ নস্ট হয়ে যায়। অবশেষে তার মা'কে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হয়। সেই তরুন মানসিক রোগের চিকিৎসায় এখন সম্পূর্ন সুস্থ।
বাইপোলার রোগটি এপিসোডিক আকারে হয়ে থাকে অর্থাৎ কিছু দিন বা মাস পর পর হয়ে থাকে। অনেক সময় রোগীই বলতে পারে যে, মাঝেমধ্যে আমার কাছে ভুত,পেত্নী, বাতাস আসে বা জ্বীন আসে।
কেন রোগের নাম 'বাইপোলার'?
'বাইপোলার' এর অর্থ দুইটা প্রান্ত। অর্থাৎ রোগী এক সময় তীব্র মেজাজী বা ভায়োলেন্ট থাকতে পারেন আবার হয়তো রোগী থাকতে পারেন মারাত্মক ডিপ্রেসড বা বিষন্ন।
আমাদের চলমান কুসংস্কারঃ
ভন্ড মোল্লা, তান্ত্রিক ও কবিরাজদের মতে ক'দিন পর পর রোগীর গায়ে ভুতের আছর হয় এবং ভন্ডরা ভুত ছাড়ার নাম করে লাখ লাখ টাকার হাদিয়া বা উপঢৌকন নেয়।
তারা ভুত বা বাতাস তাড়ানোর সময় অনেক সময় ভুত বা জ্বীন হাজির হয়ে গেছে বলে' ঘরে উপস্থিত আত্মীয় স্বজন সবাইকে বের করে দেয়। অতঃপর তারা মহিলা রোগীদের সাথে কুস্তি বা কাবাডি খেলা শুরু করে দেয় অর্থাৎ 'শ্লীলতাহানিতে' লিপ্ত হয়।
এ সময় বাহিরে অপেক্ষা রত রোগীর লোকেরা মনে করেন মোল্লা বা তান্ত্রিক সাহেব ভুত কুস্তি করে ছাড়াচ্ছেন। যারপর নাই কস্ট করছেন কুস্তি বাবা। আসলে 'বাবা' করছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখেনা।
শ্লীলতাহানি, নির্যাতন, কুস্তি ও কাবাডি শেষে রোগী হয়তো ক্লান্ত হয়ে শান্ত আর নিস্তেজ হয়ে আর ঘর্মাক্ত ভন্ড কামেল 'কুস্তিবাবা' বা 'কাবাডিবাবা' ভুত বা জ্বীন তাড়িয়ে দিয়েছেন বলে 'বাহবা' ও 'হাদিয়া' নেয়।
বাইপোলার মোড ডিসওর্ডার রোগের চিকিৎসাঃ
বাইপোলার মোড ডিসওর্ডার এর আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ভালো হচ্ছে মানসিক হাসপাতালে। মুড স্টাবিলাইজার এক মাত্র ঔষধ। রোগী বেশী ভায়োলেন্ট হলে এন্টিসাইকোটিক শর্ট কোর্স দিতে হয়।
ভুলবশত: অনেক সময় পল্লিচিকিৎসক বা ফার্মেসীতে থাকা আন্ডারমেট্রিক পাশ করা ফার্মাসিস্ট এসব রোগীকে ফ্লিপেটিক্সল মেলিট্রাসিন কম্বিনেশন একটি ড্রাগ দেয়। এর ফলে রোগী ধীরে ধীরে আরো ভায়োলেন্ট হয়। অর্থাৎ বিষয়টি আগুনে পানি ঢালার পরিবর্তে পেট্রোল ঢালার মতো অবস্থা। অস্থির ব্যাপার স্যাপার।
লেখকঃ
ডা. সাঈদ এনাম
এম বি বি এস (ডিএমসি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি)
বিসিএস -২৪
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি
সিলেট মেডিকেল কলেজ।